সকল মেনু

ভোটাধিকার হরণের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন : রিজভী

ঢাকা, ৩১ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বোমা, বুলেট ও বেয়নটের সাহায্যে র‌্যাব-পুলিশসহ প্রশাসন ও সরকারি দল সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার হরণের এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকায় নারকীয় হিংস্রতার বিস্তার লাভ করেছে। কেন্দ্র দখলের হিড়িক পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিরোধী প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, মাইক ভাংচুর, ভোটকেন্দ্র দখল, আগের রাতে এবং সোমবার সকাল থেকে ভুয়া ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরা, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধী দলের এজেন্টদের বিতাড়িত করার মহাযজ্ঞ চলছে।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, এজেন্টদের ছবি ও ঠিকানা দেখে পুলিশ-র‌্যাব বাড়িতে বাড়িতে হুমকি, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান, সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর অনুকূলে বান্ডিল বান্ডিল ব্যালট পেপার একসঙ্গে সিল মারা মহাসমারোহে চলছে।

তিনি বলেন, এভাবে শাসক দল ভোটারদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নির্বাচনী এলাকার মহল্লায়-মহল্লায়, পাড়ায়-পাড়ায় রক্ত ঝরছে, গ্রামের পর গ্রাম আক্রান্ত, বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস এবং কর্মীদের বাড়িঘর ধুলিস্যাৎ কিম্বা ভস্মীভূত।

যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী গু-াদের আক্রমণে নির্বাচনের দিন খুন হচ্ছে বিরোধী নেতাকর্মীরা। তাদের সন্ত্রাস ও সহিংসতায় শিউরে উঠেছে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, মানুষের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসের এই চরম অভিযানে গোটা জাতি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, রংধনুর মতো নানা রঙে রঙ ছড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী একেক বার একেক কথা বলে একেক ধরনের রঙ ধারণ করছেন। সবকিছু গ্রাস করে নিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন- যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারে নাকি তিনি প্রস্তুত।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রস্তুতির কথা শুনলে গোটা জাতিই বিচলিত হয়ে উঠে। তার অনেক ত্যাগের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেই বোঝা যাবে তার ত্যাগ স্বীকােেরর মাত্রা।

তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারির স্বয়ংক্রিয় নির্বাচন করে সরকার দেশে-বিদেশে যে হাসির খোরাক হয়েছে সেটিকে কাটানোর জন্য আমরা ভেবেছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো বাধা দেবে না, নিজেরা সংযত থাকবে, অন্তত নির্বাচন কমিশন একটা বাহ্যিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। কিন্তু আমাদের কল্পনার বাইরে সরকারি দল ও তাদের গু-ারা আপামর সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

রিজভী বলেন, নিজেদের গণতন্ত্রের মুখোশকে নিজেরাই ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে দেখালো, তাদের ক্ষমতার লোভ কতো বর্বর, নৃশংস ও নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করতে পারে। তাই উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপেও ভোট ডাকাতির উপরই তাদের নির্ভর করতে হলো।

তিনি বলেন, শাসক দল ও নির্বাচন কমিশনের মিলিত চক্রটি উপজেলা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির বন্দোবস্ত করেছে। কারণ ন্যায় ও অবাধ নির্বাচনের অঙ্গীকার নিয়ে ইসির কোনো কায়কারবার নেই। নির্বাচন নিয়ে অবৈধ সরকারের সন্ত্রাসীদের খোলাখুলি গু-ামির সাফাই গাওয়ানোর জন্যই নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

রিজভী বলেন, সুতরাং প্রভুর অন্নে পালিত ইসি তো আর কোনো কিছু দ্বারাই চালিত হতে পারে না। সংবিধান তাদের যতোই ক্ষমতা দিক সেটিকে তারা পরোয়া করে না। সুতরাং পুরোপুরি ডাকাতি ও জালিয়াতির ওপর সাজানো এই উপজেলা নির্বাচন সরকারি দলের পরিকল্পনা মতো হরেক রকম অশুভ কারসাজিতে সামিল হতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। নইলে সকল সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে ফেলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী বলতে পারেন দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে যে, দলটি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে এসেছে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিরত অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারকে সবাই জানতো তিনি বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের জবরদস্ত সমর্থক। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের পর সবাই তার কাছ থেকে সব নিরপেক্ষতা আশা করেছিল। কিন্তু কথায় বলে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।

রিজভী বলেন, উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন কিনা তা তার ব্যাখা স্বয়ং ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারই দিতে পারবেন।

তিনি বলেন,  বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। নির্বাচনে দলের কিছু নেতাকর্মী এবং বিএনপির অনুসারী স্বতন্ত্র ব্যক্তিকেও বিএনপি সমর্থন করছে- এটাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান। সুতরাং আওয়ামী সরকারের এ ধরনের কলাগাছ মার্কা নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো জাতীয় রাজনৈতিক নির্বাচন কখনোই করবে না।

রিজভী বলেন, ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার বক্তব্য। তার এই বক্তব্য কোনো সৎ, নিরপেক্ষ, রিজু, স্বাধীন, সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হতে পারে না। এটি পরভৃত্যের গ্লানি যাদেরকে কাতর করে না সেই সমস্ত শিকড়হীন, শূন্যে ভাসমান প্যারাসাইট ও অরকিডদেরই মানায়।

তিনি বলেন, বিরোধী দল সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারেরই বক্তব্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বা পল্টনে দিলে খুব বাহাবা পেতেন। ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের মতো একই ভাষায় একই বাক্যে আওয়ামী নেতারাও প্রতিদিন বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।

রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলার নির্বাচন চিত্র তুলে ধরেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top