সকল মেনু

নতুন রূপে বরেন্দ্র জাদুঘর: পরিদর্শনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

রাজশাহী, ১৯ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে নতুন রূপে সেজেছে রাজশাহীতে অবস্থিত উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ এবং দেশের প্রথম বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ভবনের ছাদ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জাসহ সকল কাজ এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৯৪ হাজার ৯৩৩ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ টাকায় এ কাজ করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা এ জাদুঘর ঘুরে দেখবেন এবং এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ১ থেকে ৭ নম্বর গ্যালিরির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে  কাঁচের ফ্রেম বানিয়ে বিভিন্ন মৃতপাত্র, পুতুল ও ছোট ছোট মূর্তিগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েক দিন আগেও এসব মৃতপাত্র ও মূর্তিগুলোর কোনো পরিচয় লিখিত আকারে না থাকলেও তা এখন সংযোজন করা হয়েছে। ফ্রেমগুলোর উপর ছাদের সাথে খাটানো হয়েছে সুরম্য বৈদ্যুতিক বাতি। জাদুঘরের সকল মূর্তিগুলোকে ধুয়ে-মুছে সাফ করা হয়েছে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই জাদুঘরটির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গত ২০১০ সালের শেষের দিকে একটি বড় অংকের অনুদান দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিমাণ ৯৪ হাজার ৯৩৩ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। সেই টাকায় ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে জাদুঘরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু করা হয়। গত দুই বছরে জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুনতান আহমেদের তত্ত্বাবধানে এর কাজ করা হয়। এই অর্থায়নে জাদুঘরের কয়েকটি ভবনের ছাদ নতুন করে তৈরি করা হয়, মূর্তির জন্য মঞ্চ বানানো হয়, প্রতিটি গ্যালারিতে বৈদ্যুতিক বাতি ও ইলেক্ট্রিসিটির সংযোজন করা হয়। এছাড়াও ভবনের বেশ কয়েকটি দরজায় গ্রিল লাগানো হয়। এতে করে গবেষণা জাদুঘর অনেকটা অধুনিকতার ছোঁয়া লাগে।

জানতে চাইলে জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সুনতান আহমদ বলেন, জাদুঘরের আধুনিকায়নের জন্য যে অনুদান দেওয়া হয়েছিল আমরা এরই মধ্যে তার সকল কাজ শেষ করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এসব কাজ পরিদর্শন করবেন এবং আমাদের সাথে মতবিনিময় করবেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সাথেও মতবিনিময় করবেন।

দুর্লভ সংগ্রহ: বরেন্দ্র  জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারেরও অধিক। এখানে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মহেঞ্জাদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, খিষ্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তিসহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। মোঘল আমলের রৌপ্য মুদ্রা, গুপ্ত স¤্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, স¤্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখানে প্রায় ৫ হাজার  পুঁথি রয়েছে যার মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পযন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এখানে  রয়েছে।  

জাদুঘরটিকে ৭টি প্রদর্শনকোষ্ঠে ভাগ করা হয়েছে।  প্রথম প্রদর্শনকোষ্ঠে নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে উদ্ধারকৃত ২৫৬টি ঐতিহাসিক সামগ্রী রয়েছে। দ্বিতীয় প্রদর্শনকোষ্ঠে আছে হিন্দু ও বৌদ্ধদের তৈরি কাঠ ও পাথরের নানা ভাস্কর। তৃতীয় ও চতুর্থ  প্রদর্শনকোষ্ঠে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। পঞ্চম প্রদর্শনকোষ্ঠে আছে বৌদ্ধ মূর্তি। ষষ্ঠ প্রদর্শনকোষ্ঠে রয়েছে বিভিন্ন ভাষায় লিখিত পাথরের খন্ড এবং সপ্তম গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিদর্শনসমূহ। এই জাদুঘরে ১২ শতাধিক গ্রন্থ’ সমৃদ্ধ একটি সংগ্রন্থশালাও রয়েছে।  

জাদুঘরের ইতিহাস: বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এটি প্রত্ন সংগ্রহে সমৃদ্ধ। এটি ১৯১৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠলেও বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরটি পরিচালনা করছে।  

জাদুঘরটি রাজশাহী মহানগরের কেন্দ্রস্থল হেতেম খাঁ-তে অবস্থিত। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্র এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ১৯১০ সালে তারা বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। ওই বছরে তারা রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য শরৎ কুমার রায়ের দান করা জমিতে জাদুঘরটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ সালে। একই বছরের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।

এদিকে ১৯১১ সালে কলকাতা জাদুঘর অকস্মাৎ এতে সংরক্ষিত সকল নিদর্শন দাবি করে বসে। তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেলের প্রচেষ্টায় ১৯১৩ সালের ১৪ ফ্রেবুয়ারি জারিকৃত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরেন্দ্র জাদুঘরকে এর নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যপারে স্বাধিকার প্রদান করা হয়।  ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবরে জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top