সকল মেনু

নেই মাঠে বিএনপির নেতারা

 রেজা মাহমুদ, ঢাকা, ২৮ এপ্রিল : নির্বাচন পূর্বাপর সময়ে জোরালো দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনীতির মাঠে নেই বিএনপির অন্তত একডজনেরও বেশি প্রভাবশালী নেতা। মামলা, গ্রেফতার আতঙ্ক, বয়স বেড়ে যাওয়া ও দলের সিদ্ধান্তহীনতায় এক প্রকার ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা নিজেদেরকে নিয়ে গেছেন দৃশ্যের আড়ালে। জানা গেছে, এ দলে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ছাড়াও আছেন উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন যুগ্ম মহাসচিব। তবে, দলীয় সূত্রগুলোর দাবি সরকারের মামলা-নির্যাতন থেকে দূরে থাকতেই হয়তোবা তারা এ ধরনের কৌশল নিয়েছেন।বিএনপি চেয়ারপারসন দল গুছিয়ে আন্দোলনের যাওয়ার ঘোষনা দিলেও সে প্রক্রিয়ায় চলছে কচ্ছপ গতি। কেন্দ্র পূনর্গঠন অগ্রাধিকার দেয়ার বদলে মাঠ পর্যায়ে একের পর এক কমিটি ভেঙে দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতভেদ ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। এতে দলটির পূনর্গঠন প্রক্রিয়ায় যেমন দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে, তেমনি সরকার বিরোধী আন্দোলনের ক্ষন নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।দলের এমন আগাছোলো পরিস্থিতির সঙ্গে যোগ হয়েছে শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা এবং যেকোনো সময়ে গ্রেফতারের ঝুঁকি। অবস্থা যখন এমন, তখন উত্তাপহীন রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেদের অনেকটা পর্দার অন্তরালে নিয়ে গেছেন কেউ কেউ। এ কারণে সোমবারের বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচিতেও ছিলেন না এসব প্রভাবশালী নেতা।
দলের চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের নামে ‘মিথ্যা মামলা’ এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ খুন ও গুমের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা নেই।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘আসলে বাস্তবতা বুঝতে হবে। অনেক স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের শীর্ষ নেতাদের বয়স হয়ে গেছে। তবে তারা এখনো প্রয়োজন অনুযায়ী সক্রিয় আছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে সবার সামনে আসা হয়না। একই প্রোগ্রামে একসঙ্গে সবার যাওয়াও হয়ে ওঠে না।’তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর কমিটি দ্রুত করতে না পারা দলের দুর্বলতা এটা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই। মহানগরকে দল সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। যত দ্রুত পূনর্গঠন করা যায়, ততই দল শক্তিশালী হবে দল।’ বিএনপি চেয়াপারসন এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে বলেও জানান তিনি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী নেতা মওদুদ আহমেদ দলীয় কর্মকান্ডে এখন আর আগের মতো সক্রিয় নন। একাধিক মামলায় কারাভোগের পর গণমাধ্যমের সম্মুখেও তিনি খুব একটা আসছেন না। প্রেসক্লাবভিত্তিক অনুষ্ঠানেও তিনি আগের মতো সক্রিয়তা নেই। তিস্তা লংমার্চেও ছিলেন না তিনি।
জানতে চাইলে মওদুদ আহমেদ হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘আমি কোনো কথা বলতে চাই না। আর গণমাধ্যমে কোনো ধরনের সাক্ষাৎকারও দিতে চাই না। কেন দেব? যে দেশে কথা বললে গ্রেফতার হতে হয়। সেখানে বলার কি আছে?’
শুধু মওদুদ আহমেদই নয় দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য অনেক দিন ধরেই দলীয় কর্মকান্ডে নেই। তিনি এম শামছুল ইসলাম। এক সময় সক্রিয় এ নেতা এখন একেবারেই দৃশ্যের আড়ালে চলে গেছেন। এমনকি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অনুপস্থিত থাকেন তিনি। স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা এম কে আনোয়ার কারাভোগের পর নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। বয়সের ভারেও অনেকটা ন্যুজ তিনি।একই অবস্থা আর এ গনি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খানের। আর সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে। দলের প্রভাবশালী এ নেতার ভবিষ্যত কি তা বলতে পারে শুধু ভবিষ্যতই! এদিকে বর্তমান ৩৪ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে প্রভাবশালী উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী ফালু, মুশফিকর রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, আবদুল মান্নান একেবারেই আড়ালে রয়েছেন। একই অবস্থা ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এয়ার ভাইস মার্শাল(অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলুসহ বেশ কিছু শীর্ষ নেতার। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, শুধু মামলা আর গ্রেফতার এড়াতে নয়, দলের মধ্যে গ্রুপিং আর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বেও বেশিরভাগ নেতা নিজেদের স্পটলাইটের বাইরে নিয়ে এসেছেন। যে কারনে দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষ করে দীর্ঘ বিরতির পর দলটির তিস্তা লংমার্চের মতো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে শীর্ষনেতাদের উপস্থিতি নিয়ে হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা।ওই কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান। এছাড়া চার ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শামসুজ্জামান দুদু ও আহমেদ আজম খান উপস্থিত ছিলেন।সূত্র মতে, বিএনপির বেশ কিছু নেতা অনেক আগেই দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিরাপদ দুরত্ব রাখছেন। উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী ফালু, মুশফিকর রহমান অন্যতম। তবে যারা সক্রিয় ছিলেন, তারাও দলের কার্যক্রমে খুশি নন। তারা ঢাকা মহানগর কমিটিসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে দ্রুত পূনর্গঠনের আওতায় আনার পরামর্শ দিলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। আবার শ্রমিক দলের কাউন্সিল খুব জাঁকজমকভাবে শুরু করলেও নতুন কমিটি করা সম্ভব হয়নি। দলের মধ্যে বিভেদ চরম আকার ধারন করায় সব ক্ষেত্রেই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ অবস্থায় দলটির ভবিষ্যত নিয়েও অস্বস্তি¡তে আছেন কোনো কোনো নেতা।দলের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজেদের প্রায় নিস্ক্রিয় করে রেখেছেন এমন দুইজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, দল যোগ্য নেতাদের মতামত নিচ্ছে না। এমনকি যারা নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দল তাদের অভিজ্ঞতারও যথাযথ প্রয়োগ করতে পারছে না। সাংগঠনিক পূনর্গঠন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে পরিকল্পনাহীনভাবে এগাচ্ছে বিএনপি। সময়ের প্রয়োজনেই এখন তরুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে না পারলে ভবিষ্যত সরকার বিরোধী আন্দোলনে আবারো হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন ওই দুই নেতা।তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা এ্যাড. আহমদ আযম খান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, দল গোছানো এবং কর্মসূচি একই সঙ্গে চলছে। একটু সময় লাগলেও এতে হতাশ নই। তিস্তার মতো আরো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেখানে শীর্ষ নেতারা উপস্থিতও থাকবেন।

তিনি বলেন, দলের নিস্ক্রিয় নেতার সংখ্যা নগণ্য। তবে চেয়ারপারসন এককজনকে একেক রকম দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এজন্য সময়ক্ষেত্রে অনেককে কম দেখা যায়। তাছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়. আমানউল্লাহ আমানসহ অনেক নেতা এখনও কারাগারে আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top