সকল মেনু

নীলনকশা বাস্তবায়নের ভয়াল রাত

ঢাকা, ২৫ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ১৯৭১ সালের এদিন ছিল বৃহস্পতিবার। লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিবসটির ভোর থেকেই অসংখ্য মিছিল সারা শহর প্রদক্ষিণ করতে থাকে। মিছিলের চরিত্র ছিল ভিন্নরূপ। মিছিলকারী সবার হাতেই ছিল নানারকম দেশি অস্ত্র। মূলত আগের দিন থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, আজ কিছু একটা ঘটবে।

এদিন বেলা ১১টায় সেনাবাহিনীর একটা হেলিকপ্টারে মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এবং জেনারেল ওমর রংপুর গেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে গণহত্যার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা রংপুর ত্যাগ করেন। রংপুর থেকে সোজা রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন শেষে বিকেলে ঢাকায় ফেরেন।

এদিকে সর্বত্র চাউর হয়ে যায়, ইয়াহিয়ার প্রধান সাহায্যকারী উপদেষ্টা এম এম আহামদ গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গোপনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া করাচির উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর ইয়াহিয়ার আরেক উপদেষ্টা এ কে ব্রোহীও ঢাকা ত্যাগ করেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থমথমে রূপ ধারণ করে। নীলনকশা বাস্তবায়নের ভয়াল রাত ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকে।

দুপুর ১২টায় দলবলসহ ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্টে চলে যাওয়ার খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খোন্দকার মোশতাক আহমেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, শেখ আব্দুল আজিজ, আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, গাজী গোলাম মোস্তফা, খাজা আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, আবদুস সামাদ আজাদ, মতিউর রহমান, মশিউর রহমান, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ জেলা ও এলাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনার নির্দেশ দেন তিনি।

তখন নেতাদের প্রত্যেকেই নেতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি আমাদের বিদায় করছেন। কিন্তু আপনি কী করবেন? আপনি কোথায় যাবেন?’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানি আজই তারা ক্র্যাকডাউন করবে। তবুও আমি এখানেই থাকব। কারণ, ওরা যদি আমাকে না পায়, তাহলে ঢাকা শহরকে ওরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে। তা ছাড়া আমি নীতিগতভাবে মনে করি, আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নির্বাচিত নেতা। আমার পক্ষে পলায়ন করা সম্ভবপর নয়।’

একজন বললেন, ‘ওরা তো আপনাকে হত্যা করবে।’ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে হত্যা করে লাভ নাই। ওরা তো বারবার আমাকে কারাগারে নিয়েছে। আমাকে নির্যাতন করেছে। ওদের লাভ হয় নাই। আমাকে হত্যা করেও ওদের লাভ হবে না। কারণ আমার মতো লক্ষ মুজিবের জন্ম হবে বাংলাদেশে।’

রাত ১২টায় মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করল ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। শুরু হলো বাঙালি নিধনযজ্ঞ তথা গণহত্যা। সে জন্যই ২৫ মার্চ বাঙালির ইতিহাসের কালরাত। নিরস্ত্র-নিরপরাধ বাঙালির ওপর জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী পাকিস্তান রাষ্ট্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top