সকল মেনু

ক্ষমতাসীনদের তোড়জোড় নগরপিতার আসন পেতে

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম: ‘জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। এখন লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে মানুষের সেবা করে যেতে চাই। এ কারণে উত্তর কিংবা দক্ষিণ নয়, সুযোগ পেলেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে দল বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নিজেকে উজাড় করে দিয়েই রাজধানীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখব।’ ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে রাইজিংবিডিকে এসব কথা বলেছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম।

মায়া জানান, এই মুহূর্তে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন যখন হবে, তখন যদি দল তাকে সুযোগ দেয়, তা হলে আরো পূর্ণ উদ্যমে কাজ করবেন তিনি।

শুধু মায়া নন, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের আরো অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মেয়র হওয়ার মতো মনোবাসনা রয়েছে স্থানীয় অনেক সংসদ সদস্যেরও।

মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দল এবং প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায়ও রয়েছেন তিনি।

তবে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা, একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহ মেয়র পদের জন্য নিজেকে ধীরে ধীরে তৈরি করে চলেছেন। স্থানীয়ভাবে তার গ্রহণযোগ্যতাও  ভালো।

হটনিউজ২৪বিডি.কমকে রহমত উল্লাহ বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য তিনি দলকে প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আহ্বায়ক হিসেবে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনের সময় হলে তার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার কথা বলবেন। তবে এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করবেন রহমত উল্লাহ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের অবস্থা হ-য-ব-র-ল। এই মুহূর্তে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব।

ডিগবাজি দিয়ে ফের আওয়ামী লীগে ফিরে এসে প্রাক্তন মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন মেয়র পদের জন্য ঘরোয়া পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছেন। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও দলের নেতা হাজি সেলিমও মেয়র পদের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রেখেছেন।

হাজি সেলিম স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের ব্যানারে রাজধানীর দক্ষিণ জুড়ে তার বিলবোর্ডই বলে দিচ্ছে তিনিও মেয়র পদের প্রার্থিতা পেতে লড়বেন।

কামরুল ইসলামের মেয়র প্রার্থী হওয়ার চিন্তাভাবনা নেই এই মুহূর্তে। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে তার ওপর। তা ছাড়া দলীয় মনোনয়নের ওপর সবকিছু নির্ভর করে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে প্রাক-প্রস্তুতি সেরে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, সীমানাসংক্রান্ত কিছু সমস্যার জন্য তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছেনা। ওই সমস্যার সমাধান আর সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই নির্বাচন আয়োজন করবে কমিশন।

এদিকে নির্বাচন করতে রাজনৈতিক যে সাংগঠনিক শক্তি ও ঐক্য দরকার, সরকারে থাকায় তা প্রায় অনুপস্থিত আওয়ামী লীগে। এই দুর্বলতা কাটাতে ইতিমধ্যে ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণের মহানগর কমিটি গঠন করা হলে অনেকটা মজবুত অবস্থান হবে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির।

আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উত্তরে এ কে এম রহমত উল্লাহ এবং দক্ষিণে কামরুল ইসলামকে সভাপতি করে মহানগর কমিটি দুটিকে শক্তিশালী করা হবে। ওই প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরই এই করপোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে আওয়ামী লীগ।

উত্তরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী  মায়া আর দক্ষিণে মতিয়া চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, এমন গুঞ্জনও রয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে।

আওয়ামী লীগের বাইরে সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে তার দল। আর বিএনপিতে মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, এবং হান্নান শাহসহ আরো অনেক সিনিয়র নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শাসকদল আওয়ামী লীগ রয়েছে ট্র্যাজেডিপূর্ণ অবস্থানে। মেয়র হানিফের পর আর কোনো নেতা ওই পদে যাওয়ার মতো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি, শুধু দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে।

২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশনের যে নির্বাচন হয়েছিল, তাতে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। ওই রাজনৈতিক ভুলের মাশুল এখনো গুনে যাচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় সাদেক হোসেন খোকা। তার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা থাকলেও তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ নয় বছর ক্ষমতায় থেকে যান। এই দীর্ঘ সময়ে নগরপিতার আসনে ফিরতে পারেনি আওয়ামী লীগ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেছেন, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি বিএনপি। মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ না নেওয়ায় অনেকটা বাধাহীনভাবেই মেয়র হন সাদেক হোসেন খোকা।

ওই ভুলটাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে করেছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় যেনতেন নির্বাচনে ক্ষমতায় রয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। এখন সরকারে যাওয়া ততটা সহজ নয় বিএনপির জন্য। যেমনটি হয়েছে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। সরকারে থেকেও ঢাকার মেয়র পদ ফিরে পেতে চরম কঠিন পরিস্থিতির মুখে রয়েছেন তারা।

নগর ভবনের তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন ) সংশোধন বিল-২০১১ নামে একটি বিল পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। বিভক্ত হয়ে যায়  ৯২টি ওয়ার্ড, ৫২টি থানা এবং ১৭টি ইউনিয়ন ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে ৩৬টি ওয়ার্ড। ওয়ার্ডগুলো হলো : ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ নম্বর ও ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭ এবং ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে মোট ৫৬টি ওয়ার্ড। ওয়ার্ডগুলো হলো : ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭ এবং ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১ ও ৯২।

ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট মিউনিসিপিলিটি হিসেবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের। ১৮৮৫ সালে মিউনিসিপিলিটির প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আনন্দ চন্দ্র রায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ পর্যন্ত চেয়ারম্যানই ছিল মিউনিসিপিলিটির সর্বোচ্চ পদ। ১৯৭৭ সালে মিউনিসিপিলিটি ভেঙে পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৮ সালে চালু  হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন।

২০১২ সালের ২৪ মে বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু একজন নাগরিক ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভক্তির বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত নির্বাচনের ওপর  নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার। ২০১৩ সালের ১৩ মে উচ্চ আদালত নির্বাচনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়। তারপরই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা মহানগরের দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top