সকল মেনু

ঈদ আসে যায় আন্দোলন আসে না

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুর নরম করেছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে আসছেন। তিনি বলেছিলেন ঈদের পর এমন আন্দোলন গড়ে তুলবেন, জনগণ সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।  সম্প্রতি বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যে আগের সেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার চিত্র ফুটে উঠেছে। ঈদের আগে তিনি বলেছেন, আন্দোলনের সময় আসছে। তবে দিনক্ষণ ঠিক করে আন্দোলন হয় না। সময় এলেই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তখন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাতে সাড়া দেবে। বিএনপির ঈদ পরবর্তী আন্দোলন সম্পর্কে যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন,আমরা আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন,আমাদের এ আন্দোলন অগণতান্ত্রিক বিরুদ্ধে।  গত পাঁচ বছর ধরেই খালেদা জিয়া এবং বিএনপির শীর্ষ নেতারা কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু, আন্দোলনকে বেগবান করতে পারেননি। আগেও তারা বলেছেন, ঈদের পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এভাবে ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু বিএনপির কঠোর আন্দোলন আর আসে না। গত ১৭ জুন রাতে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, সময় আসবে, তৈরি হোন। ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ঈদুল ফিতরের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঈদের পর সরকার পতনে তীব্র আন্দোলন শুরু করবেন। তখন সরকার পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।

২৪ জুলাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগর নতুন কমিটির নেতাদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের পর আন্দোলন হবে উত্তাল।  তাতে ক্ষমতাসীন সরকার ভেসে যাবে।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কঠোর আন্দোলনের হুমকিকে রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছেন ফাঁকা বুলি। কারণ, তারা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কোনো আন্দোলনই জমাতে পারেনি। গত ৫ বছরে তারা অনেক বড় ইস্যু পেয়েছেন, কিন্তু কোনোটিতেই তারা সফল হয়নি।

আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, আগামীতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তিনি আরো জানান, এ ছাড়া আমরা আর কোনো আলোচনার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই না। আলোচনার সময় পার হয়ে গেছে। এখন আমরা এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আন্দোলন সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। এটা দলের সুপ্রিম পাওয়ারে যারা আছেন তারা বলতে পারবেন।’

ঈদুল আজহার আগে বিচারকদের অভিশংসন বিলের বিরোধিতা করে বিএনপি যে হরতাল ডেকেছিল, তা সফল হয়নি। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতারা চিন্তিত। তাই এখন আন্দোলন দিলে তা কতটুকু সফল হবে, এ নিয়ে তারা দ্বিধায় রয়েছেন। অন্যদিকে নানা ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই জামায়াত মাঠে নাও থাকতে পারে। জামায়াত মাঠে না থাকলে, বিএনপি কোনো আন্দোলনই জমাতে পারে না। তাই নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন করার সেই সামর্থ্য আর নেই। আন্দোলন করে সরকার পতনের দিবাস্বপ্ন দেখছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন চালানোর মতো শক্তি নেই। শুধু ফাঁকা হুংকার দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরো স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বিএনপির আর কিছু করার ক্ষমতা নেই।’

বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, দল গঠনের অবস্থানেও নেই বিএনপি। মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন-নবী সোহেলকে নিয়ে গঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটিই তার বড় উদাহরণ। এই কমিটির পুরোটাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ডুবে আছে। মূলত দলের ওপর বিশ্বাস আর আস্থা রাখতে পারছেন না তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও।

সরকার পতনের মতো বড় কোনো ইস্যুও নেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হাতে। একই সঙ্গে ২০ দল থেকে ১০টি দলের শীর্ষ নেতারা বেরিয়ে গিয়ে নতুন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) গঠন করায় জোটের কাঠামোও দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপি।

অন্যদিকে যে কূটনৈতিক ভরসার ওপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও জামায়াত- সেই পরিস্থিতি তৈরি করার কোনো সুযোগও আর পাচ্ছে না তারা। কূটনৈতিক কোরের সেই সমর্থন ধীরে ধীরে বিএনপির প্রতিকূলে যাচ্ছে।

সরকারও কঠোর হচ্ছে হিংসাত্মক আন্দোলনের বিপরীতে। কোনোভাবেই আন্দোলনের নামে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে দেবে না সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top