সকল মেনু

রাবি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায়

 রাবি প্রতিনিধি : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে আছে সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী গ্রন্থাগার। মুক্তজ্ঞান চর্চার অভয়ারণ্য হলেও নিরপত্তা নেই শিক্ষার্থীদের। ছিনতাই, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দ্বারা নিয়মিত নির্যাতনে শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি হঠাৎ করেই বেড়ে চলেছে শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা। গত ছয় দিনে তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তারা হলেন- অর্থনীতি বিভাগের কামরুজ্জান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মেহেদী হাসান ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার শাহরিয়ার। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারধরসহ বিভিন্নভাবে অত্যাচারের শিকার হলেও রহস্যজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর গত ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে কামরুল হাসান নামের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এক ছাত্রলীগ নেতার পায়ের সঙ্গে পা লাগায় তাকে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কৃষি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ ও ছাত্রলীগ কর্মী বনি। ছাত্রলীগের বেদম প্রহারে আহত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় কারুলকে।

গত ১২ আগস্ট ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকের সামনে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তাকে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক কাজী আমিনুল ইসলাম লিঙ্কনসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী।

এই ঘটনার একদিন পরেই গত ১৪ এপ্রিল আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ইফতেখার শাহরিয়ার নামের আর এক শিক্ষার্থী। ছাত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যারয় ছাত্রলীগের মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয় সম্পাদক সাবরুন জামিল সুষ্ময় ও ছাত্রলীগ কর্মী আবু খায়ের মোস্তফা ওরফে রিনেট এবং হিরোক। ছাত্রলীগের ছাতির আঘাতে শাহরিয়ার গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

তবে শাহরিয়ারের বাবা আব্দুস সালেক সিরাজগঞ্জের জেলা জর্জ হওয়ায় এই ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী রিনেট ও হিরোককে বৃহস্পতিবার আটক করে পুলিশ। তারা এখন মতিহার থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ছয় দিনে যে তিন শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হয়েছেন তাদের কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। তারা সাধারণ শিক্ষার্থী হওয়ায় অন্যায়ভাবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের মারধর করলেও কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। রহস্যজনকভাবে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরব রয়েছে। এ সব ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এম আহসান কবির বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। যদিও তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সোহরাব হোসেন বলেন, ‘যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করেন তারা সরকার তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদপুষ্ট। এ কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতন ও মারধরের শিকার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।’ তাই অস্ত্রবাজ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরসহ যে সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে, তাদের মদদ না দিয়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়তুল্লাহ খোমেনী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরপত্তা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বায়িত্ব। কিন্তু প্রশাসন ওই সব সন্ত্রাসীদেরকেই বেশি নিরপত্তা দেওয়ার কারণে তারা আরো আক্রমণাত্বক হয়ে যাচ্ছে। এভাবে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল চর্চা কমে যাচ্ছে। এ সব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমনকি কেউ যদি অভিযোগ করলে সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর নাম জেনে যায়। এতে করে পরে অভিযোগকারীকে পরবর্তীতে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সদস্য গোলাম ফারুক সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ব্যাপারে অবগত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরপত্তার ব্যাপারে অতিদ্রুত যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি বিভিন্নভাবে জানলেও তাদের থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় আমরা কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা যদি লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top