সকল মেনু

জিহাদি অডিও বার্তার নেপথ্যে

ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘জিহাদোলোজি ডট নেট’ ওয়েবসাইট এর কর্ণধার অ্যারন জেলিন দাবি করেছেন, তিনি প্রাইমারী সোর্স (আল কায়েদা) থেকেই বাংলাদেশে জিহাদের আহ্বান জানিয়ে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাহিরির নামে প্রকাশিত অডিও টেপটি পেয়েছেন এবং নিজের ওয়েবসাইটে তা আপলোড করেছেন। তিনি বলেন,’আমি শতভাগ নিশ্চিত ,এটা আল কায়েদার বার্তা।‘

’দ্যা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইষ্ট পলিসি’ নামক একটি গবেষণা সংস্থার রিসার্চ ফেলো অ্যারন জেলিনের পরিচালিত ‘জিহাদোলোজি ডট নেট’ ওয়েবসাইটে আল-জাহিরির অডিও বার্তাটি গত ১৪ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। পরে সেই লিংক ইউটিউবসহ মৌলবাদী বিভিন্ন ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক উত্তাপ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর হয়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জিহাদোলোজি ডট নেট’ নামক একটি ওয়েবসাইটে অডিও বার্তাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। সরকার বাংলাদেশে সাইটটি বন্ধ করে দেয়। তারই প্রেক্ষিতে ওয়েব সাইটটির কর্ণধার অ্যারন জিলনের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করেন কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর। সোম ও মঙ্গলবার দফায় দফায় ইমেইল চালাচালিতে অ্যারন জিলন আল কায়েদার অডিও বার্তাটি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন।

এব্যাপারে সাংবাদিক সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, আল কায়েদার নিজস্ব একটি অনলাইন ফোরাম আছে বলে অ্যারন জানিয়েছেন। তাদের যে কোনো বক্তব্য প্রথমেই আল ফিদা নামের সেই ফোরামে প্রকাশিত হয়। আলোচিত অডিও বার্তাটিও প্রথম আল ফিদা ফোরামে প্রকাশিত হয়েছিল। আরবী ভাষায় পরিচালিত আলফিদা ফোরামের সূত্রেই তিনি অডিও বার্তাটি পান এবং নিজের ওয়েবসাইটে আপলোড করেন।

অ্যারন  জানান,  তিনি যেহেতু বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করেন না, সেকারণে তিনি অডিওটি দেখেননি। তিনি এর কনটেন্ট সম্পর্কেও অবগত নন। অ্যারন বলেন, সব জিহাদি কনটেন্টই আমি আমার সাইটে আপলোড করি। এটা করি যাতে অন্যান্য গবেষকদের তথ্য পেতে সহায়তা হয়।’

অ্যারন আরো জানান, আল-কায়েদা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের অনেকেই তার ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে থাকেন।  এটি নিতান্তই একাডেমিক একটি ব্লগ। ওয়েবসাইটের ’অ্যাবাউট মি’ সেকশনের দিকে তাকালেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায়। তার ধারণা বাংলাদেশি যুবক রাসেল ওই ওয়েবসাইট থেকেই অডিওটি নিয়ে বাকি কারুকাজ করে তা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছেড়েছেন।

অ্যারন বলেন, ‘আমার ওয়েবসাইট কখনোই সেনসেশনাল মিডিয়া কাভারেজের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের মিডিয়া প্রথমবারের মতো সেনসেশন তৈরি করে দিলো। অথচ কোনো একটি মিডিয়াও আমার সাথে যোগাযোগ করেনি বা আমার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেনি। তারা তাদের মতো করে লিখে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মিডিয়া এইক্ষেত্রে খুবই অপেশাদার আচরণ করেছে।’

অ্যারনকে প্রশ্ন করা হয়, যে অডিও বার্তাটিকে আল-কায়েদা প্রধানের বার্তা হিসেবে বলা হচ্ছে। এটি কি সত্যিই আল-কায়েদার বার্তা? এ প্রশ্নের জবাবে ’দ্যা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইষ্ট পলিসি’র রিসার্চ ফেলো অ্যারন বলেন, শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিয়তা দিতে পারি এটা আল-কায়েদারই বার্তা। আমি আগেও বলেছি, প্রাইমারী সোর্স থেকে আমি এই অডিও বার্তাটি পেয়েছি। এটি যে আল-কায়েদারই বার্তা সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।

প্রায় এক মাস আগে আপলোড হওয়া বাংলাদেশ নিয়ে আল কায়েদা প্রধানের বার্তাটি এখন আর ওয়েবসাইটের হোমপেজে নেই। ‘বাংলাদেশ’- লিখে সার্চ দিলে বাংলাদেশ সম্পর্কিত তিনটি লিংক পাওয়া যায়।  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে প্রচারিত প্রথম বার্তাটি ছিলো আফগানিস্তানের তালেবানদের পক্ষ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশি সৈন্য চেয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলো। তারই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সেই বার্তাটি প্রচার করা হয়েছিলো আফগান তালেবানদের পক্ষ থেকে। তাতে আফগানিস্তানে বাংলাদেশি সৈন্য পাঠানোর যে কোনো উদ্যোগ প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়েছিলো। সেই বার্তাটি ‘জেহাদোলোজি’ কোনো ধরনের সম্পদনাবিহীন এই ওয়েবসাইটে আপলোড করে। এর দীর্ঘদিনর পর গত বছর ২ এপ্রিল একটি  অডিও বার্তা আপলোড করা হয় এই ওয়েবসাইটটিতে।

২ এপ্রিল প্রচার হওয়া আল কায়েদার বার্তাটি বাংলাদেশি ব্লগারদের ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে জিহাদে নামার আহ্বান জানানো হয়। তার এক মাস পরেই  ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা চালায়।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জেহাদোলোজিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রচার হওয়া তিনটি বার্তার মধ্যে দুটি প্রচার করেছে আল কায়েদার মিডিয়া প্রোডাকশন হাউজ ‘আস সাহাব’। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এরা ভিডিও বিবৃতি তৈরি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিতরণ করার মাধ্যমে এরা কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে সংস্থাটি ভিডিওর পাশাপাশি অডিও এবং অন্যান্য ইন্টারনেট ম্যাটারিয়েল তৈরি করে সেগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। আরবীর পাশাপাশি ইংরেজী এবং অন্যান্য ভাষায়ও সাবটাইটেল দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারিত সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তাটিতে বাংলা সাবটাইটেল জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top