সকল মেনু

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার চাঙ্গা

ঢাকা, ২৩ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : রিকন্ডিশন্ড বা একবার ব্যবহৃত গাড়ি আমদানি বেড়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ধস নামার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বরে) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে ৯৮৬টি বা ২৬ শতাংশ। গাড়ি আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পরিবহনে নিয়োজিত বিশেষায়িত জাহাজ আসাও দ্বিগুণ হয়েছে। আগে দুটি জাহাজ চলাচল করলেও এখন চারটি জাহাজে চলছে জাপান থেকে গাড়ি পরিবহন।

গাড়ি আমদানি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে রিকন্ডশিন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের মূল্য কমায় প্রতি গাড়ি আমরা আগের চেয়ে দুই থেকে তিন হাজার ডলার কমে ক্রয় করতে পারছি। ফলে প্রচুর গাড়ি দেশে আসছে। এর সঙ্গে টাকার মান বাড়ায় বাড়তি সুবিধা যোগ হয়েছে।’

গাড়ি কেনার এখন ‘ভরা মৌসুম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো দামে ক্রেতার এখন গাড়ি কিনতে পারছেন। ফলে আমাদের বিক্রিও বেশ ভালোভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয় ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সংশোধিত এসআরও জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।’ এর পর থেকেই গাড়ির দাম আরো কমে আসবে বলেও মত দেন এই গাড়ি ব্যবসায়ী।

বারভিডা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে মোট রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে ৩৩ হাজার ১৭৮ ইউনিট। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩২ হাজার ২২৫ ইউনিট, ২০১০-১১ অর্থবছরে ধস নেমে আমদানির পরিমাণ ১৯ হাজার ৮২৩ ইউনিটে নেমে আসে। ২০১১-১২ অর্থবছরে গাড়ি ব্যবসায় রেকর্ড ধস নামে। সেই বছর গাড়ি আমদানি হয় মাত্র ৯ হাজার ৫৮৮ ইউনিট। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা আরো কমে সাত হাজার ৩৫৩ ইউনিটে নামে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয় চার হাজার ৭২৪ ইউনিট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ি আসে নভেম্বর মাসে এক হাজার ৩৮৮ ইউনিট। সবচেয়ে কম ছিল আগস্ট মাসে ৪১৫ ইউনিট।

গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত অর্থবছর মাত্র দুটি বিশেষায়িত গাড়িবাহী জাহাজ দেশে আসত। জাহাজগুলো হলো এভারেট শিপিংয়ের ‘স্প্রিং স্কাই’ ও এনওয়াইকে লাইনসের ‘এশিয়ান লিডার’। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে নতুন দুটি রো রো জাহাজ ‘মালাক্কা হাইওয়ে’ ‘গোল্ডেন ফ্যান’ যুক্ত হয়েছে এই বহরে। ফলে প্রতি মাসে মোট চারটি গাড়িবাহী জাহাজ দেশে আসছে।

যুক্ত হওয়া নতুন সার্ভিস জাপানভিত্তিক শিপিং কম্পানি ‘কে’ লাইনের মহাব্যবস্থাপক সাহেদ সারোয়ার বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে মালাক্কা হাইওয়ে জাহাজটি জাপান-মংলা রুটে গাড়ি পরিবহন শুরু করেছে। জানুয়ারিতে ১৩২ ইউনিট এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫০ ইউনিট গাড়ি এসেছে এই জাহাজে। দেশে গাড়ি আসা বেড়ে যাওয়ায় নতুন সার্ভিস চালু করেছি।’

চলতি অর্থবছরে গাড়ি আমদানি বেশি হয়েছে নভেম্বর মাসে। এই মাসেই গাড়ি পরিবহনে যুক্ত হয় জাহাজ ‘গোল্ডেন ফ্যান’। এইচআরসি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং লাইনস জাহাজটির দেশীয় শিপিং এজেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘নভেম্বর থেকে নিয়মিতভাবেই গোল্ডেন ফ্যান জাহাজ দিয়ে গাড়ি পরিবহন চলছে।’

জানা যায়, মহাজোট সরকারের প্রথম চার বছরেই রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি ও রাজস্বে ধস নামে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আয়ে দীর্ঘ সময় প্রথম অবস্থানে থাকা এই খাত ২০১৩ সালে তালিকার ২৫ নম্বরে চলে আসে। কিন্তু শেষ বছরে এসে অর্থমন্ত্রী বছরভিত্তিক অবচয় সুবিধা চালুর পর আগের চেয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি কিছুটা বেড়ে গিয়ে বাজার চাঙ্গা হয়।

কিন্তু চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই নতুন একটি এসআরও মাধ্যমে সংশোধনী দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেখানে এক বছরের পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে কোনো অবচয় সুবিধা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দেনদরবার করেন বারভিডা নেতারা। শেষ পর্যন্ত বিগত ১০ মার্চ নতুন এসআরও জারি করে রাজস্ব বোর্ড। সেখানে ছয় মাসের আগ পর্যন্ত কোনো অবচয় সুবিধা দেওয়া হয়নি, তবে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে ১৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীদের হিসাবে, বিদ্যমান অবস্থায় আগের চেয়ে অনেক কম দামে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। গাড়ি আসা বেড়ে যাওয়ায় শোরুমে গাড়ি বিক্রিও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই কেনা বেশি অজুহাতে আগের দামেই গাড়ি বিক্রি করছেন। বিগত কয়েক বছরে দেশে নতুন গাড়ির জমজমাট ব্যবসা হয়েছে। সেই বাজার থেকে ক্রেতাদের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে ফেরা নির্ভর করছে এসব গাড়ির দাম কমার ওপর।(কালের কণ্ঠ)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top