সকল মেনু

লোডশেডিংয়ের ধকল আবারও

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে বেড়ে গেছে লোডশেডিং। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ। একে তো প্রচণ্ড রোদ, সেই সঙ্গে তাপপ্রবাহ, এর ওপর আবার লোডশেডিং- একেবারে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ যাকে বলে। অতিষ্ঠ জনজীবন। কেবল রাজধানী ঢাকাতেই নয়, লোডশেডিং হচ্ছে সারা দেশেই। প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো লোডশেডিং মোকাবিলা করতে করতে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন।

যাত্রাবাড়ী, রায়ের বাগ, জুরাইন, সেগুনবাগিচা, শ্যামপুর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগান, শ্যামলী, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, গোড়ান, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন প্রতিদিনই এসব এলাকায় অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।

একই চিত্র রাজশাহী, কুমিল্লা,  খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়াসহ সব জায়গায়।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সার কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়েছে পেট্রোবাংলা। গ্যাসের অভাবে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের চলমান তাপমাত্রাও একটি কারণ। সব মিলিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং।

গ্যাসের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ঘাটতি থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই রেশনিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা।  এরপরও লোডশেডিং কমিয়ে আনার বিষয়ে চেষ্টা চলছে। আগামী শীত মৌসুমের  আগ পর্যন্ত কিছুটা লোডশেডিং অব্যাহত থাকবে। কেননা ওই সময় তাপমাত্রা কমবে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের (এসি) ব্যবহারও কম হবে, ফলে স্বাভাবিক থকাবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১৩০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে পেট্রোবাংলা আমাদের দিচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। বাড়ছে লোডশেডিং।

তারা আরো বলেন, দেশে বর্তমানে ১০ হাজার ৩৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এর সঙ্গে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। এর মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত ১৮ জুলাই। ওই দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট।

এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ছয় হাজার ৪৩০ মেগাওয়াট। ঘটতি ছিল ৫৭০ মেগাওয়াট। এদিন বিদ্যুৎ খাতে পেট্রোবাংলা সরবারাহ করেছে মাত্র ৮৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পিডিবি চেয়ারম্যান আবদুহু রুহুল্লা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, গ্যাস সরবরাহ কম থকায় এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। দেশের প্রায় সবগুলো সার কারখানা চালু থাকায় গ্যাস প্রাপ্তিতে সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ জন্য বর্তমানে পিক আওয়ারে  প্রায় পৌনে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। এতে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। তবে আগামী মাসের মধ্যে লোডশেডিং কমে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে সার ও শিল্পখাতে তা বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা। যেসব কেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই সব কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর ২ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়েছে। তবে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস উৎপাদিত হলেও ৪৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এখনো ঘাটতি রয়েছে। আর এ ঘাটতি মেটাতে কাজ করছে পেট্রোবাংলা। দেশের মোট ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে ১৯টি থেকে এই মুহূর্তে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৯, শিল্পকারখানায় ২০, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬, বাসাবাড়িতে ১২, সার উৎপাদনে সাত, সিএনজিতে পাঁচ এবং বাণিজ্যিক কাজে দুই শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে।

তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, এখন সার ও শিল্পখাতকে  অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে। কেননা বিদ্যুৎ খাতের পাশাপাশি সার ও শিল্পখাতকেও আমাদের  বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই গ্যাস রেশনিং করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top