সকল মেনু

শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী চলে গেলেন

  নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। আকস্মিক অসুস্থতার পর বুধবার প্রথম প্রহরে হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়।

জানা যায়, অসুস্থ হওয়ার পর তাকে রাত ১টার দিকে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা দেখেই তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, ‘উনাকে অ্যাম্বুলেন্সেই আমরা দেখেছিলাম, আনার আগেই মারা গিয়েছিলেন উনি।’ মৃত্যুর কারণ কী- জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বার্ধক্যজনিতসহ বিভিন্ন রোগের কথা বলেন। তবে যেহেতু কোনো পরীক্ষা হয়নি, তাই নিদিষ্ট রোগের নাম নিশ্চিত করে বলেননি তিনি।

স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্যক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।

মিয়ানমারের সঙ্গে ‘সমুদ্রজয়ের’ পর ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এ দেশ বরেণ্য অধ্যাপক।

নন্দিত শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ১৯৯০-৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর জন্ম ১৯২৮ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে। তার বাবা ফজলুর রহমান সিদ্দিকী এবং মা হালিমা খাতুন। ফজলুর রহমান সিদ্দিকী ও হালিমা খাতুনের এই সন্তানের পড়াশোনার হাতেখড়ি কলকাতায়, নর্মাল স্কুলে। তার বাবা ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।

১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় স্টার মার্কসসহ উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন তিনি। ১৯৪৭ সালে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ভারত ভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হন তিনি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫২ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ডে ভর্তি হন তিনি।

দেশে ফেরার প্রথমে ঢাকা কলেজে যোগ দেন। এরপর ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন জিল্লুর রহমান। ১৯৮৪ সালে উপাচার্য পদ থেকে বিদায় নিলেও অধ্যাপনা চালিয়ে যান।

বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটিতে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি; নাগরিক নাট্য চক্রের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত ‘শব্দের সীমানা’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। তার কবিতা গ্রন্থ ‘হৃদয়ে জনপদে’-এর জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

মুক্ত চিন্তার বিকাশে অধ্যাপনা, গবেষণা ও সৃজনশীল লেখনীর মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top