সকল মেনু

ডা. মনোয়ার হোসেনের রাজত্ব; লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত

লিটু সিকদার, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের  আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৫০ শয্যা  স্বাস্থ্যসেবার হাসপাতালটি ডাক্তার সংকটের কারণে গরিব-দুঃখী ও সাধারণ মানুষসহ এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত । দুজন ডাক্তার দিয়ে কোন মতে চলছে এ হাসপাতালে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম । এ বিষয়ে যেন  প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ফরিদপুর জেলা শহর হতে ৫২  কিলোমিটার বারাশিয়া নদী ঘেঁষা আলফাডাঙ্গা উপজেলাটি  । এ  হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে গত ২০০৯ সালের ২১  নভেম্বরে ৫০ শয্যা হিসেবে  উদ্বোধন করা হলেও এখন পর্যন্ত জনবলের অনুমোদন পাওয়া যায়নি । ডিজিটাল বাংলাদেশ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা থেকে আলফাডাঙ্গা উপজেলা হাসপাতালটি বঞ্চিত । সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৫০ শয্যা নতুন ভবনের ল্যাট্রিনসহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়াও হাসপাতালের আশেপাশেও নোংড়া আবর্জনায় জর্জড়িত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য সরকারী নিয়ম অনুসারে ডাক্তারের পদ ২০টি । এ হাসপাতালে  ডাক্তার আছেন মাত্র ২ জন। এর মধ্যে  নিয়মিতভাবে হাসপাতলে   ডা. নাজমুল হাসান  চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন ।  মেডিক্যাল  এসিস্ট্যাণ্ট দ্বারা কোন মতে   জোড়াতালি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে। দীর্ঘদিন যাবত  ১৭টি ডাক্তারের  পদশূন্য থাকায় এ উপজেলার এক লাখেরও  বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।  অপরদিকে এ হাসপাতালে নার্স ,অফিস সহকারী, ফার্মাসিস্ট ,ওয়ার্ডবয়, জুনিয়র মেকানিক্যাল ,নৈশপ্রহরী, সুইপার,মালী ,এবং মাঠপর্যায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে জনবল থাকার কথা ছিল  ৯০ জন । কিন্তু বর্তমানে কর্মরত   আছেন  মাত্র ৪৯ জন।যার  ফলে হাসপাতালের  স্বাস্থ্যসেবা ও  প্রশাসনিক কর্মকান্ডে চরম ব্যহত হচ্ছে । আবার ভর্তিকৃত রোগীদেরকে  নিন্মমানের খাবার পরিবেশন করার অভিযোগও উঠেছে।  সরজমিনে গিয়ে জানা যায়  ভর্তিকৃত রোগী উপজেলার টাবনি গ্রামের ছবদুল মোল্যার স্ত্রী কমেলা বেগম (৭০)  বলেন আমি ৭ দিন অসুস্থার মধ্যে  ডাক্তার এসেছিলেন মাত্র  ২ দিন । ভালো কোন ঔষধ দিচ্ছে না । খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিদিন  তিন বেলায় পাংগাস মাছ,কুমড়া ও ডাল দিচ্ছে। হিদাডাঙ্গা গ্রামের আ.আজিজের ছেলে শামচুল (৬০)  সহ একাধিক রোগীর একই অভিযোগ করে।   সব মিলিয়ে হাসপাতালটি  বেহাল দশা। হাসপাতালটি যেন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দেখার কেউ নেই। আলফাডাঙ্গা হাসপাতালে উপজেলার গরিব-দুখী পরিবারের গর্ভবতী মা ও শিশু প্রসূতির জন্য বিনামূল্যে ডিএসএফর কার্যক্রম চালু থাকলেও এ হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি ও এনেসথেশিয়া  বিভাগে কোন ডাক্তার না থাকার প্রায় প্রতিদিন এসব রোগীকে প্রসূতি করানোর জন্য আলফাডাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত   এ্যাপোলো জেনারেল হাসপাতাল,প্রগতি সার্জিক্যাল ক্লিনিকসহ বাইরে পাঠাতে হচ্ছে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষকে। এতে প্রসূতি রোগী ও তার পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে পড়তে হয় মহাবিপাকে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন  বড় স্যার ( টিএইচও) ডা. মনোয়ার হোসেনের কারণে গাইনি ডাক্তার থাকে না। গাইনি ডাক্তার  থাকার কারণে বড় স্যারের  প্রসূতি রোগী হ্রাস পায়।  ফলে  এ হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার হিসেবে  যোগদান করলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৌশলে ওই গাইনিকে  বদলি করেন । কোন এক ডায়াগষ্টিক সেন্টারের পরিচালক বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মনোয়ার হোসেন   জননী ডায়াগষ্টিক সেন্টার ( রক্ত পরীক্ষার কেন্দ্র)  সাথে ব্যবসায় পাটনার আছেন। তাই এককভাবে  ব্যবস্যাকে উন্নত করার জন্য তিনি  সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডাক্তারকে চলে যেতে বাধ্য করেন। তিনি আরো  বলেন স্বাস্থ্যসেবা  কার্যক্রম সচল রাখার পরিবর্তে স্থানীয় ক্লিনিকের অপারেশনের কাজে ব্যস্ত  থাকেন । তিনি বলেন দয়াকরে আমার নামটি পত্রিকায় প্রকাশ করবেন না। খোজ খবর নিয়ে জানা যায় বারবার বদলীর আদেশ হওয়া  সত্বেও অদৃশ্য প্রভাব খাটিয়ে ১৫ বছর ধরে একই হাসপাতালে  অবস্থান করছেন। এছাড়া এ হাসপাতালে রোগী বহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স,এক্সরের ফিল্ম নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দিনের পর দিন ।  এ হাসপাতালে আদৌও কোন  ই সি জি মেশিন  নেই। এ উপজেলার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র এ হাসপাতালটিতে নির্ভর করতে হয়। উপজেলার মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। স¦াস্থ্যসেবা নিতে আসা কুসুমদি গ্রামের শাহিদা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকার পর দুপুরে  ডাক্তার  বিশ্রামে যান, তিনি আমাকে দেখেননি । ডাক্তার সংকটের কারণে এ রকম হাজারো  শাহিদা  চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।  গ্রামের অনেক  অসহায় মানুষ অর্থাভাবে বাইরে চিকিৎসা  নিতে  না পারায় হাতুরি ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার কেউ সুচিকিৎসার অভাবে মারাও যাচ্ছে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ ও উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞান যুগে আলফাডাঙ্গা হাসপাতালটির বেহাল দশার দিকে সুদৃষ্টি দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী ।  আলফাডাঙ্গা ইউপির  চেয়ারম্যান এ.কে.এম আহাদুল হাসান  বলেন জনগনের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষে অপ্রতুল ডাক্তার  নিরসনের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাশার বলেন উপজেলা আইন শৃঙখলা মিটিং এ  বিষয়টি নিয়ে বলেছি কিন্তু কোন ফল আসেনি , তিনি আরো বলেন  এ  হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামের অসহায় মানুষ । উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান বলেন এত বড় হাসপাতাল মাত্র ২ জন ডাক্তার ভাবতে অবাগ লাগে ,অচিরেই এর ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি। আলফাডাঙ্গা শাখার মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এ্যাড. শেখ  কুবাদ হোসেন বলেন এ হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উন্নত করার জন্য দ্রুত  প্রশাসনের নজর দেওয়া জরুরী মনে করি । উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম জালাল উদ্দিন বলেন,  সার্বিক অবস্থার জন্য টিএইচও এর অবহেলা ও উদাসিনতা দায়ি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন এ হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে এমপি মহোদ্বয়সহ  উর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষকে   জানানো হয়েছে। সিভিল সার্জন সিরাজুল ইসলামের সাথে মুটোফোনে  ডাক্তার সংকটের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,আগামী আগস্ট’২০১৪ মাসে সরকার কর্তৃক সারে ৪ হাজার ডাক্তার নিয়োগ পাবে ,তখন ডাক্তার সংকটের বিষয়টি সমাধান হবে। ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ.রহমান দেশের বাইরে (লন্ডন) থাকার কারনে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) এন.কে.বি নয়নের সাথে মুঠোফোনে ডাক্তার সংকট বিষয় অবহিত করলে তিনি বলেন ইতিমধ্যে মন্ত্রী সদর দপ্তরে ডিউওলিটার পাঠানো হয়েছে এবং অনাতিবিলম্ভে ডাক্তার সংকটের বিষয়টি নিরসন হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top