সকল মেনু

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ ধোঁয়াশায় !

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : গত শনিবার কী কারণে বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কবলে পড়ে- তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে কারিগরি ত্রুটি হিসেবে প্রাথমিকভাবে বলা হলেও এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্নকথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কারিগরি ত্রুটির কারণে ঘটলে তা অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে সহজেই ধরা যেত। আর ভেড়ামারা সাবস্টেশনের ত্রুটির কারণে যদি গ্রিড বিপর্যয় হয়, তাহলেও তা বলা যেত। কারণ সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ।

তাদের মতে, আমাদের জাতীয় গ্রিড তেমন শক্তিশালী নয়। দেশে যে হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন, লোড ও সংযোগ বেড়েছে, সেই অনুযায়ী শক্তিশালী হয়নি জাতীয় গ্রিড। উৎপাদনকেন্দ্র থেকে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজটি করা হয় চাহিদার লোড নির্ধারণের মাধ্যমে। লোডের চেয়ে  কম বা বেশি বিদ্যুৎ গ্রিডে দেওয়া হলে বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে ১০০ মেগাওয়াট তারতম্য হলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে বেশি তারতম্য হলেই আশঙ্কা থাকে বিপর্যয়ের। এ ছাড়া ভারত থেকে আনা বিদ্যুৎ আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের সব সাবস্টেশন থেকে চাহিদার লোড পরিমাপের পর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টার (এনএলডিসি)। আর এ লোড পরিমাপ করতে এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল হয়নি এনএলডিসি। এদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনএলডিসির সঙ্গে  যুক্ত না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সাবস্টেশন ও উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে টেলিফোন করে লোড ও উৎপাদনের হিসাব নিতে হয়। যা ডিজিটাল রিলে সিস্টেম যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। এ ছাড়া লোড নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক সব সাবস্টেশন থেকেই প্রকৃত চাহিদাও পাওয়া যায় না।

এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল-বিরুনী বলেন, নিয়মিত জাতীয় গ্রিডের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। সে দিনের ঘটনাটি স্রেফ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে।

এদিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত আন্তদেশীয় সঞ্চালন লাইনের আন্তসংযোগ কেন্দ্রকে ওই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু বলে ধারণা করা হলেও সেখানকার স্বয়ংক্রিয় ‘ফল্ট রেকর্ডার’-এ এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। তাই দুই দেশের সঞ্চালন লাইনেই এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ যদি ভেড়ামারা সাবস্টেশনের ত্রুটি হয়, তাহলে তা তাৎক্ষণিকভাবেই বলা সম্ভব হতো। কারণ সেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৩১ মেগাওয়াট। যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াটে। এর মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে ভারত থেকে। কিন্তু দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লেও সঞ্চালনের ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে খুবই সামান্য।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিড ছিল ৮ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার। গত পাঁচ বছরে এতে নতুন করে যোগ হয়েছে ১ হাজার ১৭ কিলোমিটার। এখন চাহিদা বাড়ার কারণে সঞ্চালন ও বিতরণের লাইনসহ গোটা বিষয়কে ঢেলে সাজাতে হবে। একই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।

জাতীয় গ্রিড প্রসঙ্গে সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয় রোধে জাতীয় গ্রিড সংস্কারের জন্য এক মাসের মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে মন্ত্রণালয় গঠিত ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডও (পিজিসিবি) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেছেন, ‘কারণ অনুসন্ধানে আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর সব বোঝা যাবে।’

তদন্ত কমিটির এক সদস্য হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আমরা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত আন্তদেশীয় সঞ্চালন লাইনের আন্তসংযোগ কেন্দ্র পরিদর্শনে আছি। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে এখানে পৌঁছেছি। বুধবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তাতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ধোঁয়াশা কেটে যাবে। এ ছাড়া শিগগিরই জাতীয় গ্রিড সার্ভে করা হবে। যেখানে যা সংস্কার করা প্রয়োজন তাও করা হবে।’

এদিকে ভারতের ইকোনমিক টাইমস  জানায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (পিজিসিআইএল) বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে। তাদের সাবস্টেশন পরীক্ষা করে দেখেছি। সেখানে কোনো সমস্যা নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top