সকল মেনু

ভোলায় জোয়ারে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: পূর্ণিমার প্রভাব ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ভোলার নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙ্গে জেলার ৫টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন। জোয়ারের পানিতে  ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরীঘাটের রাস্তা ও গ্যাংওয়ে ডুবে যাওয়ায় ফেরী চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই চলছে এ অবস্থা। ভোলার ৫টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম ভাসছে এখন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে। পানি যেন কমছেই না। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ, তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। প্লাবিত হওয়া লক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ঘর-বাড়ী পানিতে ডুবে থাকায় রান্না করতে না পারায় বহু মানুষকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। রোজার মাসে এ দুর্বিসহ জীবন যেন প্রকট আকারে ধারণ করছে। প্লাবিত এলকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ অনেকে। বিশেষ করে সদর উপজেলার ধনিয়া, কাচিয়া, ইলিশা, রাজাপুর, দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর, সৈয়দপুর, মদনপুর, লালমোন উপজেলার ধলিগৌর নগর, চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর, মাদ্রাজ, ঢালচর ও কুকরী-মুকরী এবং মনপুরা উপজেলার মনপুরা ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর বাঁধের পাড়ের মানুষগুলোর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের নাজমা আক্তার বলেন, গুপ্তিমুসি এলাকায় ঘর ছিলো, নদীতে সেই ঘর ভেঙে গেছে, এর পর বাঁধের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম, মঙ্গলবার বাঁধ ভেঙে সেই ঘরও ভেসে গেছে, এখন কোথায় যাবো, কোনো উপায় খুজে পাচ্ছিনা। লোকমান হোসেন নামের আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, ৪দিন ধরে পানির মধ্যে বসবাস করছি, এখনো সরকারি সাহায্য সহযোগীতা পাইনি। এসময় তাহের বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সঠিক সময়ে মেরামত করলে আজ আমাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন, গত বছরে ঘুর্ণিঝড় মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্ত বাধ মেরামত না করার কারণে এবং জোয়ারে চাপে বেড়ী বাধ ভেঙ্গে গেছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর মানুষ দুর্বিসহ জীবন-যাপন করলেও পর্যাপ্ত পরিমানে সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পৌছায় নি। যদিও স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাঝে নগদ টাকা এবং শুকনো খাবার বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আরো ত্রাণ সামগ্রী চেয়ে ত্রাণ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসক। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, পূর্ণিমার সৃষ্ট জোয়ারে ভোলার বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী এলাকগুলো প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের চাপ কমে গেলেই ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ী বাধ নির্মাণ করা হবে।  ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের সাহায্য সহযোগীতা করা হবে। ফেরীঘাট ডুবে থাকায় যানচলাচল বিঘ্নিত : এছাড়া ইলিশা-লক্ষ্মীপুর ফেরীঘাটের গ্যাংওয়ের রাস্তাটি সংস্কার না করায় জোয়ারের পানিতে প্রতি বারই তলিয়ে য়ায়। এতে করে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন ফেরীতে উঠতে পারছে না। গত কয়েক দিন যাবত জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে ওই রুটে ফেরি চলাচল করছে। ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরর হাটে একটি ফেরী ২ ঘণ্টায় যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। যে কারণে ফেরীর নির্ধারিত ট্রিপও বাতিল করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষসহ পরিবহন শ্রমিকরা। উভয় পাড়ে শত শত বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে। নাছির নামের ট্রাক চালক বলেন, জোয়ারের কারণে আজ কয়েক দিন যাবত ফেরী ঘাটে আটকা পড়ে আছি। ফেরীর গ্যাংওয়ে ডুবে থাকায় সঠিক সময়ে ফেরী চলাচল না করায় উভয় পড়ে দীর্ঘ জট লেগেই আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top