সকল মেনু

তালাশ তালুকদার: খড়ের কাঠামো

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিবেদক, ২২ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : সুন্দর আজ তার বুকের পশমগুলি জড়ো করে খড়কুটোর মতো জ্বালিয়ে রেখেছে/ যেমন আমিও ছুরিতে কেটে লাল দগদগে তরমুজ হয়ে ফালি ফালি আছি

বস্তুত কটাক্ষ বা বিদ্রুপ শব্দগুলো ঢেলে দিয়ে কোনো পাঠক যদি গন্তব্যের দিকে ফিরে যান তবে বুঝতে হবে ঐ ছিন্ন সুষমা যা কিনা বুকের পশম জ্বেলে রেখেছে তার বিন্দুমাত্র আভাও তার চোখে পড়েনি। তিনি এড়িয়ে গেছেন লাল দগদগে তরমুজের ফালির মতোই কবির মানস প্রতিমাকে।

তবে কি কটাক্ষ নেই? হ্যাঁ আছে। কিছুটা বিদ্রুপের ঢঙেই যেন তালাশের কবিতার চিত্রকল্প এগিয়েছে। যেমন, রেডলিফ জর্দার মতো, হাম নিঃশ্বাস ফেলার মতো, তালগাছের চারার মতন, ঘাড়ের কুঁজের মতো ইত্যাদি। কবিতায় থিম বা ক্যানভাস হিসেবেও তিনি আমাদের ব্যক্তিক দ্বন্দের সেই জায়গাটাই তুলে আনতে চাইছেন। যেখানে,

মসজিদের কোলদারা হতে
কুকুরের পশম ওঠা চামড়ার মত চল্টা ওঠা রাস্তা স্পঞ্জের স্যান্ডেলে মাড়িয়ে যাচ্ছে কেউ, জোড়াতালি দেয়া এক সংসার, আছে এনজিও সমিতির লোক, ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘর ইত্যাদি।
কিন্তু যখন তিনি বলছেন, সেদিন তোমার উৎসারিত গান পায়ের উপর ভর করে দাঁড়ালো, সব মাছিই ক্ষতের কাছে গেলে উৎফুল− অথবা মাটি ফেটে কাঠের গুঁড়ির দিকে মাথা তুলতে থাকা ঘাসগুলোই কেবল আমার আদর্শনির্ভর বেদনা বোঝে, অথবা ওই তারার পরিবেশে টিলা হয়ে ঊর্ধ্ববাহু গাছ হয়ে জন্ম হয়নি আমার। তখন তাকে আপনি কটাক্ষই বা বলবেন কিভাবে। শেষ দুটি পঙক্তির সুষমা, সুন্দর বা ক্রন্দন ঢাকবেনই বা কিভাবে।

ফলত, তালাশের কবিতা যেন এক চির বাস্তবেরই নির্মাণ। সুতরাং আলো আর আঁধার যুগল স্রোতের মতোই বয়ে চলেছে। তার কবিতায় উপাদান হিসাবে যেমন এসেছে- আত্মহনন, পুলিশ, বাঙ্কার, গভীর রাতের গ্রামের টেজ, রাজনীতি, কলতলা ইত্যাদি। তেমনই এসেছে প্রেম, যেমন

তোমার আয়াসেই মনের সুখ ছড়ানো আছে
প্রবৃত্তি যদিও ধর্মতলার বাজার এড়িয়ে চলতে চায় তবু ঢোল হয়ে পল্বলের মতো তোমার হাতেই ভয়াবহভাবে নাচতে থাকি।
আকুতি আছে,
আমার বুকের ভেতর থেকে পাথরগুলো সরাতে নিশ্চয় কোনো একজন নারীশ্রমিক পথে ঘাটে কাজ করবে।
কামও কি নেই?
বহুদিন হলো আপেলের শরীরে হাত দেবো দেবো করেও হাত দেয়া হয়নি
রস চেপা হয়নি, বাসি লুচির মতো চুপসে আছে। বা যেন জেলি জাতীয় কিছু উৎপাদনে ইউজার ব্যস্ত হয়ে আছে।
মৃত্যুকে নিয়ে তিনি কিছুটা বোধ হয় তামাশাই করেছেন এ প্রকারে,
যতবারই তোমার সঙ্গে আমার মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে
ততবারই আমার মৃত্যুর তারিখ পিছিয়ে যাবে।
মুলত এই ভাবেই কবিতা থেকে কবিতায়, পঙক্তি থেকে পঙক্তিকে ভেঙে সেইখানটাতে কবি পৌছাতে চেয়েছেন। যেখানে, প্রত্যেকের ভেতরই তোয়াজ পাগলার মতো কেউ না কেউ থাকে। থাকে কারো বা পুডিং মারা টিনের চাল, ইতিহাস বইয়ের মূর্ছিত পাতার মতো কারো বাস্তুভিটা, ধর্মতলার বাজার আর গোল গোল সল্টেড বিস্কুটের মত পৃথিবীকে আয়নায় দেখা কোনো এক জ্যোতিষী।

পরিশেষে বলা যায় কী এক উজবুক আবিষ্কারের আশায় কোনো এক কবির সুনির্মিত মহল যেন এটি। জীবনকে এখানে একটু আলাদা ভাবে দেখার প্রায়াস যেমন আছে। তেমনি আছে কারো শাঁসভস্ম থেকে, ঠুমরির স্পষ্ট লয় তাল থেকে ফুলে ফেঁপে ওঠা এক খড়ের কাঠামো।

লেখক: অনুপম মণ্ডল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top