সকল মেনু

র্শীষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম গন-পিঠুনিতে নিহত

 মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাঘমারা এলাকার বহুল আলোচিত নন্দরানী চা-বাগানের জোড়া হত্যা, ছাত্রলীগ কর্মী ও চিহ্নিত র্শীষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম চাঁদা আনতে গিয়ে গন-পিঠুনিতে নিহত হয়ে ছিল। আভ্যন্তরীন বিরোধ ও চাঁদা আদায়ের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় কমলগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম কুমড়াকাপন এলাকার শ্রীনিবাস মোদকের বাড়ির সামনে ইব্রাহীমকে আহত করার সংবাদ পেয়ে তার সহযোগীরা ভানুগাছ বাজারের একটি বাসা ও দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। ইব্রাহীমের সহযোগীরা ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস মোদককে বিবস্ত্র করে মারপিট করে ভানুগাছ বাজারের একটি দোকানে তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় ২ ঘন্টা পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে যায়। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাল্টা হামলার আশংকায় অনেকে বাসা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় র্শীষ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীমের বাবা মজনু মিয়া বাদি হয়ে সোমবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় র্শীষ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীমের নির্যাতনের স্বীকার শ্রীনিবাস মোদক (৫৫) নামে একজন ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, কমলগঞ্জে ত্রাস, বহুল আলোচিত নন্দরানী চা-বাগানের জোড়া হত্যা, হামলা, নারী-নির্যাতন, ধর্ষনসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত র্শীষ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীম মিয়া (৩৩) এলাকায় ব্যাপক আলোচিত ও বিভিন্ন মামলার আসামী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ফলে ইব্রাহীমের নাম শুনলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় ব্যক্তিবর্গের কাজে ব্যবহৃত হয়ে ও দলের নাম ভাঙিয়ে ধাপটের সঙ্গে চলাফেরা করে ও তার সহযোগীদের নিয়ে বৃহৎ একটি গ্রুপের সৃষ্টি করে। তারা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের সামনে মদ, গাজা, ইয়াবা ব্যবসা, কাঠ পাচার ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো। তার ভয়ে এলাকাবাসী সবসময়ন আতংকিত থাকতে হতো। সম্প্রতি গ্রুপে আভ্যন্তরিন বিরোধ দেখা দেয়। রোববার রাতেও কমলগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম কুমড়াকাপন গ্রামের ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস মোদকের বাড়িতে চাঁদা আনতে যায় ইব্রাহীম। তখন চাঁদা আদায়ে বাঁধা দিলে এলাকারাসীর সাথে শুরু হয় বাকবিতন্ডা এবং এক পর্যায়ে এলাকাবাসী বেদড়ক মারপিট ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে র্শীষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীমকে। তাকে তার স্বজনরা দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ২টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কমলগঞ্জের র্শীষ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীমের মাথায়, ডান ও বাম হাতের পেছনে এবং পিঠের দিকে দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ইব্রাহীম কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের রাজমিস্ত্রী মজনু মিয়ার ছেলে। সে কমলগঞ্জ গণ মহা বিদ্যালয়ের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র এবং জেলা প্রজন্ম লীগের সদস্য ছিল। ইব্রাহীমের উপর হামলার ঘটনার সংবাদ পেয়ে ইব্রাহীমের সহযোগীরা অতর্কিতভাবে ভানুগাছ চৌমুহনায় আজহার এন্টারপ্রাইজ, পাবেল ডট কম ও কমলগঞ্জ গণ মহা বিদ্যালয়ের প্রভাষক ফজলুর রহমানের বাসায় হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় হামলাকারীরা ৪টি মোটর সাইকেল, আসবাবপত্র, দোকানের কম্পিউটারসহ ব্যাপক মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময়ে ইব্রাহীমের সহযোগীরা কুমড়াকাপন এলাকার বাসা থেকে ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস মোদক (৫৫)-কে বিবস্ত্র (উলঙ্গ) করে মারপিট করে ভানুগাছ বাজারের একটি দোকানে তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় ২ ঘন্টা পর পুলিশ ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস মোদককে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ থানার নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে যায়। ভানুগাছ বাজারের আতংকিত ব্যবসায়ীরা এ সময় দোকনপাঠ বন্ধ করে চলে যায়। ঘটনার পর পরই এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: আশরাফুল ইসলাম, কমলগঞ্জ থানার ওসি মো: এনামুল হক সহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।
এদিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত র্শীষ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীমের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে কমলগঞ্জের বালিগাঁও গ্রামে নিয়ে আসে। বিকেল সাড়ে ৫টায় বালিগাঁও শাহী ঈদগাহ মাঠে তার নামাজের জানাযা শেষে সন্ধ্যায় স্থানীয় গরম শাহ’র মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এ ঘটনায় নিহত র্শীষ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীমের পিতা রাজমিস্ত্রী মজনু মিয়া বাদী হয়ে গত সোমবার রাতে ১৮ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন (মামলা নং ১১, তাং ১৪/০৪/২০১৪ইং)। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিরোধ মীমাংসার জন্য ডেকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের ধারা ইব্রাহীমকে খুন করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ২ জন জনপ্রতিনিধিকেও হয়রানী করার জন্য আসামী করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার এসআই চম্পক দাম জানান, এই মামলায় পুলিশ ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ী শ্রীনিবাস মোদক (৫৫) নামে এক এজাহারভূক্ত আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি মো: এনামুল হক বলেন, নিহত ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় দ্রুত বিচার আইন, মারপিট ও গাছচুরির ৩টি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানা ও আদালতে অসংখ্য মামলা রয়েছে।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইব্রাহীম হত্যা মামলায় একজনকে পুলিশ আটক করেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ মামলার প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারে সর্বাতœক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে র্শীষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহীম গণপিটুনীতে নিহত হওয়ায় এলাকায় মিষ্টি বিতরনসহ সারা উপজেলাবাসীর মধ্যে স্বস্তী ফিরে এসেছে বলে এলাকাবাসী জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকজন জানান, ইব্রাহীমের উৎপত্তি যে রকম নিস্পতিও হয়েছে ঠিক সেই রকম। তবে কাউকে খুন করা কারো কাম্য নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top