সকল মেনু

বিভিন্ন সমস্যার কারণে চাঁদপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: রাস্তাঘাটের অপ্রশস্ততা, প্রয়োজনীয় জেটি ও ছাউনির অভাবে দেশের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র চাঁদপুরের প্ররানবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্থর গতি নেমে এসেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে সততা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় টালবাহানার মত বিষযগুলোও।  চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য কেন্দ্র। সারাদেশের সাথে নৌপথ, রেলপথ ও সড়ক পথের যোগাযোগ রয়েছে এ চাঁদপুরের সাথে। চাঁদপুরের যে ব্যবসায়িক ঐতিহ্য তার মূলে রয়েছে চাঁদপুরে পুরাণবাজার। যা ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই পরিচিতি পেয়ে আসছে। তখনকার সময় নদীপথ ও রেলপথই ছিলো বাণিজ্যিক মালামাল পরিবহনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। কালের আবর্তে নদী ভাঙ্গনের ফলে ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজারের বহু ব্যবসায়ী তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। মেঘনার করাল গ্রাসে হারিয়ে যায় এক সময়ের গড়ে উঠা লবণের মিলগুলো। বর্তমান সময়ে পুরাণবাজারের বাতাসা পট্টি, ডাইলা পট্টি, মসজিদ পট্টি, আড়ত পট্টি, মিয়া পট্টি, চাউল পট্টিকে কেন্দ্র করে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজারের বাণিজ্যিক ঐতিহ্য। কিন্তু যুগের পরিবর্তন হলেও উন্নয়নের তেমন ছোঁয়া লাগেনি পুরাণবাজারে। বরং নতুন নতুন সমস্যা এসে যোগ হয়েছে এর সাথে। এসবের কারণে ব্যবসায় যে গতি ফিরে আসার কথা তা আসে নি। অবশ্য পুরাণবাজার নতুনবাজার সংযোগ সেতু ও ট্রাক ঘাট প্রথার বিলুপ্তি ব্যবসায়ীদের কিচুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে।  পুরাণবাজারে যে সব মালামাল আমদানি রপ্তানি হয় তার সিংহভাগ হয় নৌপথে। নদী পথে আসা মালমাল উঠানামার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা হলো ঘাট ও পন্টুন ব্যবস্থা না থাকা। প্রয়োজনীয় ঘাট ও পন্টুনের অভাবে প্রতিনিয়ত লেবারদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাজনের গদিঘরে মালামাল আনা-নেওয়া করতে হয়। দেওয়ান ব্রাদার্সের ঘাট, ভূঁইয়ার ঘাট, মৌলভী ঘাট ও ১নং ঘাট থাকলেও মালামাল আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে যা নিতান্তই অপ্রতুল। দেখা যায় ১নং ঘাট এলাকা থেকে শুরু করে পশ্চিম বাজার দুধ হাটা সংলগ্ন সারা নদীর পাড় জুড়েই মালামাল উঠানামা করছে শ্রমিকরা। যেখানে নেই কোনো পাকা ঘাটলা ও আলোর ব্যবস্থা। অনেক সময় হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। পানিতে ভিজে নষ্ট হয় অনেক মালামাল। যদি পন্টুন স্থাপন ও ঘাট নির্মাণ করা হতো তাহলে হয়তো এ সমস্যা দেখা দিতো না। একই পরিস্থিতি চাঁদপুর পুরাণবাজার ট্রাক ঘাটেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহাম্মেদ ট্রাক ঘাট ইজারা প্রথা বাতিল করেন। ফলে এখন সরাসরি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পুরাণবাজারে অবস্থিত ট্রাক ঘাটে মালামাল উঠানামা করা হয়। ব্যবসায়ীদের মাল আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অর্থ ও সময়ের ব্যাপক সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। নামে পুরাণবাজার ট্রাক ঘাট হলেও নেই কোনো ছাউনি ব্যবস্থা। যেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মালামাল উঠানামা করানো যেতে পারে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ স্থানীয়ভাবে হাজীগঞ্জ, কচুয়া, রায়পুর, সোনাপুর, রামগঞ্জ, হাইমচরসহ বিভিন্ন স্থানের ট্রাক, ট্রলি, নসিমন, পিকআপসহ মালামাল বহনকারী গাড়ির ব্যাপক উপস্থিতিতে ট্রাকঘাটের রাস্তায় রীতিমত যানজট সৃষ্টি হয়। ট্রাক বা ট্রলি থেকে মালামাল উঠানামার ক্ষেত্রে অনেক সময় বৃষ্টির কারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওই এলাকায় স্থায়ী কোনো শেড বা ছাউনি না থাকয় মালামাল লোড-আনলোড কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অসুবিধার মাঝে পড়তে হয়। তাদেরকে রোদ, বৃষ্টি উপক্ষো করেই মালামাল উঠানামা করাসহ বিশ্রামের জন্য অন্যত্র গিয়ে বসতে হয়। অধিকাংশ সময়ই বাতাসা পট্টি ও ডাইলা পট্টির প্রবেশ মুখে এতো যানজট সৃষ্টি হয়, যা চাঁদপুর শহরের যানজটকেও হার মানায়। ওই এলাকার রাস্তার দু’ পাশের অধিকাংশ স্থানই ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় এ যানজটের সৃষ্টি। মহাজনদের গদিঘর থেকে মালামাল সংগ্রহ করতে আসা পিকআপ ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, নসিমন, রিক্সার কারণে এ স্থানে যানজট লেগে থাকে। এ স্থান দিয়ে আমদানি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মালামাল ভর্তি বস্তা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় জনচলাচলেও। কিন্তু প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাতাসা পট্টি, ডাইলা পট্টি, তামাক পট্টির অধিকাংশ দোকানদারই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশ এগিয়ে এনে রাস্তার সাথে লাগিয়ে রেখেছেন। তারপর আবার রাস্তার উপর ফেলে রাখা হয় মালামাল সমেত বস্তা। রাস্তা জুড়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার কারণে দিন দিন রাস্তার দু’ পাশ ছোট হয়ে আসছে। ফলে দেখা দিচ্ছে যানজটের মত বিপত্তিকর অবস্থা। অপরদিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় বাতাসা পট্টি, ডাইলা পট্টি, চাউলা পট্টিতে কদাকার অবস্থা। যা দিয়ে চলতে গিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। প্রতিদিনই লঞ্চযোগে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ থেকে অনেক মালামাল পুরাণবাজারে আসে এবং পুরাণবাজার থেকে লঞ্চযোগে বরিশাল, বাগেরহাট, ভোলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যায়। যদি পুরাণবাজারে স্থায়ীভাবে লঞ্চ ঘাট স্থাপন হতো তাহলে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের ব্যয়ভার অনেক লাঘব হতো। পুরানবাজারে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে বড় একটি কারণ ছিল সততা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা। কিন্তু এখন সেই বিষয়টি আর তেমনভাবে লক্ষ্য করা যায় না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীদের ঠকানো, প্রতিশ্রুত মাল না দেয়া, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেনা-পাওনা শোধ না করার কারণে দূরের ব্যবসায়ীরা এখন আর এখানে আসতে চায় না। তার উপর রয়েছে নানা কিসিমের চাঁদাবাজি। এসব বন্ধ করা গেলে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করা গেলে পুরানবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য আরো প্রসার লাভ করবে বলে স্থানীয়দের মত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top