সকল মেনু

চাঁদপুরের কেন্দ্রগুলোতে নকলের ছড়াছড়ি;জেলা প্রশাসকের অসোন্তোষ প্রকাশ

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে নকলের ছড়াছড়ি চলছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছু শিক্ষক কোমলমতি শিশুদের নকলে প্রলুদ্ধ করছে এবং পরীক্ষা হলে প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছে। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে তার এই অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিগত সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্তসমূহ পড়ে শোনান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুলাøহ নূরী। সভায় জেলায় অবস্থিত সরকারি প্রায় অর্ধশত বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। বিভাগগুলোর কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা এবং সমস্যা সভায় তুলে ধরা হয়। উন্নয়ন সমন্বয় সভায় চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলের চিত্র। সভায় বলা হয়, পুরো জেলায় এবার প্রায় ৪৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জেলায় কেন্দ্র সংখ্যা হচ্ছে ৭০টি। এর মধ্যে ৪/৫টি কেন্দ্রের চিত্র একেবারেই ভালো নয়। সেগুলোতে চলছে নকলের ছাড়ছড়ি। আর এসব নকলে শিক্ষকদের সরাসরি সহযোগিতা রয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, পরীক্ষার প্রথম দিন মোটামুটি ভালোই ছিলো। কিন্তু দ্বিতীয় দিন গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়ার কয়েকটি কেন্দ্রে নকলের ছড়াছড়ি ছিলো। এদিন মোট ১৪ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ইচ্ছা করলে আরো বহিষ্কার করতে পারতেন। জেলা প্রশাসক উল্লেখিত চার উপজেলার চারটি স্কুলের কথা সুনির্দিষ্টভাবেই উল্লেখ করেন। যেগুলোতে কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদেরকে সরাসরি নকল দিয়েছে, উত্তর বলে দিয়েছে এবং নকলে সহযোগিতা করেছে। আর এসব কাজে সহযোগিতা করেছেন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকরা। এমনকি কক্ষ পরিদর্শক নয়, এমন ব্যক্তিও পরীক্ষার কক্ষে অবস্থান করে নকলে সহযোগিতা করেছে। এমন অভিযুক্ত কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে, তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি করা হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, অনেক প্রচেষ্টার পরও কিছু সংখ্যক শিক্ষকের অসহযোগিতার কারণে ভালো পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এটা খুবই কষ্টদায়ক যে, ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে কিছু শিক্ষক নকল তুলে দিচ্ছে। শিক্ষক ছাত্রকে নকলে সহযোগিতার ফলে ভবিষ্যতে সেই শিক্ষককেই তার ওই ছাত্রের কাছেই নাজেহাল হতে হয় এমন কিছু বাস্তব উদাহরণ জেলা প্রশাসক সভায় উল্লেখ করেন। সামনে ইংরেজি পরীক্ষাসহ অন্য পরীক্ষাগুলো নকলমুক্ত পরিবেশে ভালো নিতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা জেলা প্রশাসক জানান। এর মধ্যে রয়েছে নকলপ্রবণ কেন্দ্রগুলোতে কলেজ শিক্ষক দিয়ে পরীক্ষা নেয়া। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা শেষে উঠে আসে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার বিষয়। যা আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন জানান, এ জেলায় ১ হাজার ৭শ’ ২টি প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে প্রায় ৬২ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা চান। এদিকে খোদ চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন জেডিসি ও জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রেও শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রছাত্রীদের উত্তর বলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সন্তান বা ভাই-বোনসহ আত্নীয় এমন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিশেষ পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। চাঁদপুর শহরের গণি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের তীর তুলনামূলক বেশি বলে জানা যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top