সকল মেনু

অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন;উভয় তীরে ভাঙনের আশংকা

 এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার,১৮ এপ্রিল: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনু নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। অন্যদিকে, অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর উভয় তীরে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন । নানকার ভুমি অফিসের তহসিলদাকে মাসয়োরা দিয়ে চলছে এই অবৈধ বালু ব্যবসা বলে জানান বালু উত্তোলনকারীরা। এ নিয়ে এলাকাবাসি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, দীর্ঘ ৮/১০ মাস ধরে মনু নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সদর উপজেলার কামালপুর হতে বেকামুড়া পর্যন্ত প্রায় ১০কিলোমিটার এলাকা থেকে প্রতিদিন ৪০/৬০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হয়। মনু নদীর তীরবর্তী  কয়েকটি এলাকার প্রায় ৫ একর জায়গা নিয়ে বালু মহাল করা হচ্ছে। সেখান থেকে তা  ট্রাক যোগে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধবালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হলেও সে ব্যাপারে আইনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তহসিলদার রাধা বিনোদ পাল বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসীর কয়েকজন। সে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে যাদের ধারা টাকা উত্তোলন করা হয়। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেল স্থানীয় সাহেদ মেম্বার, বাছিত মিয়া, রাশিদ মিয়া, কয়েছ মিয়ার নেতৃত্বে তহসীলদার তার অপর্কম চালিয়ে যাচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, তহসীলদারকে মাসোয়ারা দিয়েই তারা বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছেন। নানকার ভুমি অফিসে কর্মরত অনেকেই বলেন, তহসীলদার এমএলএসএস নুনু মিয়াকে দিয়ে বিগত ১মাস পূর্বে ৮৫ হাজার টাকা কাজির বাজারের খাস কালেকশন করান। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারের তহবিলে সেই টাকাটা জমা দেন নি অফিসে গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বাজার ফাইলে দেখা যায়। রাধা বাবু সরকারের একটি ৩০ একরের পুকুরের মাছ নিজে বিক্রি করে টাকা আৎসাত করেন বলে অফিস সূত্রে জানা যায়। গত ১৬ এপ্রিল পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে এলাকাবাসীর দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। আর এই সংঘর্ষ তহসীলদারেরই সৃষ্টি বলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা এই প্রতিবেদকে জানান।
সমাজকল্যান মন্ত্রীর নাম বিক্রি করে তহসীলদারের যোগসাজশে স্থানীয় সাহেদ মেম্বার, বাছিত মিয়া, রাশিদ মিয়া, কয়েছ মিয়া নিয়মনীনিতর তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপটে বালু উত্তোলণ করতে ৫ টি ড্রেজার মেশিন ও ১৫ টি ইঞ্জিন নৌকা ও শতাধিক শ্রমিক  দিয়ে সরকারকে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন সেখান থেকে ২/৩ লক্ষাধিক ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দ্রুত বালু উত্তোলন, হস্তান্তর ও এলাকাবাসীর বাধা এড়াতে একটি ড্রেজার মেশিনে  প্রায়  ৫ হাজার ফুট ধারণ কয়েকটি নৌকা ও ২০ জন করে শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন।  এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলভীবাজার, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মৌলভীবাজার বরাবরে তিনটি অভিযোগ প্রদান করেন এস,টি,পি করিম, আবুল হোসেন ও এলাকাবাসী। অবৈধ বালু উত্তোলনে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব, অপরদিকে নিজের বাসস্থান হারানোর ভয়ে কাঁদছে সেখানকার প্রায় চারশতাধিক পরিবার। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন বালু উত্তোলন বন্দের জন্য  উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছেন, এরপরও বন্দ হচ্ছেনা বালু উত্তোলন কাজ। বরং উপজেলা প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকায় এলাকাবাসীর জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ তহসীলদার ঘটনাস্থল থেকে ছোট একটি ড্রেজার মেশিন ও উত্তোলনকৃত বালি জব্দ করেন। নানকার ভূমি অফিসের তহসিলদার রাধা বিনোদ পাল বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে বালি, একটি ড্রেজার মেশিন আটক করে স্থানীয় দুইব্যক্তির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীই নন, প্রশাসন, প্রশাসনের কর্তা নামধারী অনেক সুযোগ সন্ধানীও এ অপকর্মে জড়িত। এভাবে বালু উত্তোলন কাজ অব্যাহত থাকলে যে  কোন সময় আইনশংখলার অবনতি ঘটতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন। এছাড়া বাধের পাশে বাসস্থান রক্ষা ও বালু উত্তোলন বন্দ করতে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খাঁন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। স্থানীয় কেউ আমাকে অবগত করেনি। অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হলে প্রকৃত দোষিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি সরকারী অনুমতি ছাড়া বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ্য বালূ উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ড্রেজার মেশিন ও উত্তোলনকৃত বালি জব্দ করা হয়েছে। যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য তহসীলদার রাধা বিনোদ পালের বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে কিন্তু অপর্কম করে বাসা বানিয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top