সকল মেনু

কর ফাঁকিবাজদের ধরতে মাঠে এনবিআর

ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : কর প্রদানে সক্ষম এমন ৩০ লাখ ব্যক্তি থাকলেও বছর শেষে কর পরিশোধ করছে মাত্র ১২ লাখ। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবার সেই সব কর ফাঁকিবাজদের ধরতে সম্প্রতি মাঠে নেমেছে।

যেখানে বড় বড় কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কর প্রদান ও ফাঁকির বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে এনবিআর থেকে কর অঞ্চলগুলোর কমিশনারদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এনবিআরের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কর ফাঁকিবাজদের শনাক্ত করতে মাঠে নামে এনবিআর। মাঠপর্যায়ে প্রতিনিধিদলগুলোকে কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে গঠিত হয় বিশেষ টিম। বিশেষ করে, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে কর প্রদানে সক্ষম ও কর ফাঁকিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শনাক্তকরণে বিশেষভাবে নজর দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, তদন্তকারী দলগুলো ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকদের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখবে ও অনুসন্ধান করবে। তবে ফাঁকিবাজ শনাক্তকারী দলকে ২০১৩-১৪ করবর্ষের অডিট মামলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ত্রুটি শনাক্তকরণে অনুমাননির্ভরতা পরিহার করতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দিকে কড়া নজর রাখতে এনবিআর থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর থেকে কর অঞ্চলগুলোকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অডিট ইস্যু নির্বাচনকালে নথির অতীত ও বর্তমান রেকর্ড যাচাই করে দৃশ্যমান প্রকৃত এবং বাস্তব ত্রুটিগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, ত্রুটি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে অনুমাননির্ভরতা পরিহার করতে হবে, এ ক্ষেত্রে আয় নিরূপণবিষয়ক কোন কোন প্রমাণের অভাব রয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে আমদানি বা ক্রয়, রপ্তানি বা বিক্রয়, ট্রেডিং হিসাব, স্থায়ী সম্পদের সংযোজন ও অবচয়, ব্যাংক হিসাব, পণ্য উৎপাদনের তথ্য ও উৎস কর কর্তনের বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে অতীতে যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার বিশেষায়িত ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তদন্তের আওতায় আনতে এনবিআর থেকে বলা হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে, যেগুলো দীর্ঘ সময় অডিটের আওতায় আসেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের আয়কর বিবরণীগুলোকে রেভিনিউ রিস্ক ফ্যাক্টরের আলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া রাজস্ব ফলপ্রসূ কোনো রিটার্ন যেন অডিট কার্যক্রম থেকে বাদ না যায়, সেদিকেও বিশেষ লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে কর অঞ্চলগুলোকে। তবে আয়ের হিসাব, সম্পদ ও দায়সংক্রান্ত গুরুতর কোনো অসংগতি পরিলক্ষিত না হলে শুধু বেতন থেকে আয় আছে- এমন করদাতা ও প্রান্তিক করদাতাদের পরিহার করতে বলা হয়েছে এনবিআরের নির্দেশনায়।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঠপর্যায়ে কর ফাঁকিবাজ শনাক্ত করতে এনবিআর থেকে এবার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউই যেন কর ফাঁকি দিয়ে পার না পায়, সে জন্য এবার কর অঞ্চলগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তের নামে করদাতাদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

যদিও এনবিআর প্রতিবছর কর ফাঁকির ঘটনা কমই উদ্‌ঘাটন করেছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটিত হয়। যার বিপরীতে আদায় হয় ১৫২ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ১৩৪ কোটি টাকা কর ফাঁকি ও জালিয়াতির ঘটনা উদ্‌ঘাটিত হয়। যেখানে আদায় হয় ১০৩ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৬৪ কোটি টাকা কর ফাঁকি উদ্‌ঘাটনের বিপরীতে আদায় ৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top