সকল মেনু

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক জমদ্দারের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: মহান স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিক ও ভোলা জেলা ন্যাপ এর অন্যতম সদস্য ষাটের দশকের শ্রমিক নেতা, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির বলিষ্ঠ কন্ঠ ইসাহাক জমাদ্দারের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মরহুমের নিজ এলাকার বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নামাজের পর মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
তিনি ২০১২ সালের এই দিনে বার্ধক্য জনিত কারণে ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মোস্তফা কামাল নগর (মৌটুপি) গ্রামে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়ে এবং অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
উল্লে¬খ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইসাহাক জমাদ্দার ভোলা সদর উপজেলার আলীনগরে সম্ভ্রান্ত জমাদ্দার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৫ সালে যুতি বসু’র নেতৃত্ত্বাধিন কমিউনিষ্ট পার্টির অধিন অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত রেল রোড ওয়ার্কর্স ইউনিয়নে কাজ করেন।
১৯৪৮ সালে জিন্নাহ্ রেসকোর্স ময়দানে উর্দু-ই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট ভাষা। এই ঘোষণায় ছাত্র জনতা ক্ষেপিয়া উঠে। এদিকে লালবাগের বহু পুলিশ কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবী করায় গুর্খা সৈন্য দ্বারা গুলি চালাইয়া বহু পুলিশ মারিয়া ফেলে এবং চাকুরীচ্যুত করে। এহেন অবস্থায় মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী মুসলিম লীগ ত্যাগ করিয়া আওয়ামীলীগ গঠন করেন। এ ঘটনায় কমিউনিষ্ট নেতা কমরেড সবিসিংহ সকল বাদ দলকে আদেশ করেন তোমারা যদি বাংলাদেশে কিছু করিতে চাও তাহা হইলে মাওলানা ভাষানীকে সাহায্য-সহযোগীতা কর। এরপর সকল বাদ দল তাকে সহযোগীতা করে এবং তিনিও রেল শ্রমিকদের নিয়া যোগদান করে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য তাকে সহযোগীতা করেন।
১৯৪৯ সালের ৩০ শে ফেব্রুয়ারী তৎকালীন রেল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের ৮ হাজার রেল কর্মচারীকে ছাটাই করে। তার-ই প্রতিবাদে ইসহাক জমদ্দারের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম গামী সেইলট্রেন ঢাকা এলাকার রেল শ্রমিক নিয়ে আটক করেন। ইহাতে রেল কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে একঘণ্টা পর ছাটাইকৃত সকল শ্রমিককে পুনরায় চাকুরীতে বহাল করতে বাধ্য হন।
১৯৫০-৫১ সালে আব্দুল রহিম মোক্তারের নেতৃত্বে রেল ও রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে শ্রমিকদের মাঝে কাজ করেন। এতে শ্রমিকদের মাঝে তার ব্যাপক সুখ্যাতি ছড়িয়ে পরে।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের মিছিলের উপর তৎকালীন সরকার গুলি করে রফিক, বরকত, সালামসহ অনেককে নিহত ও আহত করার পর তোহামিয়া অলি আহাদকে গ্রেফতার করে। তখন তিনি ঢাকা থেকে পলায়ন করে নারায়গঞ্জ এলাকার মদনগঞ্জে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি ছাত্র-যুবককে সংগঠিত করে বাওয়ালী জুট মিল বন্ধ করে দেন এবং ২৩ তারিখে মিছিল করে সরকারী ডক ইয়ার্ড বন্ধ করে দেন।
এছাড়া আশি’র দশকে ন্যাপ’র জেলা সভাপতি হিসাবে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া সফর করেন। ষাটের দশকে শ্রমিক নেতা হিসেবে তিনি চট্টগ্রাম রেলওয়ে শ্রমিক কল্যাণে ব্যাপক ভুমিকা পালন করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top