সকল মেনু

বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচারনায় টানটান উত্তেজনা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও চিরিরবন্দর উপজেলায়

নুরন্নবী বাবু,দিনাজপুর, ১৮ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচারনায় টান টান উত্তেজনার পাশাপাশি ভোটারদের মনেও দেখা দিয়েছে নানা বিভ্রান্তি। আর চিরিরবন্দর উপজেলায় উভয় দলের একক প্রার্থী থাকায় জমে উঠেছে ভোট যুদ্ধ। জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী হুলিয়া নিয়ে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন।
আগামী ২৭ ফেব্র“য়ারী দিনাজপুরের ২টি উপজেলা বীরগঞ্জ ও চিরিরবন্দরে ভোট গ্রহণ করা হবে। বীরগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৫ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে সাবেক এমপি ও দল বদলকারী মোঃ আমিনুল ইসলাম (ঘোড়া) আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থন নিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আর স্থানীয় এমপি মনোরঞ্জনশীল গোপালের সমর্থন নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল (আনারস)। এমপি’র সমর্থন থাকায় ইউনিয়নগুলোতে বাবুল সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আমিনুলকে সঙ্গে রাখায় তারও অবস্থা মন্দ নয়। বলা যায় আওয়ামী লীগের ২ প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে সেয়ানা সেয়ানা। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাই কাকে বেছে নিবেন তা নিয়ে আছে প্রতিনিয়ত দ্বিধাসংকোচ।
আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি’র ঘরেও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় আছেন দল সমর্থিত প্রার্থী বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এ্যাডঃ মফিজউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী (কাপপিরিচ)। তার প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনের মাঠ চোষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি’র আরেক শক্তিশালী প্রার্থী রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু (মোটরসাইকেল)। ১১টি ইউনিয়নের উপজেলা বীরগঞ্জের ইউনিয়নগুলোতে বিএনপি গত ২ বছর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গুছিয়ে নিয়েছে। তবে উপজেলা সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে এ্যাডঃ মফিজউদ্দীনের সাথে প্রচারনায় অংশ নেয়ায় দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী মূল স্রোতের সাথে রয়েছেন।
বীরগঞ্জে জামায়াতের অবস্থান নড়বড়ে নয়। কেননা গত পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন জামায়াতের মোঃ হানিফ। এছাড়া ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন ১ আসনে জয়লাভ করেছিলেন জামায়াতের মরহুম অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল কাফি। ইউনিয়নগুলোতে জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত থাকায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্ত হচ্ছেন জামায়াত প্রার্থী কেএম কুতুবউদ্দীন (দোয়াতকলম)। অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হুলিয়া থাকলেও প্রতিকুল পরিবেশে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন কুতুবউদ্দীন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি কোন প্রার্থী না দিয়ে জামায়াতের একেএম কাওসার (টিউবওয়েল)কে সমর্থন দেওয়ায় তার অবস্থান খুবই শক্তিশালী। কেননা আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান গোপাল দেব শর্মা (চশমা) এর বিরুদ্ধে রয়েছে দলের ২ বিদ্রোহী প্রার্থী দবিরউদ্দীন (উড়োজাহাজ) ও মোঃ লিমন সরকার (তালা)। বিদ্রোহীদের ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান সুবিধাজনক পর্যায়ে নেই।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের অনীতা রায় (হাঁস) এর বিরুদ্ধে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী লীলা রানী দাস (পদ্মফুল), বিএনপি’র শাহনাজ পারভিন (ফুটবল) ও জামায়াতের সেলিনা আখতার (কলস)। ৪ প্রার্থী ভোটারদের সমর্থন আদায়ে জোরেসোরে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারনা।
আগামী ২৭ ফেব্র“য়ারী বৃহস্পতিবার বীরগঞ্জের ৮০টি কেন্দ্রে ভোট দিবেন ২ লক্ষ ২ হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ৫১৬ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৮০৬ জন মহিলা ভোটার।
চিরিরবন্দর উপজেলা ঃ
চিরিরবন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে সরাসরি রয়েছেন ১৯ দলের সমর্থিত প্রার্থী জামায়াতের সাবেক জেলা আমীর ও চিরিরবন্দর উপজেলার বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান মোঃ আফতাবউদ্দীন মোল্লা (দোয়াতকলম) এবং ১৪ দলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের তারিকুল ইসলাম তারিক (আনারস)। সরকার বিরোধী ও নির্বাচনী সহিংসতার অন্তত ৪টি মামলা মাথায় নিয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আফতাব উদ্দীন। চিরিরবন্দর জামায়াত ও বিএনপি’র ঘাটি হিসেবে দুর্বল নয়। দেড়/দু বছরে ১৯ দলীয় জোটের শরিকদলগুলো নিজেদের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করেছেন। তাই পলাতক থেকেও আফতাব উদ্দীন মোল্লা শক্তভাবে লড়বেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তিনি চাইবেন পুনরায় নির্বাচিত হতে।
৩ দফার আলোকডিহি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তারিক সাংগঠনিকভাবে খুবই দক্ষ। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নই তার পদচারনা দীর্ঘদিন ধরে থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে তার রয়েছে যোগাযোগ। আওয়ামী লীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় তিনি রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থায়। যদিও দলের মধ্যে ভেতরে ভেতরে রয়েছে দ্বিধা সন্দেহ দ্বন্দ্ব। কিন্তু এবার আন্তরিকতার সাথে সবাই কাজ করলে চেয়ারম্যানের হারানো পদটি আওয়ামী লীগের দখলে আসতে পারে। চেয়ারম্যান পদে অপর প্রার্থী হচ্ছেন বিএনএফ’র মোঃ মোস্তাকিম হোসেন (টেলিফোন)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৫ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবু হান্নান মোঃ সাদেকের (তালা) বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আবু সাঈদ কাজী (টিয়া পাখি)। আর বিএনপি’র নুর আলম সরকার দুলু (চশমা) এর বিরুদ্ধে দলীয় প্রতিপক্ষ হয়েছেন দুলাল আসাদুজ্জামান চৌধুরী (বৈদ্যুতিক বাল্ব)। জাতীয় পার্টির কমল রায় (টিউবওয়েল) লড়ছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জামায়াতের প্রার্থী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা খাতুন (পদ্মফুল), আওয়ামী লীগের তরু বালা রায় (কলস), আর বিএনপি’র রাশেদা আলম (ফুটবল)।
দিনাজপুরের ২টি উপজেলা বীরগঞ্জ ও চিরিরবন্দরে নিজেদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও দলীয় শক্তি সামর্থ্য প্রদর্শনে ২ প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা আদা-জল খেয়ে লড়ছেন ভোটযুদ্ধে। ২৭ ফেব্র“য়ারী নির্ধারিতভাবে জনগনের ভোটের রায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top