সকল মেনু

শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে লুটপাটে ব্যস্ত সেই এমদাদ

 নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বরাবরই সুবিধাভোগের অভিযোগ উঠে এসেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রভাব খাটিয়ে লুটপাট করা সেই এমদাদের বিরুদ্ধে এবার শেখ পরিবারের নাম ভাঙানোর অভিযোগ উঠেছে। ক্রমেই এমন স্বরূপ উন্মোচিত হচ্ছে বারবার বোল পাল্টানো এমদাদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইন ও নিয়মনীতি অমান্যের কারিগর প্রকৌশলী এমদাদের দাপটে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চাকরির আর মাত্র দুই মাস বাকি তার।  আর তাই এইম মুহূর্তে বিদায়ী লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই এমদাদ। আব্বাসের আস্থাভাজন হিসেবে তখনও রাজউক কাঁপিয়েছেন তিনি। সে সময়ের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রীর প্রিয়জন হওয়ার সুবাদে স্ত্রীর নামে ১০ কাঠার প্লট সাড়ে ১২ কাঠায় বাড়িয়ে বরাদ্দ নিয়েছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এমদাদের অপকর্মের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তাকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে সর্বত্র। তার অপকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের সব ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের শেষ মুহূর্তে সুচতুর এমদাদ ধীরে ধীরে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। ঝুঁকে পড়েন আওয়ামী লীগের দিকে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতির দায়ে কারাভোগও করেন মহাদাপুটে এই প্রকৌশলী। ক্ষমতার রদবদল হলেও এমদাদের দাপট যেন আরও বেড়ে যায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। একসময় মির্জা আব্বাসের কাছের লোক থাকলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো মেয়াদ রাজউক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে। নিয়মনীতি লঙ্ঘন করা যেন তার নিয়মের মধ্যেই পড়ে। শুধু নিজের বউয়ের নামের প্লটের আয়তন বাড়ানো নয়, ঝিলমিল প্রকল্পে আইনজীবী শ্যালকের নামে তিন কাঠার প্লটটি ৫ কাঠায় পরিণত করেছেন। বিভিন্ন মহলে তার এই আইনজীবী শ্যালকের পরিচয় দিয়ে থাকেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বন্ধু হিসেবে। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে কীভাবে প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করতে হয়, কৌশল পরিবর্তন করতে হয়- তা ভালো করেই জানেন এই এমদাদ।

জানা যায়, বর্তমানে নতুন কৌশলে প্রভাব খাটাচ্ছেন বিতর্কিত এই প্রকৌশলী। এমদাদের ওপর ক্ষুব্ধ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী তার ভয়ে মুখ না খুললেও নীরবে প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন।

চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের দাপট
চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাজউক কর্মকর্তাদের ঘিরে একটি আঞ্চলিক বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন এমদাদুল ইসলাম। এ সিন্ডিকেটে এমদাদের ডান হাত বলে পরিচিত রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল মল্লিক এবং ফ্ল্যাট প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোজাফফর হোসেন। এর মধ্যে মোজাফফর হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় তিনি টাকাসহ হাতেনাতে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন। এ নিয়ে তাকে কয়েক বছর জেলও খাটতে হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, উজ্জ্বল মল্লিক পূর্বাচল সাইটে না গিয়ে নিজের ধান্ধায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। প্রশাসনিক বস হিসেবে এ দুই কর্মকর্তার অফিসের প্রতি অপেশাদারসুলভ আচরণ দেখেও না দেখার ভান করেন এমদাদ। এ নিয়ে রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে।

তারা বলছেন, এলাকাপ্রীতির চূড়ান্ত সীমায় রয়েছেন এমদাদ।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ধূর্ত এমদাদ সুযোগ বুঝে রাজউকের দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে কাছে টেনে নিয়েছেন। কারণ উজ্জ্বল মল্লিক ও মোজাফফর দু’জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঘরানার কর্মকর্তা বলে নিজেদের জাহির করে থাকেন। এছাড়া, রাজউকে কর্মরত চট্টগ্রাম এলাকার কর্মচারীদের নেতা এমদাদুল ইসলাম। তার কথার বাইরে রাজউকে কর্মরত চট্টগ্রামের কোনো কর্মচারী এক চুলও নড়েন না। এটা বেশ গর্বের সঙ্গে বলে বেড়ান এমদাদ।

সব সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এমদাদ
সব সরকারের আমলেই সমান সুবিধাভোগী রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্ত্রী সামিনা ইসলামের নামে প্লট বরাদ্দ ছাড়াও নানা সুবিধা নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই সময় পরিত্যক্ত বাড়ির কমিটিতে থেকে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেন। সে সময় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে খুব একটা সফল হননি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথম চার বছর বেশ ভালোই ছিলেন এমদাদ। ওই সরকারের পঞ্চম বছরে এসে গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ কারণে তার চাকরিও চলে যায়। এটাকে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে নানা রংচং দিয়ে বলার চেষ্টা করেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তাই মির্জা আব্বাস আমার চাকরি খেয়ে ফেলেছিল।’ এসব নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে।

প্রধান প্রকৌশলী পদে নতুন যোগদান অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে
আদালতের আদেশকে পুঁজি করে প্রধান প্রকৌশলী পদে নতুন করে রাজউকে যোগদান করেছেন এমদাদ। অথচ পরিত্যক্ত বাড়ির মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো চার্জশিটভুক্ত আসামি সাসপেন্ড অবস্থায় থাকার কথা। অথচ তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যদিও সাবেক গণপূর্ত সচিব মহবুবুর রহমানের আমলে নিয়মকানুনের বেড়াজালের কারণে চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি। সাবেক গণপূর্ত সচিব ও তার আত্দীয় গণপূর্ত সচিব ড. খোন্দকার শওকাত হোসেনের বদান্যতায় চাকরিতে নতুন করে যোগদান করেন এমদাদ। রাজউক সূত্র জানায়, এমদাদুল ইসলামের বন্ধু রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী। একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে যার সুনাম রয়েছে। একই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেও মোহাম্মদ আলী চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি। অথচ এমদাদুল ইসলাম দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এ দুনিয়াতে যার টাকা আছে তার কোনো কিছুর অভাব নেই। যার টাকা নেই তারই সমস্যা। এমদাদুল ইসলাম আইন মন্ত্রণালয়ের পজেটিভ মতামত জোগাড় করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে নানা কানাঘুষা চালু রয়েছে।’

বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্গের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
রাজউকের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের ব্যক্তিদের নানা পদে বসিয়ে প্রকল্পগুলো থেকে বিপুল অর্থ কমিশন নিয়েছেন প্রকৌশলী এমদাদ।

রাজউকের বিভিন্ন দফতরে অনুসন্ধান করে জানা যায়, রাজউক নির্মাণাধীন ৩টি আবাসিক প্রকল্প- পূর্বাচল নতুন শহর, উত্তরা তৃতীয় পর্ব ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রকৌশলী। এ তিন প্রকল্পের প্রথম ব্যয় নির্ধারণ ছিল ৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। কারসাজির মাধ্যমে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকায়। এই বাড়তি টাকার বড় একটি অংশ এমদাদ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের পিডি হয়ে এমদাদ নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করেছেন আকাশছোঁয়া। ৪৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাটের দাম ধরা হয়েছে ৭২ লাখ টাকায়। এমদাদের এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্তদের জন্য নির্মিতব্য এই ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ ভেস্তে যায়। তার চাকরি আছে মাত্র দুই মাস। শেষ সময়ে অবৈধভাবে আরও বিত্ত-বৈভবের মালিক হতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রকৌশলী এমদাদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top