সকল মেনু

নর্থ সাউথের শাহজাহানের অপকর্ম তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

 নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ জন নারী শিক্ষক ও কর্মকর্তার চাকরি ছাড়া নিয়ে ট্রাস্টি সদস্য শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। এর বাইরে একজন জনপ্রিয় শিল্পী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে আসা শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে শাহজাহানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও তার অসদাচরণের খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। শাহজাহানের অপকর্মের তালিকা ক্রমশ লম্বা হতে থাকায় সংশ্লিষ্টরা হতবাক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে,  শাহজাহানের স্বেচ্ছাচারিতার সহযোগী হিসেবে নতুন করে যুক্ত হয়েছে একজন নারী কর্মকর্তার নাম। এই নারী কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিয়েই খুব অল্প সময়ে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন। এ দুজনের ইচ্ছা মতো চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। নারী কর্মকর্তার কারণে এরই মধ্যে আরও দুই নারী কর্মকর্তা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এই নারী কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টিও তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, এ নারী কর্মকর্তা শিক্ষানবিস হিসেবে থাকার কথা থাকলেও চাকরিতে যোগ দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন। তার দাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা থাকছেন তটস্থ।

এদিকে শাহজাহানের স্বেচ্ছাচারিতায় ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। শাহজাহানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকা নিরাপদ বোধ করতে পারেন না, সে প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির লজ্জাকর অভিযোগ কাঁধে নিয়ে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অধিকার নেই। শাহজাহানের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক মহল আবারও সোচ্চার হতে শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, শাহজাহানের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষিকা প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। আরেক শিক্ষিকা তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন। এছাড়া আর্থিক অনিয়ম, ভর্তিবাণিজ্য, অসদাচরণের বিষয়গুলোর প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

সূত্র জানায়, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে শাহজাহানের মদদে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিস্তৃত হয় বলে তদন্তে পাওয়া গেছে।

বোর্ডের তৎকালীন একজন সদস্য নিজেকে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বলে জানালেও আসলে তিনি হিযবুত তাহরীরের মতাদর্শের। শাহজাহানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে ১১তম সমাবর্তন পর্যন্ত কী পরিমাণ মূল সনদ ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়েছে এবং কী পরিমাণ কাগজ এ জন্য কেনা হয়েছে-তার কোনো রেজিস্ট্রার খুঁজে পাওয়া যায়নি। শাহজাহান, তার ছেলে ও ছেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। তারা অর্থের বিনিময়ে ভুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছেন।

শাহজাহান তার পুত্রবধূকে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ছাত্রী হিসেবে ভর্তি করিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের মেয়াদকালে ভর্তি-বাণিজ্য, নারী শিক্ষিকা বা কর্মকর্তা লাঞ্ছনা, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে কোন্দল, দুর্নীতি বহুলাংশে বাড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় জালিয়াতি আর লুটপাটের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ইউনিভার্সিটি।

স্বাক্ষর জাল করে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ৫০০ কোটি টাকায় ক্রয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে লুটপাটের মহাআয়োজন হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই। ইতোমধ্যে লুটে নেওয়া হয়েছে ছাত্র ভর্তি তহবিলের আড়াইশ’ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গুটিকয়েক ব্যক্তির ইচ্ছা মতো চলছে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

সূত্র জানায়, শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইতোমধ্যে প্রমাণিত হওয়ার পর বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। শাহজাহান এখন বোর্ড সদস্য থাকলেও তার ক্ষমতা কমেনি। তার স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন বাড়ছেই। ফলে পরিস্থিতি আরও নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে।

শ‍ুধু তাই নয় শাহজাহান ও তার সহযোগী নারী কর্মকর্তার কারণে মোট ৩৮ জন চাকরি ছেড়েছেন।

এদিকে, জালিয়াতি, টাকা লুট, অনিয়ম আর দুর্নীতির খবরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা। এ ছাড়া যে প্রতিষ্ঠানটি জাল-জালিয়াতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানে সন্তানরা কী শিক্ষা নেবে-এ নিয়েই এখন চিন্তিত অভিভাবক মহল।

আর এসব অপকর্মে ট্রাস্টি বোর্ডের যেসব সদস্য জড়িত রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা। বলেছেন, স্বাক্ষর জাল করে যারা ৫০ কোটি টাকার জমি ৫০০ কোটি টাকায় ক্রয় করে অর্থ লুটের মহাআয়োজন করে, তারা কোনো ভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত থাকতে পারে না। ছাত্রদের কয়েকশ’ কোটি টাকা যারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে, তাদের হাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিরাপদ নয়। অবিলম্বে দুদকের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top