সকল মেনু

হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যাহত পশুর হাটের কারণে সাত

 অাছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা : আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর কারণে সাতটি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের আশপাশে পশুরহাট বসানোর ফলে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে সংকটাপন্ন রোগীদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে রোগী ও তাদের স্বজনদের। এদিকে পশুর বর্জের দুর্গন্ধে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া দিনভর উচ্চশব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে, যা হৃদ্রোগীদের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গাবতলী স্থায়ী হাটসহ আটটি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা দিয়েছে।

এর মধ্যে আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গায় দুই কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বসানো হাটের ইজারা নিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ। এই হাটের পাশেই রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল। আছে আরো ৬টি হাসপাতাল। এগুলো হচ্ছে- শিশু হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট,  কিডনি ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে।

নিউরোসায়েন্সেসে প্রতিদিন প্রচুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মাথায় টিউমার ও মেরুদণ্ডে গুরুতর জটিলতা নিয়েও ঘটনা-দুর্ঘটনায় রোগীরা আসছেন। অথচ এই হাসপাতালের সামনের সড়কে পশুরহাট বসানো হয়েছে। এ জন্য হাসপাতালে রোগীরা ঠিকমতো আসা যাওয়া করতে  পারছেন না। এর ফলে নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ  হওয়ার পথে। অনেকটা চিকিৎক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বন্দি হয়ে পড়েছেন ।

৫০০ শয্যার পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হন। এখানে গড়ে ২৫-৩০টি অস্ত্রোপচার হয়। ২৫০ শয্যার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিদিনে গড়ে প্রায় ২৫টি অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় ৬০০ শয্যার ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসে এক হাজারেরও বেশি শিশু। শিশুদের সব ধরনের অস্ত্রোপচারও হয় এখানে। ঈদের সময় হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকে অন্যান্য সময়ের মতোই।

নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন দেলোয়ার হোসেন জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে তার মাকে চিকিৎসার জন্য এখানে নিয়ে আসেন। কিন্তু আগারগাঁও এলাকায় আসার পর হাসপাতালে ঢুকতেই এক থেকে দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে যায় পশুর হাটের কারণে।

রোজিনা বেগম জানান, তার খালা এই হাসপাতালে তিনদিন ধরে চিকিৎসাধীন  আছেন।  দুর্গন্ধের কারণে তার খালা বাসায় চলে যেতে চান।

রোগীদের স্বার্থে পশুরহাট হাসপাতালের আশপাশে কিংবা রোগী যাতায়াতের পথে না বসানোর জন্য গত ৩ আগস্ট  স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। ওই টিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে  বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। অথচ তারা বিষয়টিকে আমলেই নেননি।

আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটের আশপাশের পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অফিসগামী মানুষ। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালেও। আগারগাঁও থেকে বিএনপি বাজার হয়ে মিরপুর-২ অভিমুখের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী গাড়িগুলো ফিরে যাচ্ছে।

পঙ্গু হাসপাতালের বিপরীত দিকে সমবায় অধিদপ্তরের সামনের অংশে হাটের একটি অংশ ঢুকে পড়েছে। এ হাসপাতালের উত্তর-পূর্ব দিকে বেতার ভবন। তার পাশে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) অফিস। এডিবি অফিস ও পঙ্গু হাসপাতালের মাঝখানে হাটের আরেক অংশ। অন্যদিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পাশে প্রত্নতত্ত্ব ভবন, তথ্য কমিশন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব অফিসের গেটে বসেছে কোরবানির পশুর হাট।

পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ডা. হামিদুল হক খন্দকার জানান, হাটের কারণে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি চিন্তা করে আমরা আগেই পুলিশ ও সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি।

নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ জানান, পশুরহাট না বসানোর জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও এখানে পশুর হাট বসানো হয়েছে। এ কারণে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামহটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, আগারগাঁও হাটের ইজারাদারকে সতর্ক করা হয়েছে। হাসপাতালের সামনের রাস্তা যেন কেউ বন্ধ না করে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সড়কের ওপরে কেউ হাট বসাতে পারবে না। যদি কেউ শর্ত ভঙ্গ করে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top