সকল মেনু

সোমবার মমতার সঙ্গে আবিদার বৈঠক

  কূটনেতিক রিপোর্টার : দীর্ঘ দুই বছর একাধিকবার সময় চেয়েও দেখা করার সুযোগ পাননি বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। কলকাতা থেকে বিদায়ের আগে অন্তত একবার দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও অনুমতি মেলেনি মমতার কাছ থেকে। সন্ত্রাসবাদী, মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আর সারদার অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর যখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে খানিকটা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন মমতা, ঠিক সেই সময় আবিদা ইসলামকে ডাকলেন বৈঠক করার জন্য। সোমবার বিকেল ৪টায় এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৈঠক ঘিরে রয়েছে নানা কৌতূহল। কূটনৈতিক ভাষায় একে আবিদার বিদায়ের আগে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও জামায়াত ইস্যুতে মমতা তার অবস্থান তুলে ধরতে পারেন আবিদার কাছে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে মমতার ব্যাখ্যা দেওয়ার অন্য কোনো পথ নেই বলে মনে করেন কূটনৈতিক-সংশ্লিষ্টরা। গত পাঁচ বছরে ভারতের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ছিলেন চরম বৈরী। তার জেদ, একগুঁয়েমি ও তীব্র বিরোধিতার কারণেই স্থলসীমান্ত চুক্তি ও তিস্তা চুক্তি করতে পারেনি ভারত-বাংলাদেশ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত ও ছাত্রশিবির নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে- মানুষ খুন করেছে, বাসে আগুন দিয়ে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মাকে পুড়িয়ে মেরেছে; বাসে, ট্রাকে, ট্যাক্সি ও সিএনজি অটোরিকশায় পেট্রোল বোমা হামলা করেছে। আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মন্দির ভেঙেছে, সম্পদ ধ্বংস করেছে। এর দায় এড়াতে পারেন না মমতা।

বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জামায়াতকে অর্থ দিয়ে শত শত মানুষ মারা হয়েছে, সেই রক্তের দাগ লেগে আছে মমতার হাতে। এমনকি সীমান্তে যে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলেছে তার দায়ও নিতে হতে পারে মমতাকে। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে গুলি ছোড়া এবং সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণের নির্দেশনা থাকতে পারে মমতার। যা ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে রাজ্যসভার সদস্য ইমরানকে দিয়ে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে যে অর্থ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা তদন্ত করারও ঘোষণা দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিষিদ্ধঘোষিত স্টুডেন্ট ইসলামিক মুভমেন্ট (সিমি) নেতা ইমরানকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করেন জামায়াতের লবির কারণেই। সারদা থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা এনে তা ইমরানের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া হতো। ইমরান বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকা নয়া দিগন্ত-এর কলকাতা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। ওই পরিচয়ে একাধিক বার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। নয়া দিগন্ত জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নে পরিচালিত একটি পত্রিকা। সারদার টাকা জামায়াত রাজনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে ব্যবহার করেছে এবং তাদের পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী হাসপাতাল এবং আবাসন শিল্প খাতে বিনিয়োগ করেছে বলে গোয়েন্দা তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজেপির একজন প্রভাবশালী নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ অভিযোগ করেছেন, সিমির নেতা ইমরানকে রাজ্যসভায় সদস্য করে এবং ভারতবিরোধী একটি কট্টর মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থ দিয়ে মমতা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া। এর পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ মমতার এই সন্ত্রাস-দুর্নীতির তদন্ত করার ঘোষণা দেওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন মমতা। এ কারণেই তিনি আবিদা ইসলামকে সাক্ষাৎ দেওয়ার জন্য সময় রেখেছেন।

তবে এর আগে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে নিয়োজিত ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মোফাখখারুল ইকবাল  হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  জানান, ‘এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। আমরাই নবান্নতে চিঠি লিখে সময় চেয়েছিলাম। সে অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনারকে সময় দিয়েছেন।’

তিনি আরো জানান, আবিদা ইসলাম বদলি হয়েছেন, এজন্য কলকাতা ত্যাগের আগে তিনি বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে যাবেন।

মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পরিস্থিতি ঘোলা করে তোলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর মতো ভারতবিরোধী একটি সংগঠনকে অর্থ দিচ্ছেন বলে পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় একটি বাংলা দৈনিকে যে খবর বেরিয়েছে, তার জবাব চাইতে ডেপুটি হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে শনিবার দ্য হিন্দু পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে।

আবিদা ইসলামকে তলব করার কথা নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে বলে দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে। সেই হিসেবে রোববার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন আবিদা ইসলাম।

এদিকে জামায়াতের সঙ্গে মমতার সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশিত হওয়ায় তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী একটি দলের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এই সখ্য এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারতে মমতার বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগের খবর জেনে ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা।

জামায়াতের সঙ্গে এই সম্পৃক্ততার কারণে মমতাকে রাজনৈতিক ডাইনি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাডভোটেক সৈয়দ মাহবুবুল আলম। তিনি বলেছেন, মানুষ মারার জন্য জামায়াতকে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগ সত্যিই যদি প্রমাণিত হয় মমতার বিরুদ্ধে, তাহলে তা ভারত এবং বাংলাদেশে রাজনীতিতে চরম প্রভাব ফেলবে। গণতান্ত্রিক ধারায় রক্তের রাজনীতি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য অভিনেতা তাপস পালের ঘরে ঘরে গিয়ে বিরোধী দলের মেয়েদের ধর্ষণ করার ঘোষণা, মমতা যে সারদার টাকা নিয়েছে কুণাল ঘোষের আদালতে বসেই চ্যালেঞ্জ, এরপর বাংলাদেশে মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতকে টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হওয়ায় এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত-বাংলাদেশে, রাজনৈতিক খল চরিত্র হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন বলে মনে করেন রাজনীতিবিদরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top