সকল মেনু

বুদ্ধিদ্বীপ্ত ও সৃজনশীল নির্মাণে অপ্রতুলতা

 বিনোদন ডেস্ক: এবারের ঈদুল আজহায় প্রচারিত টিভি নাটক এবং টেলিফিল্ম নিয়ে কোনো কিছু লেখার আগ্রহটাই তৈরী হচ্ছিল না। কারণটা খুবই স্বাভাবিক। আলোচনা সমালোচনা করার আগ্রহবোধ করতেও কিছুটা মানের প্রয়োজন হয়। সেই মান খোঁজাটা এবার অনেকটা ছিল খড়ের গাঁদায় সুঁচ খোজার মতো। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, মান সম্পন্ন টিভি ফিকশনের বৈশিষ্ট্য বা সংজ্ঞা কী। এই বৈশিষ্ট্য বা সংজ্ঞা আসলে পুরোটাই আপেক্ষিক। তা নির্ভর করে যিনি আলোচনাটি করছেন তার দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞান ও চর্চার উপর। সেক্ষেত্রে লেখক সর্বদাই তার ব্যক্তিগত অভিমতটাই ব্যক্ত করেন। এর বাইরেও এক ধরনের মান যাচাই একক ব্যবহার করা হয়, যা কিনা দর্শক গ্রহনযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়। তাই প্রথমেই এবারের ঈদের দর্শকপ্রিয় কাজগুলো উল্লেখ করতে চাই। বরাবরের মতো এবারও ‘সিকান্দার বক্স’ পেয়েছে প্রচন্ড দর্শকপ্রিয়তা, সেই সঙ্গে কমেডি ও অন্যান্য নাটকগুলোও এক শ্রেণীর বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে। এছাড়াও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট, দুই গল্পের শেষ একটাই, এডিকশন সহ কয়েকটি টিভি নাটক ও টেলিফিল্ম। অভিনেতা মোশারফ করিম উপহার দিয়েছেন অনবদ্য অভিনয় সমৃদ্ধ বেশ কয়েটি নাটক। অপরদিকে হালের ক্রেজ তাহসান এর অভিনয়ও বেশ ভালো লেগেছে দর্শকদের। অপি করিম, তিশা- তারা বজায় রেখেছেন ভালো অভিনয়ের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা। দু:খজনক হলেও সত্যি এবারের ঈদে একেবারে অন্যরকম বা বুদ্ধিদ্বীপ্ত প্রোডাকশন প্রায় ছিল না বললেই চলে। এবং যতদিন যাচ্ছে খুব ভালো মানের প্রোডাকশন বিরল হচ্ছে যা কিনা দু:শ্চিন্তার বিষয়। আলোচনার এ পর্যায়ে কিছুটা পিছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করছি। প্রায় ২০০০ সাল অবধি একেবারে মঞ্চ সংশ্লিষ্ট নির্মাতাদের হাতেই বাংলা টিভি নাটকের বিকাশ ঘটেছে। সেটার এক ধরনের বৈশিষ্ট ছিল। এর পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক তরুণ নির্মাতা টিভি নাটকে যুক্ত হতে থাকেন। যাদের বেশিরভাগ-এর চর্চাটাই ছিল ফিল্ম নিয়ে এবং বড় পর্দায় ছবি বানানোর ওয়ার্মআপ সেশন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন টিভি মিডিয়া। ফলশ্রুতিতে আমরা একেবারে আলাদা ধরনের টিভি নাটকের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকি। নতুন গল্প, নতুন ধরনের নির্মাণ দিয়ে টিভি সমৃদ্ধ হতে থাকে। আমরা নুরুল আলম আতিক, অনিমেষ আইচ, মেজবাউর রহমান সুমনসহ প্রমুখ পরিচালকের নতুন দিনের গল্প, গল্প বলার ধরন ও টেকনিক দেখে বিমুগ্ধ হতে থাকি যেটা অব্যাহত থাকে প্রায় ২০১২ পর্যন্ত। এরপরই টিভি নাটকগুলোর ধরনটা যেন আবার পেছনে ফিরে যায়, গল্পগুলো দেখে মনে হতে থাকে কোথায় যেন দেখেছি, নির্মাণ ধরনে চোখে পড়ে অযত্নের ছাপ। সর্বোপরি কেমন যেন একটা প্রতিযোগিতাহীন আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়, যা দেখে মনে হয় অন্যরকম একটি গল্প বলার আগ্রহ নতুন পরিচালকদের মাঝে নেই। আর ইদানিং শুরু হওয়া এজেন্সি অভিভাবকত্বে শুটিংয়ের আগেই অন এয়ার ডেট কনফার্ম হওয়া প্রোডাকশনগুলো দেখে মনে হয় নতুন গল্প বা নির্মাণ প্রক্রিয়ায় মেধা খাটানোর চাইতে পরিচালকেরা ব্যস্ত ছিলেন সংখ্যা নিয়ে। মান নয় প্রচার সংখ্যাই যেন মুখ্য।

এই ঈদের আলোচিত ৩০/৪০ টি টিভি নাটক/টেলিফিল্ম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আশাহত হতে হয়। কোনটার হয়তো গল্পটা বেশ ছিল দু-তিন জনের কাঁচা অভিনয় মান কমিয়ে দিয়েছে পুরো প্রোডাকশনের। কোথাও অভিনয়টা ভালো হলেও নির্মাণটা ভালো নয়। সবচেয়ে বেশি অভাবটা লেগেছে ভালো গল্পের, নতুন গল্পের। দেখে মনে হবে ‘বাহ নতুন কিছু দেখলাম!’- এরকম নির্মাণের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। কিছু ভালো প্রোডাকশন হয়তো প্রচারের অভাবে বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি, থেকে গেছে আড়ালে। এত কিছুর মধ্যেও হরতাল, আমার একটি কুকুর আছে, সাধারন জ্ঞান সহ ইত্যাদি টিভি নাটক নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছে ভিন্নতার কারণে।

লেখক :  নাট্য নির্মাতা ও চলচ্চিত্র কর্মী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top