সকল মেনু

চাঁদপুর রক্ষায় ভাগ্য ফিরেছে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারদের

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: ভাঙ্গছে নদী, মানুষ হারাচ্ছে সর্বস্ব অথচ আঙ্গুর ফুলে কলাগাছ হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে গনা কিছু ঠিকাদার আর অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর। চাঁদপুরে যুগের পর যুগ ধরে নদী ভাঙ্গন নিয়ে এই চিত্রই পরিরক্ষিত হলেও অবস্থার কোন পরিবর্তনই হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ বারবার বলছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে চাঁদপুরের নদী তীর সংরক্ষণের কাজ করানো হোক। কিন্তু কে শুনছে কার কথা ? দু/একবার সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহনের কতা শোনা গেলেও পরাক্রমশালী ঠিকাদার এবং দুর্নীতিপরায়ন কিছু কর্মকর্তাদের ক’টচালের কাছে সরকারও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। ফলে চাঁদপুরের নদী তীর সংরক্ষণের নামে চুরি, পুকুর চুরি সবই অব্যাহত রয়েছে। চুরির বিষয়টি এতই অসহনীয় হয়ে উঠেছে যে, প্রভাবশালীদের আশীর্বাদপুষ্ট এক সময়কার হোটেল সার্ভিস বয় এখন পাউবোর ঠিকাদারী করে কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বাড়ি, গাড়ি, প্রভাব, প্রতিপত্তি এখন চাঁদপুর শহরের আলোচ্য বিষয়। কিছু টাকার মালিক হবার সুবাদে তিনি এখন জেলার রাজনীতি, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও প্রভাব খাটান। জমি দখল, খুনের মামলার নিস্পত্তি এমন কী খুনের নেতৃত্ব দেবার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  স্বাধীনতার পর গত ৪০ বছরে চাঁদপুর শহরকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রায় ১’ শ ৭০ কোটি টাকার সংরক্ষণ কাজ পরিচালনা করা হলেও শহর রক্ষাতো দূরের কথা শহর এলাকাকে নদীর কড়াল গ্রাসের মুখ থেকে ঝুঁকিমুক্তই করা যায় নি। চার-চারটি নদী ঘিরে রেখেছে চাঁদপুরকে। শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে প্রমত্তা মেঘনা, পদ্মা ও ডাকাতিয়া নদী। শহরের অদূরে তিনটি স্থান দিয়ে পদ্মা নদী এসে মিশেছে মেঘনার সাথে। মতলব উপজেলায় মেঘনার সাথে মিশেছে ধনাগোঁধা বা গোমতি নদী। দেশের ৯৫ ভাগ নদ-নদীর পানি চাঁদপুরের উপর দিয়ে বঙ্গপোসাগরে প্রবাহিত হয়। ফলে চাঁদপুর সবসময়ই নদী ভাঙ্গনের দিক থেকে একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। নদী ভাঙ্গন এ জেলার লাখ-লাখ মানুষকে রিক্ত, নিঃস্ব ও সর্বহারা করে দিলেও কিছু সংখ্যক প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ ও ঠিকাদারের জন্য তা আশির্বাদ স্বরূপ।
সেই সতেরশ শতাব্দি থেকে চাঁদপুর নদী ভাঙ্গনের শিকার। তবে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়ে যায় ১৯৬০ সালের দিকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার চাঁদপুরের নদী ভাঙ্গন মোকাবেলার উদ্যোগ নেয়। সর্ব প্রথম ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থ বছরে চাঁদপুর শহরকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ১৯৭৭-১৯৭৮ অর্থ বছর পর্যন্ত ৫ কোটি ৬৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে শহরের নদী তীরবর্তী ১ হাজার ২’ শ ৫০ মিটার এলাকায় পাথর বিছানো হয়। এরপর ১৯৭৯-১৯৮০ অর্থ বছর থেকে ১৯৯৬-১৯৯৭ অর্থ বছর পর্যন্ত ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৩’ শ মিটার এলাকায় সংরক্ষণ কাজ পরিচালনা করা হয়। ৭২-৭৩ থেকে ৯৬-৯৭ অর্থ বছর পর্যন্ত সরকারি অর্থায়নে এসব কাজ পরিচালনা করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছর থেকে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ৯’ শ ২০ মিটার এলাকায়ও সংরক্ষণ কাজ পরিচালনা করা হয়। এরপর ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থ বছর থেকে আরেকটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে। প্রকল্পের কাজ চলাকালে ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থ বছরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হবার কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। আবার ২০০০-২০০১ অর্থ বছরে ডাকাতিয়া ও মেঘনার ভাঙ্গনের কারণে শহর সংরক্ষণ তীর মারাতœক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় প্রকল্পের সারপত্র বাড়িয়ে তা ১’ শ ৮ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছর পর্যন্ত ৬২ কোটি ৮৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে বড় ষ্টেশন ও পুরাণ বাজার এলাকায় নদী তীরের ১ হাজার ৮’ শ ৫৭ মিটার স্থানে সংরক্ষণ কাজ পরিচালনা ও ৪’ শ মিটার স্থানে পুরোনো কাজ শক্তিশালী করা হয়েছে। এভাবে ১৯৭৪ থেকে এখন পর্যন্ত ১ শ’৭০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।
চাঁদপুর শহরকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখনও পর্যন্ত সংঘঠিত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থ বছরে ১’ শ ১০ কোটি টাকার একটি তিন স্তরে
বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম স্তরের কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের কাজ আর শুরু করা হয়নি। এরপর ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার টাকার কাজ হবার পর ওই প্রকল্প বাতিল করা হয়। ১৯৯০-১৯৯১ অর্থ বছরে হাসকানিং নামে একটি ডাচ সংস্থা মেঘনা ষ্টাডি রিপোর্টের ভিত্তিতে ২ হাজার ৫২ মিটার এলাকায় সংরক্ষণ কাজ পরিচালনার জন্য ৪’ শ ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দাখিল করে। কিন্তু সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ১৯৯৪-১৯৯৫ অর্থ বছরে ২’ শ ৫৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আরও একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়। সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।
চাঁদপুর শহরকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত ভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস পূরণ এবং দুর্নীতিকে লালন করা হচ্ছে। যেসব কাজ করা হয় তা মুহুর্তের মধ্যে স্রোতের অতলান্তে হারিয়ে যায়।তখন স্রোতের দোহাই দিয়ে কাজ না করেও পার পেয়ে যাওয়া যায়। ১৯৮৮ সালে সংরক্ষণ কাজে দুর্নীতির অভিযোগে তৎকালীন সরকার ব্রিটেনের হলক্রো কোম্পানীর প্রকৌশলী মিষ্টার টমিকে ২৪ ঘন্টার ভেতর বাংলাদেশ ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করে এবং ওই সময়ে গৃহীত প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরে ৭ কোটি টাকার দরপত্র ঘাপলামির অভিযোগে চাঁদপুর পাউবোর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মালেক এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আকমল হোসাইনকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং ওই দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর থেকে হাইমচর পর্যন্ত ৩২০ কোটি টাকা ব্যায়ে করা সদ্য সমাপ্ত ১১ কিলোমিটারের সংরক্ষণ কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ দাসসহ নয় জনকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
চাঁদপুরে নদী তীর সংরক্ষণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংরক্ষণ কাজের অনুমতি বাগিয়ে নেয় মন্ত্রী, এমপি, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের মনোনীত লোকজন বা তাদের আতœীয়-স্বজনরা। নামে বেনামে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানীর কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া এনে কাজ নেয়া হয়। ফলে এরা কারো কোন তোয়াক্কা করেনা। এরসাথে যুক্ত রয়েছে প্রকৌশলীদের দুর্নীতি। চাঁদপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিকাংশ প্রকৌশলীই আসেন টাকা-পয়সা খরচ করে, তয়-তদ্বির করে। ফলে তারা এখানে এসে সুদসমেত খরচ উঠাবার জন্য আদাজল খেয়ে নামে। নানা অজুহাতে দরপত্র আহ্বান না করে কাজ করানো হয় পছন্দসই ঠিকাদারদের দিয়ে। এ ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি অভিযোগ ছিল পাউবোর সদ্য সাময়িক বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণের বিরুদ্ধে। তিনি চাঁদপুরের নানা পদে অন্তত ১০ বছর কর্মরত ছিলেন।
সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, শুকনো মৌসুম রেখে বর্ষায় ভাঙ্গন শুরু হলে কাজ শুরু করার প্রবণতা। তখন ৫ টি ব্লক ফেলে ৫০ টির হিসেব দিলেও কারোই কিছু করার থাকে না। তাছাড়া পুরো কাজও না করে বর্ষার দোহাই  দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া যায়। ২০০৪ সালে বন্যার সময় হাইমচরে নদী তীরে ৩ কোটি টাকার কাজ করানো হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই তা স্রোতর তোড়ে ভেসে যায়। তাই বলে প্রকৌশলী বা ঠিকাদারদের কারোই কিছু হয়নি। এরপর রয়েছে কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিডিউলে উল্লেখিত শর্তের ধার ধারা হয় না। যেহেতু কর্মকর্তারা ঘুষ দুর্নীতিতে  আমগ্ন নিমজ্জিত, সেহেতু তারা এসবের ব্যাপারে কিছুই বলে না। এরপর দরপত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়। যেমন পছন্দসই বা প্রভাবশালীদের কাগজ-পত্র গোপনে পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এদের কাগজপত্রে অসংলগ্নতা বা জাল-জালিয়াতি থাকলেও সেগুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে সরকারের রক্ষিত জিও ব্যাগ চুরি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন সংশি¬ষ্টরা। পানি সম্পদ মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং টাস্কফোর্সের বিশেষ উদ্যোগে এ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পানি উন্নয়ন বোর্ড জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দেশের আরও কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে কিনা সে বিষয়টিও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
অভিযোগ উঠে, চাঁদপুর পাউবো’র গোডাউনে দীর্ঘ দিন যাবৎ জরুরি কাজের জন্যে সংরক্ষিত ৬ হাজার জিও ব্যাগ আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ঠিকাদারদের বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়েছে। চাঁদপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যরা এর সাথে জড়িত বলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল¬াহর বাসার বাবুর্চি মফিজ, হিসাব কর্মকর্তা মাসুম খান এবং ওয়াপদা মসজিদের আশপাশের দোকানদাররা গোডাউন থেকে জিও ব্যাগ বের করে নেয়ার সময় দেখে ফেলে। তারা বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের কাছে বলাবলি করলে জিও ব্যাগ চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এ সংবাদ পানি সম্পদ মন্ত্রীর কাছে পৌঁছলে তিনি এবং পানি সম্পদ সচিব বিষয়টি টাস্কফোর্সকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। টাস্কফোর্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে সংশি¬ষ্ট রেজিস্টার ও নথিপত্র জব্দ করেছেন। অভিযোগ করা হয়, পাউবো’র গোডাউনে ২০১০ সাল থেকে জরুরি কাজের জন্যে সংরক্ষিত জিও ব্যাগগুলো ছিলো আকারে বড়। বর্তমানে এই সাইজের জিও ব্যাগ বাজারে পাওয়া যায় না। যেসব জিও ব্যাগ পাওয়া যায় তা আকারে ছোট। গত ১৬ মার্চ চাঁদপুরের পাউবো’র তৎকালীন কর্মকর্তারা (যাদের অধিকাংশই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে বিভাগীয় শাস্তি ভোগ করছেন এবং তাদের নামে দুদকেও অভিযোগ দায়ের রয়েছে) এসব জিও ব্যাগ বুঝিয়ে দেন। সম্প্রতি জরুরি কাজের সময় ঠিকাদারদের সাথে পরস্পর যোগসাজশে গোডাউনে সংরক্ষিত সরকারি জিও এসব ব্যাগই ট্রাকের পর ট্রাক ভর্তি করে প্রকাশ্য দিবালোকে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় নিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রফিক উল¬াহর বক্তব্য হচ্ছে, তাকে একটি মহল ফাঁসানোর জন্য এমন চক্রান্তে লিপ্ত। তিনি বলেন, ওই সময়কার নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন বাবুর নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে পাউবো। তাছাড়া তিনি এখান থেকে যাওয়ার সময় আমাকে কোনো জিও ব্যাগ বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।

এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় বরাবরই জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এই ঘটনায় যারা অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এডিজি পূর্বাঞ্চল গিয়াস উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পাবার পর টাস্কফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে কাগজপত্র জব্দ করেছে। আগে যারা এখানে ছিলেন, তারা বলেছেন জিও ব্যাগ রেখে গেছেন। আর বর্তমান প্রশাসন বলছে তারা কোনো জিও ব্যাগ বুঝে পায়নি। কো›নটা সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ঠিকাদার যদি সত্যিই এই ব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন, তবে এর বিল তিনি পাবেন না।
জানা যায়, চাঁদপুর পওর বিভাগের আওতায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ৩২ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং কার্যক্রম চলছে।
উলে¬খ্য, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকউল¬াহ ফেনীতে মহুরি প্রকল্পে দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিল। কাজ না করেই বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ সক্রান্ত ওই অভিযোগটি আনেন গত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগও দায়ের করা হয়। এই অভিযোগ তদন্ত না হওয়ায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ওই সময় তার প্যাডে একাধিকবার দুদককে তাগাদা দিয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। এই প্রকৌশলী চাঁদপুরে গত মার্চে আসার পর থেকে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। তার কাছে কিচু জানতে চাইলে তিনি কালক্ষেপন করতে থাকেন।
এদিকে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের নতুনবাজার অংশে ৮০ মিটার এলাকায় নতুন করে ধস নামতে শুরু করেছে। গত ৩১ আগষ্ট  সকাল ১০ টার পর থেকে বাঁধের ব্লকসমূহ তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন ‘মোল হেড’ নামে পরিচিত শহরের ওই এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধটি  ৩ হাজার ৩শ’ ৬০ মিটার প্রশস্ত। এর নতুন বাজার অংশে  ১ হাজার ৭শ’ ৩০ মিটার এবং পুরানবাজার অংশে ১ হাজার ৬শ’ ৩০ মিটার এলাকার অবস্থান।  এই বাঁধটিই চাঁদপুরবাসীকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে। বাঁধের পাশে ডাকাতিয়া ও মেঘনার মোহনা অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে এটি ঝুঁকির মুখে পড়ে। কারণ এই মোহনা দিয়েই দেশের ৯৫ ভাগ নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। চাঁদপুর মোলহেড এলাকায়  নদী তীরের ব্লকসমূহ সরে যেয়ে ৬০ ফিট পর্যন্ত গভীর হয়ে গেছে। ফলে ওই এলাকাটি পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। ওই এলাকা রক্ষার জন্য যে ব্লক ও বালু বর্তি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে তা সঠিকভাবে  ফেলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। ব্লক ধসে যাচ্ছে এক এলাকার আর ব্লক ও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে অন্য এলাকায়। আবাসিক হোটেলের রুম সার্ভিস থেকে ক্ষমতাসীনদের মদদে সম্প্রতি ঠিকাদার হয়ে কোটিপতি বনে যাওয়া একজন ঠিকাদার যেভাবে চাইছেন সেভাবেই  ফেলা হচ্ছে ব্লক ও ব্যাগ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top