সকল মেনু

আপনার সন্তান কী শিখছে!

 লাইফস্টাইল ডেস্ক : আবুল হাসান। তার সাত বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়া একটি ছেলে আছে। একদিন ছেলে স্কুল থেকে ফিরে এমন ভাষায় কথা বলল যে, তিনি শুনে হতবাক। তারপর ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, এসব ভাষা কোথায় শিখলে? কোথায় শিখেছ এমন বাজে কথা? তার ছেলে জানাল, স্কুল বাসে তার বড় ছাত্ররা এই ভাষায়-ই কথা বলছিল। আর তাই সে অনুকরণ করছে। কারণ সে তাদের মতো বড় হতে চায়।

আবুল হাসানের মতো অনেকেই জানেন না, এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিতে হয়। এরকম ঘটনা কিন্তু একটা নয়। বেশিরভাগ মা-বাবা চার দেয়ালের শ্রেণী কক্ষের শৃঙ্খলা দেখে অভিভূত হয়ে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু এসব  নিয়ম কানুন স্কুল বাস বা ভ্যানে কখনোই ততটা রক্ষা করা হয় না।

অবাধ্য আচরণ করার কারণ
শিক্ষার্থীরা কয়েক ঘণ্টা ক্লাস রুমে থাকার পর তারা নিয়ম কানুনের খাঁচা থেকে বেরিয়ে আস। তারপর বাসে বসে উদ্ধত আচরণ করে শরীরের অবশিষ্ট কর্মশক্তি ধ্বংস করে ঘরে ফিরে। কারণ বাসে তাদের বাধা দেয়ার কেউ থাকে না।

এ ব্যাপারে ভারতীয় মনোবিজ্ঞানী ড. প্রভন সোনার বলেন, শ্রেণীকক্ষের চেয়ে তারা বাসে স্বাধীনতা বেশি পায়। সেখানে বাবা-মা’র হস্তক্ষেপও থাকে না। তাই তারা মনে করে, এখানে যা ইচ্ছা তা করা যাবে। এখানেই সুযোগ আছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করার।

ভারতীয় ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানি ড. সালোনি সাওয়ানি বলেন, সব বয়সের শিশুরাই এক সঙ্গে বাসে ভ্রমন করে। যদি বয়সে বড় শিশুরা খারাপ ভাষায় কথা বলে তাহলে, ছোটরা তা অনুকরণ করে তাদের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলার জন্য। এটাই উচ্ছৃঙ্খলতার প্রধান কারণ।

এই বাসগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪০-৫০জন শিক্ষার্থীদের জন্য একজন পরিচারিকা থাকে। কখনো কখনো থাকেই না। যদিও থাকে তবে, কোনো শিক্ষার্থী শারিরীকভাবে অসুস্থ বোধ করে কিনা বা আঘাত পেল কিনা, এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি।

সালোনি সাওয়ানি আরও বলেন, তারা শিশুদের আচরণের ব্যাপারে দায়িত্ব নেন না, সুতরাং বুঝাই যায়, এ ব্যাপারে নজর রাখার কেউই নেই।

আপনার সন্তান কখন উচ্ছৃঙ্খলতা করে
আপনার সন্তান যদি স্কুল বাস থেকে খারাপ অভ্যাসগুলো শিখে থাকে তাহলে, আপনার সন্তানকে বিষয়টি ব্যাখা করে বলুন, এই ভাষাটি অনুপযুক্ত আর এটি অবশ্যই সহ্য করা হবে না। তাকে বুঝিয়ে বলুন, বড়দের কথা বলার ঢং এবং তাদের ভুল কাজটা অনুকরণ করার মধ্যে কোনো মাহাত্ম্য নেই। অতএব এটা করা উচিত না।

ভারতীয় মনোবিদ সাওয়ানি বলেন, যখন বাসের মধ্যে ঝগড়া বা হাতাহাতি হয়, তা বাবা-মা’র কানে আসে। আর বাবা-মা প্রথমেই স্কুল কর্তৃপক্ষ বা বাস ড্রাইভারকে জবাবদিহি করে। এই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য এ পন্থা অবলম্বন করাটা ভুল। বাবা-মা বুঝতেই পারেন না, তারা তাদের সন্তানের সামনে ভুল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

এর পরিবর্তে আপনি দুই পক্ষের ব্যাপারেই জানুন। তখন যদি বুঝতে পারেন আপনার সন্তান ভুল করেছে, তারও দোষ আছে তাহলে ব্যাপারটিকে কঠিনভাবে না দেখে বুঝিয়ে বলুন।

ড. সোনার আরও বলেন, আপনার সন্তানকে বোঝান যে, অন্য কারও সঙ্গে ঝগড়া বা তাকে বিরক্ত করাটা উচিত না। অনেক সময় আপনার শিশুকে কেউ বিরক্ত করলে সেই ব্যাপারেও সে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে) অভিযোগ করে না। তাকে শিখিয়ে দিন, এরকম কিছু হলে অবশ্যই যেন, শিক্ষক বা বাস/ভ্যান ড্রাইভারকে সঙ্গে সঙ্গে অভিহিত করে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব
যেহেতু ভ্যান বা বাসের মধ্যে নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলতা বজায় রাখা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে স্কুল ভ্যান বা বাসে ‘স্টুডেন্ট মনিটর’ রাখা যেতে পারে। তাতে শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই শৃঙ্খলা বজায় রাখে না বরং কর্মীদের উপরও নজর রাখে।

রাজধানীর কিছু কিছু স্কুল বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখারও পরিকল্পনা করছে। অনেক স্কুল বাসে একজন মহিলা পরিচারিকাও রাখা যেতে পারে যিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

এ ব্যাপারে সাওয়ানি বলেন, বাসে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী থাকা খুবই জরুরি। ছোট ও বয়সে বড় শিশুরা একসঙ্গে একই বাসে ভ্রমন করছে। তাই পরিচারিকার কাজ হবে, বয়সে বড় শিশুরা যেন বাসের পিছনে সিটগুলোতে বসে, আর ছোটরা বসবে সামনের সিটে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ করণীয়
১. শ্রেণীকক্ষে স্কুল ভ্যান বা বাসের নিরাপত্তা সম্পর্কে নির্দেশনাবলী প্রদান করা।
২. সঠিক সময় শিক্ষার্থীদের প্রেরণ করতে হবে যেন তাদের ভ্যান বা বাসের জন্য ছুঁটতে না হয়।
৩. সঠিকভাবে ভ্যান বা বাসের যান্ত্রিক দিকগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. লক্ষ্য রাখতে হবে যেন, ভ্রান বা বাসে পর্যাপ্ত কর্মী থাকে এবং একজন মহিলা পরিচারিকা সবসময় উপস্থিত থাকে।
৫. সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা যায়।

মা-বাবার করণীয়
১. যে এজেন্সির বাস বা ভ্যান ব্যবহৃত হচ্ছে তার অতীত নিরীক্ষা করে দেখা।
২. আপনার সন্তানকে নিরাপত্তার ব্যাপারে বোঝান, কিভাবে ভ্যান বা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং কিভাবে তাতে আরোহণ করতে হবে।
৩. যদি বাসের কর্মী বা ছাত্র-ছাত্রীর কেউ অসদাচরণ করে তবে সঙ্গে সঙ্গে তা নজরে আনতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. আপনার সন্তানকে ভ্যান বা বাসের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে শেখান।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top