সকল মেনু

রিমান্ডে থাকা আসামীরা আত্মহত্যার তথ্যেই অটল

 চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা জজ কাজী আব্দুল হাসিব মো. আবু সাঈদের (৪৭) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ধারণার সঙ্গে রিমান্ডে থাকা ‍চার আসামীর বক্তব্য মিলছেনা। পুলিশ ধারণা করছে, বিচারককে মাথায় ভারী কোন বস্তু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে। তবে রিমান্ডে থাকা কথিত স্ত্রী ও শ্বাশুড়িসহ চারজন খুনের বিষয়টি স্বীকার করছেনা। তিনদিন জিজ্ঞাসাবাদ করেও তাদের কাছ থেকে খুনের কোন স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি পুলিশ। রিমান্ডে থাকা আসামীদের বক্তব্য হচ্ছে, তর্কের জের ধরে বিচারক নিজেই ধারালো কাঁচি দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করেন। এরপর দরজা বন্ধ করে একটি কক্ষে বসে থাকে। দীর্ঘসময় বের না হওয়ায় তারা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখেন বিচারক জানালার গ্রীলের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছেন। এরপর তাকে দ্রুত চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, রিমান্ডে মুখ খুলছেন না আসামীরা। তারা তাদের আত্মহত্যার তথ্যেই অটল আছেন। রিমান্ডে আরও দুইদিন সময় আছে। আশা করি সঠিক তথ্য আদায় করা যাবে। হালিশহর থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, রিমান্ডে থাকা চারজন আসামীই একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্যের মধ্যে কোন অসঙ্গতি নেই। ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরীন আক্তার কাঁকন পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে চার আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চার আসামী হলেন, বিচারকের কথিত স্ত্রী সানজিদা আক্তার মিশু, তার মা লাকী আক্তার, মিশুর ভাই ইমরান আহমেদ এবং বাসার কাজের বুয়া রীমা আক্তার। ওইদিনই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় হালিশহর থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সানজিদা আক্তার মিশু জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন তিনি বিচারকের বিয়ে করা স্ত্রী। তবে তিনি কোন কাবিননামা দেখাতে পারেননি। তিনি একটি কাজি অফিসের ঠিকানা পুলিশকে দিয়েছেন। পুলিশ ওই কাজি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন বর্তমানে ওই কাজি চট্টগ্রামের বাইরে অবস্থান করছেন।  এছাড়া রিমান্ডে থাকা আসামীরা তর্কের জের ধরে রাগান্বিত হয়ে আত্মহত্যার কথা বললেও কি নিয়ে তর্ক হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য পুলিশকে দিচ্ছেনা। পারিবারিক বিষয় বললেও পুরো বিষয়টি পুলিশের কাছে খোলাসা করছেন না। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে সানজিদা আক্তার মিশু বিচারকের স্ত্রী কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মিশুর পরিবারের সঙ্গে বিচারকের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মিশুর আরও দুই ভাই বর্তমানে ভিন্ন মামলায় জেলে আছে। তাদের জন্য আদালতে যেতে যেতে মিশুর মা লাকী আক্তারের সঙ্গে বিচারকের পরিচয় হয় এবং সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, লাকী আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা থানা, আদালতে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে করতে উকিল, পুলিশ, বিচারের সব কায়দাকৌশল সম্পর্কে অবগত। এজন্য তাদের যে কৌশলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হোকনা কেন, তাদের কাছ থেকে তথ্য বের করা যাচ্ছেনা। উল্লেখ্য ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে হালিশহর থানার মোল্লাপাড়া এলাকায় মিশুর বাসা থেকে গুরুতর আহত ‍অবস্থায় বিচরককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান মিশু, লাকী আক্তার ও ইমরান আহমেদ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় রোগির সঙ্গে থাকা স্বজনরা আবু সাঈদ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানালে চমেক পুলিশ সদস্যদের সন্দেহ হয়। তারা তিনজনকে আটকে রাখেন। পরে হালিশহর থানা ‍পুলিশ মোল্লাপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে আটক করেন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় রিমান্ডে থাকা চার আসামীর বাইরে মিশুর বাবা নাছির আহমদকেও আসামী করা হয়। তবে নাছির আহমদ পলাতক আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top