সকল মেনু

জিয়ার খুনি এরশাদ; খালেদা জিয়া

 নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা, ৪ মে : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হত্যাকারী হিসেবে অভিহিত করে বিচার দাবি করেছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘এরশাদ একজন খুনি। তিনি জিয়াউর রহমান ও মঞ্জুর (মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর) খুনি। তার বিচার করতে হবে।’ এ সময় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ খুনিদের নিয়ে চলেছেন। খুনিদের উপদেষ্টা বানিয়েছেন। সে কী উপদেশ দেবে?’

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে রোববার বিকেলে বিএনপি আয়োজিত গণ-অনশনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেশব্যাপী অব্যাহত খুন-গুম-অপহরণ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

হুঁশিয়ারি
সরকারের প্রতি কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অবশ্যই কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ, অনশনের মাধ্যমে কাজ না হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আশা করি, সরকার আমাদের বাধ্য করবে না। এর আগেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।’

দেশ মৃত্যু উপত্যকায়
নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ করে হত্যাকাণ্ডের মতো সারা দেশেই এ ধরনের ঘটনা চলছে- দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘সারা দেশ আজ মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। সবখানে শুধু হাহাকার-কান্না। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দিল। লাশ যেন না পাওয়া যায়, সেজন্য ইট-বালি দিয়ে ডুবিয়ে রাখা হলো।’

শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, রাজশাহী, ফেনী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, বগুড়াসহ সারা বাংলাদেশই আজ ‘মৃত্যুকূপে’ পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার সঙ্গে সরকারি দলের লোকজন জড়িত। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন কোথায়, মানুষ জানতে চায়। কেন সাত দিন পর তার বাড়িতে তল্লাশি করা হলো?’

অবৈধ সরকার, অবৈধ কর্মকাণ্ড
বর্তমান সরকারকে আবারও ‘অবৈধ’ সরকার আখ্যা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের কখনো সরকার বলব না। এরা অবৈধ, কারণ তারা জনগণের ভোটের নির্বাচিত নয়। সেজন্য বর্তমানের অবৈধ সরকারের অধীনে অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে।’

তিনি বলেন, এসব ‘অবৈধ’ কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো সরকারদলীয় সংগঠনগুলো জড়িত। এদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ তারাও একই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত।’

শুধু রক্ত
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকেও ভালোবাসে না। তারা শুধু রক্ত আর রক্ত চায়। তারা যত দিন ক্ষমতায় থাকবে রক্ত বাড়তে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো বিএনপির কর্তব্য। সেজন্য বিএনপি ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থেকে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেবে।’

বেগম জিয়া বলেন, ‘বিএনপি খুন ও জঙ্গিদের সাথে জড়িত না। যুবলীগের নেতারাই জঙ্গি ছিনতাই করেছে। কাজেই আওয়ামী লীগ জঙ্গি ও গুমের সঙ্গে জড়িত। শায়খ আবদুর রহমান মির্জা আযমের আত্মীয়, এটা সবাই জানে।’

একদিকে শাসন অন্যদিকে শোষণ
ক্ষমতাসীনরা একদলীয়ভাবে দেশ চালাচ্ছে- অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা একদিকে শাসন করছে, অন্যদিকে শোষণ করছে। সেজন্য নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় সুশীল সমাজ তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাতে কর্মসূচি করতে চাইলে সরকার অস্বস্তি বোধ করেছে। তাদের দাঁড়াতে দেয়নি।’

সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান
সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য দেশের সব নাগরিক, সুশীল সমাজের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘কে বড়, কে ছোট- সেটা বড় কথা নয়। গণতন্ত্র উদ্ধারে কর্মসূচি দেব। সেখানে বিএনপি বড় দল, অন্য সব ছোট দল- সেটি বিবেচ্য হবে না। দেশ বাঁচাতে রাস্তায় নামতে হবে।’

খুন-গুমে সরকার জড়িত
খুন-গুমের সঙ্গে সরকার জড়িত দাবি করে প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুন-গুমের ঘটনায় সরকার ও তার দলের লোকেরা জড়িত, এটা পরিষ্কার। তারা গুম করে অন্যের ওপর দোষ চাপায়।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাবকে সন্ত্রাস দমনে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গড়া হলেও এখন দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে এ প্রতিষ্ঠানটিতে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীরও একই পরিস্থিতি হয়েছে। এ বাহিনীতে একটি বিশেষ এলাকার লোকজন গুরুত্ব পাচ্ছে। সেজন্য তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ওই বিশেষ এলাকার পুলিশের প্রতি নজর আছে। আওয়ামী লীগ সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবে না। কত মানুষকে খুন-গুম করা হয়েছে, সবকিছুর জবাব দিতে হবে।’

রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে
খালেদা জিয়া বলেন, ‘অনেক মার খেয়েছি। অত্যাচার-জুলুম সহ্য করেছি। আর চোখের পানি নয়। এবার পানি মুছে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।’

অনশন কর্মসূচিতে জলকামানসহ পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির জন্য সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এসব কামান-টামান এনে, হত্যা-গুম করে আন্দোলন থামানো যাবে না। জলকামান একদিন জনগণের সঙ্গে একাকার হয়ে অন্যদিকে ঘুরে যাবে।’

আহ্বান
আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি ফের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সময়ের দিকে চেয়ে আছি। দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেখানে সব দল অংশ নিতে পারবে। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, তাহলে গণতন্ত্রের স্বার্থে ব্যবস্থা নিন।’

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘চামচারা যতই নাচানাচি করে বলুক তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে, কিন্তু সে স্বপ্ন ভুলে যান। এরা কখনো কোনো ভোটে জিততে পারেনি, এরা এখন নৌকায় উঠে বিনা ভোটে সরকারের মন্ত্রী হয়েছে।’

প্রধানন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবেন আর অন্য দেশের গোলামি করবেন, তা হবে না।  আপনারা তো দাস নন। আপনারা হলেন কৃতদাস। এজন্য আপনাদের প্রভুদের কথা বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এর আগে সকাল সোয়া ৯টায় বিএনপির গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল ৫টায় অনশন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা পৌনে ৬টা বেজে যায়।

গণ-অনশনের এক পর্যায়ে তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের গুম হয়ে যাওয়া নেতা তরিকুল ইসলাম টিটুর মা হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার সন্তানকে ফেরত চান। মিরপুরের গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা রাশেদের স্ত্রী মুন্না কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সরকারের কাছে তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন।

তারেকের সংহতি প্রকাশ
বিএনপির গণ-অনশনে সংহতি জানান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে এক টেলিফোন বার্তায় কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে অনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, এম কে আনোয়ার, ড. আবদুল মঈন খান, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ব্রিগে. জে. (অব.) হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ড. ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।

এ ছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিকল্পধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ১৯ দলের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য ডা. রেদওয়ান উল্লাহ সাহিদী, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা ইছহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. সৈয়দ মো. ইবরাহিম বীর প্রতীক, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল মোবিন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শামীমা আকতার শাম্মী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম ওবায়দুল হক নাসির, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক শাহ নেসারুল হক প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top