সকল মেনু

একনেকে সাত প্রকল্প অনুমোদন

 নিজস্ব প্রতিবেদক :  জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দুই হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মোট সাতটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এই সাত প্রকল্পের চারটি নতুন এবং বাকি তিনটি সংশোধিত। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এই সাত প্রকল্পে প্রক্কলিত মোট অর্থের মধ্যে সরকারি খাত থেকে ৬৬৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য থেকে ১৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে ৩১৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ১৩২০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্যে এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নে ‘ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন ফর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ শীর্ষক ৭৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প আজকের একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭৭২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা জিওবি এবং বাকি ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিমিটেড (নওপাজকো) এর সহযোগিতায় মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৪ হতে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমদানিযোগ্য কয়লা পরিবহণ, পানির প্রাপ্যতা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি বৈশিষ্ট্য, কুলিং সিস্টেম ও পাওয়ার ইভাক্যুয়েশন, পরিবেশগত কারণ ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০ অনুযায়ী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে উৎপাদন করা হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো কম খরচের এবং সে সঙ্গে টেকসই হতে হবে। রাজধানীর উত্তরা এলাকার যানজট হ্রাস, পথচারী চলাচলের সুবিধা এবং জলাবদ্ধতা দূর করতে একনেক সভায় ‘উত্তরা মডেল টাউনের ১ এবং ৩-১৪ নম্বর সেক্টরের রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাতের উন্নয়ন ও নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্প ১১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৭ মেয়াদে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন করবে। মোট ব্যয়ের ৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা জিওবি এবং অবশিষ্ট ৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। সভায় জানানো হয়, উত্তরা এলাকার আব্দুল্লাপুর ইন্টার সেকশন ঢাকার প্রবেশ মুখ। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল থেকে এ প্রবেশমুখ দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন উত্তরায় প্রবেশ করছে। ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি এবং দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সোনারগাঁও জনপথ ক্রসিং উত্তরার বর্ধিত এলাকার এবং জসীম উদ্দিন ক্রসিং উত্তরার পূর্ব-পশ্চিম এলাকার প্রবেশ পথ। যানজট ও দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে এখানকার রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাতের উন্নয়ন জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, ৪৭ কিলোমিটার  ড্রেন নির্মাণ এবং ২১ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। মন্ত্রী আরো জানান, উত্তরার ২ নম্বর সেক্টরের রাস্তার অবস্থা ভালো থাকায় এ প্রকল্পে এ সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দেশব্যাপী উন্নত জাতের বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্যে ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক একটি সংশোধিত প্রকল্পও অনুমোদিত হয় একনেক সভায়।

প্রথম সংশোধিত প্রকল্প হিসেবে এর মোট ব্যয় ছিল ৪২১ কোটি টাকা। এর পর ১৭২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে এর প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়ায় ৫৯৪ কোটি টাকায়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে জুন, ২০১৬ এর মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

‘পদ্মা নদীর ভাঙন হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আলাতুলি এলাকা রক্ষা (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক অপর একটি সংশোধিত প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২৭৪ কোটি টাকার সংশোধিত এ প্রকল্প বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জুন, ২০১৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।

সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top