সকল মেনু

নবজাতকের লাশ উদ্ধার; সনাক্ত হচ্ছেনা অপরাধীরা

আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: রাজধানীসহ সারা দেশে নবজাতক হত্যার কোন কুল কিনারা করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। যত্রতত্রভাবে রাস্তায়, ড্রেনে, হাসপাতালের করিডোরে, ট্রেনের কামরায় ও ময়লার স্তুপের নিচে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে নবজাতকের লাশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের সুত্র জানায়, নবজাতক হত্যা মামলা মোষ্ট ক্লু-লেস মামলা। সাধারন মামলার মত বাদী-বিবাদি নেই । অপর একটি সুত্র জানায়, নবজাতক শিশু উদ্ধারের পর থানায় জিডি
করার পর তদন্ত করা হয়। মানবাধিকার সংস্থার মতে, সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিতে নবজাতক হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ। এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে সার্বজনিন মানবাধিকার। সচেতন মহলের মতে, নবজাতক হত্যা এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব সকল পরিবারে মধ্যে ঘটছে এ ঘটনা। সামাজিক এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার বলে তারা মনে করেন। রাজধানীতে গত দুই মাসে ডাস্টবিন ও ডোবা থেকে ৯ নবজাতক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রীতি মত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে নিঃসন্তান দম্পতিসহ সামাজিক পরিমন্ডলে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজধানীর উত্তরার রাজউক মার্কেট ডাষ্টবিন থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার এবং সিদ্ধিরগঞ্জের থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক নবজাতককে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগ সুত্র জানায়, গড় হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ৫০/৬০ নবজাতক শিশুর ময়না তদন্ত করা হয়। অপর সুত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে কমপক্ষে তিন শতাধীক নবজাতকের মৃতদেহ ময়না তদন্ত করেছেন। ময়না তদন্তের পরীক্ষা রিপোর্ট পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট থানায়। সুত্র জানায়, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যেমে অপরাধী সনাক্ত করা সম্ভ্যব কিন্ত ব্যায় বহুল। মানবাধিকার সংস্থা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাকরাইল অফিস সুত্র জানায়, অজ্ঞাতনামা লাশের গড় তালিকায় প্রতি বছরে কমপক্ষে তারা ১ শ’ত নবজাতক শিশুর লাশ দাফন করেন। ধানমন্ডির গৃহবধূ সালমা
বলেন, লোক লজ্জার ভয়ে যারা মার্তৃগর্ভের ফুটন্ত গোলাপ নবজাতক হত্যা করছে তারা হিংস্র দানব ছাড়া কিছু নয়। এ ধরনের অপরাধীদের তিনি দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন। মিরপুরের গৃহবধূ তাসলীমা বাবুল বলেন, জড়িত অপরাধী সনাক্ত হয় না। কিন্ত থেমে নেই নবজাতক হত্যা। এ ধরনের ঘটনার পুনারাবৃত্তির পর অন্ধকারেই থাকছে হত্যাকারীদের পরিচয়। জজকোর্টের এ্যাড, বাচ্চু জোয়াদ্দার বলেন, ভুমিষ্ঠ হওয়া সকল নবজাতক শিশুর বেচে থাকার অধিকার আছে। কিন্ত জীবিত নবজাতককে রাস্তায় ফেলে হত্যা ভ্রন আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের অপরাধের কোনো শাস্তি অথবা অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেলে সমাজে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। লোক লজ্জার ভয়ে অভিভাবক সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা নবজাতক হত্যা ইন্দন যুগিয়ে যাচ্ছে তার পরিবারের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা ও সচেতন মহলের মতে, নারী-পুরুষের অবৈধ মিলনে জন্মানো নবজাতক হত্যার জন্য দায়ী, ওয়েস্টার্ন সিনেমার নগ্নতা, উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী-তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতী,
প্রেমের নামে কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের বেহায়াপনা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যুবক-যুবতীর শারীরিকভাবে যৌন মিলন, প্রেম ঘটিত কেলেংকারী, ভ্রাম্যমান যৌন কর্মীদের সাথে অবাধ মিলন, হাই সোসাইটির নারী-পুরুষের পরকীয়া ও লিভ টুগেদার। এ দিকে, নবজাতক হত্যা ও চুরিতে রাজধানীর থেকে পিছিয়ে নেই জেলা-উপজেলা ও গ্রামাঞ্চল। দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ মার্চ পাথরঘাটা কলেজ রোডের এক নবজাতক শিশুর ঘটনাটি। স্থানীয় সুত্র জানায়, লোক লজ্জায় পড়ে কোন এক নারী সদ্য ভুমিষ্ঠ হওয়া তার নবজাতককে রাস্তায় রেখে পালিয়ে যায়। সারা রাত অতন্দ্র প্রহীর মত পাঁচটি কুকুর ওই শিশুকে নিঘুম পাহাড়া দেয়। পরের দিন ভোরে এলাকার এক দলিল লেখক বাড়ির থেকে বেরুবার সময় কুকুরের জটলা দেখার পর ওই ব্যক্তি এগিয়ে গিয়ে দেখেন নবজাতক কান্না করছে। অতপর শিশুকে নিজের কোলে তুলে নেয়ায় পাঁচটি কুকুর সেখান থেকে চলে যায়। উত্তরার এক নিঃসন্তান দম্পতি শিক্ষক শামীম দম্পতি এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি মানব শিশুর উপড়ে পশুর ভালবাসার উজ্জল দৃষ্টান্ত হলেও দিন দিন মানুষের মন থেকে জীবপ্রেম হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে কেই সন্তানের জন্য কান্না করছেন কেউ নবজাতককে গলা টিপে হত্যা করছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে গত দুই মাসে ৯ নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি উত্তরার একটি ডাষ্টবিনের থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার এবং ২২ ফেব্রুয়ারী সিদ্ধিররগঞ্জের মিজমিজি পাউনাদি মধ্যেপাড়ার একটি আবর্জনার স্তুপের মধ্যে থেকে নবজাতক শিশুর উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারী সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তিন নবজাতক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। থানা সুত্র জানায়, যুহুরী মহল্লার কাদেরীয়া মসজিদের ড্রেন থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধারের পর একই সময়ে নবোদ্বয় হাউজিং’র অপর একটি ময়লার স্তুপের থেকে আরো ২ নবজাতকের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ নুরজাহান রোডের একটি ডাস্টবিনের ভিতর থেকে তিন দিনের ফুটফুটে এক জীবিত নবজাতক উদ্ধার করার পর স্থানীয় এক দর্জি
পরিবার নবজাতকের লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২ ফেব্রুয়ারী কাওরান বাজারের ওয়াসা ভবনের ফুটপাতে
সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় পুলিশ এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার এবং ১৭ ফেব্রুয়ারী মিরপুরের পল্লবী থানা পুলিশ শিয়ালবাড়ির একটি ডাষ্টবিন থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক দরিউদ্দিন জানান, স্থানীয় জনগন ডাষ্টবিনে নবজাতকের মৃতদেহ দেখার পর পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ওই ডাষ্টবিন থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসি বিভাগে পাঠায়। তিনি আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ নবজাতক মিশু মার্তৃগর্ভে প্রায় ৭/৮ মাস ছিল। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে কিন্ত জড়িত অপরাধীকে ধরা যায়নি বলে তিনি জানান। ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১ টায় উত্তরা রাজউক মার্কেটের সামনের ড্রেনের পাশের ময়লার স্তুপ থেকে এক নবজাতক (কন্যা শিশু লাশ) উদ্ধার করে পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লা মুসলীম হলের ক্যান্টিন পাশের থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। ঢাকার অদুরে গাজীপুরে ১৫ জানুয়ারি কাশিমপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের পুর্ব পাশ থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৪ জানুয়ারি খুলনার নিরালা প্রাইম ক্লিনিকের পাশের ড্রেন থেকে নবজাতকের লাশ, ৬ ফেব্রƒয়ারী কমলগঞ্জের তুষার ফিলিং ষ্টেশনের ধানী জমির ভিতর থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২২ জানুয়ারী চট্রগ্রামের খুলসী থানাধীন তুলাতলী রেললাইনের পাশ থেকে পুলিশ নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি বীরগঞ্জ ব্রীজের নীচের থেকে উদ্ধার করা হয় এক জীবন্ত নবজাতকে। ৫ ফেব্রুয়ারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লীতে ১৪ দিনের শিশু সুমাইয়াকে তার মা শাশুড়ির নির্দেশে মাথায় আঘাত করার পর নবজাতকের মৃত্যু হয়। ১ জানুয়ারি সোনাগাজী পৌর এলাকার চর গণেশ গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাফা সড়কের পুর্ব পাশ থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার ও ৮ জানুয়ারি খুলনায় একটি সবজি বাগান থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নবজাতক লাশ উদ্ধার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফার্মগেট এলাকার যৌন কর্মী লিপি, স্বপ্না বলেন, নবজাতক শিশুর জন্ম ও হত্যার জন্য দায়ী চলমান কলুষিত সমাজ ব্যবস্থা। তাদের মতে, আধুনিকতার নামে নারী-পুরুষের বেহায়াপনায় শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধান নেই। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস-এনজিও প্রতিষ্ঠানে প্রেমের নামে অবাধে চলছে নারী-পুরুষের দৈহিক আলিঙ্গন। তারা আরো বলেন, এক সময়
যৌনকর্মীর ঘরে নবজাতক (ছেলে) সন্তান জন্ম নিলে যৌনপল্লীর বাড়িওয়ালা সেই নবজাতককে বিক্রি করে দিতো অথবা শিশুর যৌনপল্লীর বাইরে থাকার ব্যবস্থা করতো। বর্তমানে ভদ্র পরিবারের সন্তানেরা যেখানে সেখানে যৌনকাজে লিপ্ত হয়। প্রেমের নামে শারীরিক সম্পর্কের পর ভমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকে তারাই আবার গলাটিপে হত্যা করে ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে তারা অভিযোগ করেন। জানা গেছে, গত বছর ৩১ জানুয়ারি রংপুরের কল্পনা ছাত্রী নিবাসের পিছন থেকে, ২১ সেপ্টম্বর মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটা নদীর ষ্টীল ব্রিজের নিচ থেকে, ৩০ ডিসেম্বর নওগার রাণী নগরেরর শ্মসানঘাট, ২৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ডের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নবজাতকের লাশ। ২০ ডিসেম্বর নেত্রকোণা পুর্বধলার উপজেলার লাউজানা পুর্বপাড়া গ্রামের নোয়াব আলীর পুকুর থেকে এক দিনের নবজাতক কন্যা শিশুর লাশ ও শিবচরের ময়নাকাটা নদী থেকে অপর এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২ অক্টোবর সাতক্ষীরার ইটগাছা হাদে জামে মসজিদের কবরাস্থানের কাছ থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ সেপ্টম্বর চাঁদপুর লক্ষীপুর সড়কের রায়পুরের প্রধান সড়কের পাশ থেকে, ২৬ এপ্রিল ঢাকার নবাবগঞ্জের দোহার কলেজের ইছামতি নদীর পাড় থেকে নবজাতকের লাশ ও ৪ ডিসেম্বর সোনামগঞ্জের সদর উপজেলার গৌরারাং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামে বিস্কুটের কার্টুনের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় এক নবজাতকের লাশ। ১২ মে দেবহাটা সখিপুর হাসপাতাল, ৪ ডিসেম্বর টেকনাফের হীলার খাল থেকে নবজাতকের লাশ ও আলী কদম উপজেলার পার্ব্যত জেলা পরিষদ রেষ্ট হাউস সংলগ্ন কালভাটের পাশ থেকে অর্ধগলিত অপর এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টম্বর গাজীপুর-কালিয়াকৈর উপজেলার হাবিবপুর একটি ট্রেনের কামরা থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। ৪ ডিসেম্বর কিশোর গঞ্জের সদর
হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগ থেকে পয়না গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলমের স্ত্রী নাজমা বেগমের নবজাতক ছেলে সন্তান চুরি হয়। গত বছর ৩১ জানুয়ারি যশোর জেস হাসপাতালে বস্তির বসতি আকশের স্ত্রী সালেহার নবজাতক সন্তান চুরি করে পালানোর সময় হাসপাতালের আয়া জোবেদা হাতেনাতে আটক করা হয়। গত ২৩ নভেম্বর অভাবের তাড়নায় গৌড়নদীর কল্পনা বেগম তার আট দিনের শিশু সন্তানকে ৩৫ হাজার টাকায় এক দম্পতির কাছে বিক্রি করেন। ওই বছরের ৪ নভেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর সদরের চন্ডীদাশদি গ্রামে নবজাত এক কন্যা শিশুর জীবন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয় পুলিশ ও জনতার উপস্থিতিতে নিঃসন্তান দম্পতি হাবি-ঝর্ণার কোলে নবজাতককে তুলে দেন। ২৩ রজানুয়ারি সীতাকুন্ডের পৌর এলাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সড়কে নবজাতক কন্যা শিশু উদ্ধার করার পর নুরজাহান নামের এক মহিলার কোলে ঠাই পায়। ২৬ জুলাই কুলাউড়ার ব্রাক্ষনবাজারের কবরাস্থান থেকে জীবন্ত এক নবজাতককে উদ্ধার করা
হয়। ২২ মে কুমিল্লার বুড়িচং ময়নামতি নাসরিন মেডিকেলে এক প্রসূতি মায়ের কোল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। শ্যামলীর রিং রোডের বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলতো বৈধ ও অবৈধভাবে গর্ভবতি মহিলাদের টাকার বিনিময়ে এমআর করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে নবজাতকে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করে বলেন, ২০১৩ সালের ১ জানুয়রি পাবনার এনায়েতপুরে কালাম নামের এক লম্পট গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দৈহিক নির্যাতন করার পর ওই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারন করে। দিনের পর দিন তার উপরে পাষবিক নির্যাতন করার ঘটনায় মেয়েটি ৬ মাসের গর্ভবতি হয়। ২৫ আগস্ট গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে ওষুধ সেবনের ক’ ঘন্টা পরে মেয়েটি মৃত বাচ্চা প্রসব করার রপর লম্পট কালামের পরিবার মৃত নবজাত শিশুর লাশ গায়েব করে। স্থানীয় লোকজন ও মানবাধিকার কর্মীর সহযোগিতায় কালামকে আটক করে হাজীগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। ২০১৩ সালের ১২ মে দেবহাটার সখিপুর হাসপাতালে নার্স ও আয়াদের অপচিকিৎসার শিকার শিকার হয়ে এক নবজাতকের মৃত্যুর পর নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য হাসপাতালের নার্স নবজাতক শিশুকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। পরে পুলিশ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একটি বেসকারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীনার বেগম জানান, উত্তর ফ্রান্সের একটি গ্রাম থেকে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় একটি বাগান থেকে আট নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীকে নবজাতক গুমের অভিযোগে পুলিশ আটক করেন। কিন্ত আমাদের দেশের পুলিশ হাসপাতাল, বাড়ির আঙ্গিনা, ডোবা-নালা ময়লার স্তুপ থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করছে কিন্ত পুলিশ মামলাগুলো মোষ্ট ক্লু-লেস বলে দায়িত্ব শেষ করছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপির এডিসি (মিডিয়া) আবু ইউসুফ হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, নবজাতকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি পুলিশের দৃষ্টিতে মোষ্ট ক্লুলেস মামলা। এখানে কোন বাদি-বিবাদী নেই। ঘটনাটি সম্পূর্ণ পারিবারিক জালে আবদ্ধ থাকায় নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা সত্বে পুলিশ তদন্ত ক্ষেত্রে সহসায় এগুতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তকারীদের সনাক্ত করতে পুলিশের পাশাপাশি জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ জানান, গড় হিসেব অনুযায়ী বছরে ৫০টির বেশী নবজাতকের লাশের ময়না তদন্ত তারা করেন। এর পর ওই পরীক্ষা রিপোর্ট তারা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেন। আঞ্জমানে মফিদুল ইসলামের সহকারী পরিচালক (সার্বিক) মোঃ হালিম জানান, গড়ে প্রতি বছর বিভিন্ন ঘটনায় তারা কমপক্ষে ৮০ থেকে ৯০টি নবজাতক শিশুর লাশ দাফন করেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর মহাসচিব ড: মোহাম্মদ শাহজাহান খান বলেন, মার্তৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ঠ হওয়া কোন নবজাতকে হত্যার চেয়ে বড় অপরাধ কিছুই হতে পারে না। সমাজের মধ্যে এ ধরনের সৃষ্ট ঘটনায় মানবাধিকার চরম আকারে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোমনে করে। তার মতে, মোষ্ট ক্লুলেস বলতে কিছু নেই। পুলিশ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখেএবং এ ধরনের কোন অপরাধীকে আইনের কাঠগড়ায় দাড় করায় তা হলেই নবজাতক হত্যারোধ সম্ভ্যব বলে তিনি মনে করেন। তিন নবজাতকের লাশ উদ্ধার প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক জানান, সাধারনত নবজাতক লাশ উদ্ধারের ক্ষেত্রে জড়িতদের সহসায় সনাক্ত করা যায় কিন্ত অপরাধীদের ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহৃত রয়েছে বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top