সকল মেনু

মৌলভীবাজারে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত ফলমূলে সয়লাব

  এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার: বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো মৌসুমী ফল দেদারসে বিক্রি হচ্ছে মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন  বাজারগুলোতে। আর এসব ফল খেয়ে প্রতিদিনই   মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। গত সপ্তাহে মৌসুমী ফল আম, লিচু, কাঠাল ইত্যাদি খেয়ে  অন্তত ১৫-২০ জনের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন , প্রচন্ড গরমে ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে  মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। এতকিছুর পরও বিএসটিআই এ ব্যাপারে কোন কার্যকর ভূমিকা  গ্রহন  না করায় মানুষের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। মোবাইল টিম অভিযান চালিয়ে  বাজারের ফরমালিনযুক্ত ফল উদ্ধার করে মানুষের জীবন বাচাতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: ইকবাল আহমদ টেলিফোনে জানান,বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো এসব ফল খাওয়া আর বিষ খাওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এসব ফল খেলে ক্যান্সার হতে পারে, কিডনি ও লিভারে জটিল ব্যাধীবাসা বাধতে পারে। ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে মানুষের কিডনীর নানা রোগ হতে পারে। এতে ক্যান্সারের আশংকা বেড়ে  যায়। লিভার  প্রদাহ ও স্নায়ুরোগ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের  এসব ফল খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। তিনি বলেন, ফরমালিন থেকে মুক্তি পেতে হলে ফল কিনে এনে একটি পাত্রে পানি ঢেলে তাতে ভিনেগার বা শিরকা মিশিয়ে  ৩০ মিনিট ডুবিয়ে  রাখলে ফরমালিনের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায় তা ভুল ফরমুলা। তিনি বলেন, আমাদের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করলে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ  করলে এটা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব হতে পারে।  জেলার বৃহত্তম শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের ফলের দোকানে ক্রেতা সেজে  ফল ব্যবসায়ী রহমদ আলীর সাথে কথা বললে তিনি কিছুটা রাগের সাথে বলেন, এগুলো দেখার দায়িত্ব  আমাদের নয়। যাদের কাছ থেকে আমরা পাইকারী দামে কিনে আনি তারা ভালো জানে। জানা গেছে, অসাধু ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং ফড়িয়ারা  গাছে মুকুল আসার পর থেকে ফল পেড়ে  আনার পূর্ব পর্যন্ত ভারতীয় বিষ ইতোফেন  গ্রুপের  বাইজার, হারবেস্ট, প্রমাড  ও ক্রমপ্ল¬মেক্স, ম্যালাথান  গ্রুপের  কীটনাশক কট, টিভো, ফাইটার, ম্যানকোজের গ্রুপের  ভায়াথেন অথবা কার্বন্ডাজিন  গ্রুপের নইন পাউডার, এনটাকল, ব্যাপিস্টিন, ফোরা ও ইন্টারফলসহ ১৬ প্রকার  কীটনাশক মেশায়। এরপর ফলের পচন রোধ করতে ও টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হয়। এরপর ফলের পচন রোধ করতে ও টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হয়। বড়লেখা উপজেলার ফল ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম জানান, ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশালেও তার কোন  প্রতিকার নেই। তাই এসব ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। ফরমালিনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না দেশের জাতীয় ফল কাঠালও। বিষাক্ত ক্যামিকেল ও ফরমালিন মিশ্রিত  পানিতে চুবিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য ফলে ফরমালিন মেশানো হলেও কাঁঠাল এতদিন ছিল মুক্ত। সম্প্রতি কাঁঠালেও ফরমালিন মেশানোর কারনে ক্রেতারা হতাশায় ভোগছেন। প্রবাসী ব্যাবসায়ী রাসেল আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব ফুড বিদেশে রপ্তানী  করা হয় সেগুলোতে ফরমালিন মেশানো হয়। বিশেষ করে আম,আনারশ, নাশপাতি, আপেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। ফরমালিন মেশানোর কারণে কাঁঠাল অনেকদিন রেখে বিক্রি করে থাকে। ফরমালীন মিশিয়ে  কম পক্ষে ফলটি ১০ দিন টাটকা রাখে। তবে সেই স্বাদ আর পাওয়া যায় না। বিশেষ করে  রমজান মাসে আমের কদর বেড়ে যায়।আম পাকাতে বিষাক্ত সকল রাসায়নিক ব্যবহার করে আড়তদাররা লাভবান হচ্ছে। কারণ আমে পচন ধরছে না। বেশিদিন রেখে বিক্রি করা যাচ্ছে। প্রায়  সকল আমই ফরমালিন মিশ্রিত । ব্যবসায়ীরা ফরমালিনের বিষয় জেনেও তা বিক্রি করছে। অনেকে কিনে নিচ্ছেন আম।  মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ আজহারুল ইসলাম জানান, বর্তমান অবস্থাটা এমন যে, যেখানেই হানা দেয়া যায়, সেখানেই  ফরমালিন। ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে ক্যান্সারসহ সব ধরণের রোগ হতে পারে। সুপার শপ থেকে শুু করে ফুটপাত ব্যবসায়ী সকলেই ফরমালিন মেশানো ফল বিক্রি করছে। তিনি বলেন, ফমালিন প্রতিরোধে প্রতিরোধে  বিএসটিআইসহ সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। সর্বোপরী ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও প্রয়োজন  বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা ফল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি তারা জানিয়েছে রাজশাহীসহ যেসব এলাকা থেকে ফল আসে সেখানেই ফরমালিন মেশানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top