সকল মেনু

নয়াপল্টনে ছাত্রদলের সংঘর্ষ; ককটেল বিস্ফোরণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অসন্তোষ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। রোববার দুপুরে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার পর অবশেষে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে কমিটির পক্ষে-বিপক্ষের নেতাকর্মীরা। এ সময় দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে দলের ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০জন। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছে নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে শনিবার দিনভর বিক্ষোভ শেষে নয়াপল্টনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় পদবঞ্চিতরা। এ সময় তারা ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর কুশপুত্তালিকা দাহ করেন। একইসঙ্গে রোববারও নয়াপল্টনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

এর ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল থেকেই নতুন কমিটিতে পদ প্রাপ্ত নেতা ও তাদের কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে আসতে শুরু করেন। এ সময় আগের দিন কার্যালয়ে পদবঞ্চিতদের দেওয়া তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এতে দুটি পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চলে পাল্টাপাল্টি স্লোগান, আর কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন। প্রায় ঘণ্টা খানেক এ পরিস্থিতি চলে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে নিয়ে বৈঠকে বসেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বেলা ২টার দিকে রিজভী ও সোহেল নিচে নেমে এসে পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয় পক্ষকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তুমুল হট্টগোলের মধ্যে দুটি পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ধাওয়া দেয়। এ সময় দুটি ককটেলর বিস্ফোরণ ঘটে। শুরু হয় সংঘর্ষ।

ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতাকর্মীরা এসময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করে গেট বন্ধ করে দেয়। আর বিক্ষুদ্ধ পদবঞ্চিত বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে বাইরে থেকে ভাঙচুর চালায়। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা দিয়ে হামলা করে। এতে কার্যালয়টি বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একপর্যায়ে কার্যালয়ের নিচে থাকা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরালেও হামলা চালায় তারা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ অবস্থা।

ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের হামলার সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী ও হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কার্যালয় ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ হলেও দায়িত্বরত পুলিশ নাইটেঙ্গল মোড় এবং ফকিরাপুল মোড়ে নীরব অবস্থান করে।

ককটেল বিস্ফোরণ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মোট ১০ জন ছাত্রদল কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নতুন কমিটির রাজ, ইফতেখারুজ্জামান, বাবু, শফিক, মাসুম সবুজ। এদের মধ্যে ককটেলের আঘাতে ছাত্রদল কর্মী মাসুম সবুজ গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে ভাঙচুর-তাণ্ডব মোটামুটি শান্ত হলেও পদবঞ্চিত বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে কমিটির বিরোধী বক্তব্য ও স্লোগান দেয়।

রোববারের ভাঙচুরের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন একজন পদবঞ্চিত নেতা আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তারিকুল ইসলাম টিটু। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আঁতাত করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের নেতৃত্বে  এনেছেন। এতে দলের ভবিষ্যত সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। তাই দল ও ছাত্রদল বাঁচাতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা আন্দোলনে নেমেছে। আঁতাতের কারণে যোগ্যরা সদ্য ঘোষিত কমিটিতে স্থান পায়নি।’

টিটু দাবি করেন, ছাত্রদলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী হওয়ার কারণে অনেকেই  অসংখ্যবার জেল খেটেছেন। তাদের নামে একাধিকবার মামলা হয়েছে। অথচ এই কমিটিতে তাদের স্থান হয়নি। যাদের সভাপতি-সেক্রেটারী করা হয়েছে, তারা কখনো জেল খাটেনি বলে জানান ছাত্রদলের বিদ্রোহী এ নেতা।

এদিকে, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দায়ী করেছে ছাত্রদল। দলটির সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেছেন, ‘ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রদলের কিছু কর্মী থাকলেও এতে বেশিরভাগ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী ছিল। আর তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছে।’

সংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে জড়িত ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে গত মঙ্গলবার রাতে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পদবঞ্চিতরা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top