সকল মেনু

পুঁজিবাজারে আট মাসে সর্বনিম্ন লেনদেন

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,২০মে,ঢাকা: বছরের শুরুতে সাধারণ নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারে এক ধরনের স্থিতিবস্থা দেখা গেলেও লেনদেন আবার তলানিতে এসে ঠেকেছে। গত আট মাসের মধ্যে মঙ্গলবার সবচেয়ে কম লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই), যা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার প্রকাশ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডিএসইতে এদিন হাতবদল হয় প্রায় ১৯৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার। এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর, সেদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৮৯ কোটি টাকা।নতুন সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণার আগের মাসে লেনদেনে এই খরার জন্য দেশের অর্থনীতির ‘স্থবিরতাকে’ দায়ী করেছেন আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান। তিনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা ফেরেনি বিনিয়োগকারীদের।

“ফেব্রুয়ারির পর বাজারে একটি মন্দা ভাব দেখা দিয়েছিল। মাঝখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কারণে কিছু শেয়ারের দাম বেড়েছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি গতি না পাওয়ায় পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।”

বিভিন্ন কেলেঙ্কারির পর ব্যাংক খাত নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সন্ধিগ্ধ বলে মনে করছেন মুনিরুজ্জামান। এর পাশাপাশি কয়েকটি বড় কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়াও বিনিয়োগে প্রভাব ফেলেছে বলে তার ধারণা।

চার বছর আগে ধসের পর সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার মতো কোনো কারণ দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দিকে অভিযোগের আঙুলও তুলেছেন তিনি।

অধ্যাপক মিজান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, “গত কিছু দিনে কয়েকটি খারাপ কোম্পানি বাজার থেকে টাকা তুলেছে এবং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে, কোনো কিছুরই প্রতিকার পায়নি বিনিয়োগকারীরা।

“বাজারের গভর্নেন্স আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে।”

বাজারে যে আস্থা রাখতে পারছেন না, তার প্রকাশ ঘটল ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারী শেখ আতিক ইখতিয়ারে কথায়ও।

“শেষ কবে শেয়ার কিনেছি বা বিক্রি করেছি, তা মনে নেই। কিভাবে লেনদেন করব? সব শেয়ারেই লোকসানে আছি, যদি শেয়ার বিক্রি করি কিনব কোনটা? বাজার তো পড়েই যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

পতনের কারণ হিসেবে বেশি বেশি আইপিও এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালাকে দায়ী করেন এই বিনিয়োগকারী।

“আইপিও করতে যারা আসেন, তারা আইপিও পাওয়ার পরে বিক্রি করে দিয়ে চলে যান। পুঁজিবাজারে টাকা থাকে না, আর বাংলাদশ ব্যাংকের নীতিমালার কারণে ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করতে পারে, কিন্তু কিনতে পারছে না।”

৪ বছর আগে ধসের পর এভাবেই বিক্ষোভে নেমেছিলেন বিনিয়োগকারীরা

৪ বছর আগে ধসের পর এভাবেই বিক্ষোভে নেমেছিলেন বিনিয়োগকারীরা
২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসহ পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করে দেয়।

এতে বলা হয়, সমন্বিত পদ্ধতিতে ব্যাংক ও তার সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী কোম্পানি মিলে মোট বিনিয়োগ তার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের ৫০ শতাংশের বেশি হবে না।

ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ নাঈমের অভিযোগ বিএসইসির দিকে।

তিনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, “বাজেটকে সামনে রেখে ভীতির মাধ্যমে কম দামে শেয়ার কিনে নিচ্ছে একটি চক্র। নিয়ন্ত্রক নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”

“বাজারের এই অবস্থায় আইপিও এবং রাইট শেয়ার দেয়া বন্ধ করা উচিত,” পরামর্শ দিয়ে এর পক্ষে নাঈমের যুক্তি, “আইপিও এবং রাইট ফান্ড ক্রাইসিস তৈরি করছে।”

ফিনিক্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কাদির চৌধুরী হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, “২০১০ সালের ধসের ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুঁজিবাজার। আমি অনেক জায়গায় বলেছি, বাজারকে বাঁচাতে হলে বড় ফান্ড দরকার।”

“বাজারের কোনো গার্জিয়ান নেই, করাপটেড লোকজনের হাতে বাজার পড়েছে,” নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তারও।

মঙ্গলবার দিন শেষে ডিএসইতে সার্বিক সূচক প্রায় ১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৬৩ পয়েন্ট হয়েছে। বাছাই সূচক ডিএস-৩০ আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৯০ পয়েন্ট হয়েছে।

ডিএসইতে এদিন লেনদেনে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মধ্যে ১৩১টির দাম বেড়েছে, কমেছে ১১০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির দাম।

দেশের অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দিন শেষে সিএসই সূচক প্রায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ৮ হাজার ৪২৯ পয়েন্ট হয়েছে। তবে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা কমে ১৬ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top