সকল মেনু

দিনে টানাপার্টি রাতে ব্লেডপাটি; আতংকে রাজধিনীবাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: রাজধানীর ২ শতাধিক স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাকারী দল ব্লেডপাটি। নৈপথ্য রয়েছে পেশাদার ছিনতাইকারীরা। এদের নয়া হাতিয়ার হচ্ছে ব্লেড ও আবার ব্যবহার করে ধারালা ছুড়ি। উদ্দেশ্য ব্লেড অথবা ধারালা ছুরি দিয়ে গাড়ির পলিথিন কাটা। সন্ধ্যার পর ট্রাফিক সিগন্যাল ও যানজোটে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট গাড়ির পলিথিন কেটে অথবা গাড়ির জানালায় হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ, মোবাইলফোন, গলার চেইন, কানের দুল ছিনিয়ে নেয়া। ভুক্তভোগীরা জানান,দিনে একদল টানাপার্টির (ছিনতাই) কাজ করে। রাতে আবার এ চক্রের সদস্যরাই রাস্তায় নেমে ব্লেডপার্টির কাজ করে। রমনা-মৎস ভবন এলাকার সিএনজি চালক হাসিবুর মোল্লা জানান, ক্ষুদে ছিনতাইকারী ব্লেডপার্টির শিকার হয়নি নগরীতে এমন গাড়ি খুজে পাওয়া যাবে না। সদরঘাট এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আকবর মিয়া জানান, গত ডিসেম্বর মাসে তিনি ব্লেডপার্টির শিকার হন। কিন্ত ঘটনার পরই তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের একাধিক সুত্র জানান, টানাপার্টি বা ব্লেডপার্টি ঘটনায় অনেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ না করায় পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভ্যব হয় না। সুত্র আরো জানায়, গাবতলি, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট, মানিক মিয়া এভিনিউ, ফার্মগেট পুলিশ বক্স, আনন্দ সিনেমা হল, কাওরান বাজার, বাংলামোটর,শাহবাগ, প্রেসক্লাব, নিউ মার্কেট, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, টিকাতুলী, সায়েদাবাদ, জুড়াইন, পোস্তাগোলা, লালবাগ, সদরঘাট, কাকরাইল রাজমনি সিনেমা হল, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তি নগর, মৌচাক, মগবাজার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন রাস্তা, সাতরাস্তা মোড়, মহাখালী, চেয়ারম্যান বাড়ি, বিজয় স্মরনী, গুলশান মোড় টানাপাটি ও পেতে রয়েছে ব্লেডপার্টি।পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সমন্বয়ে চলছে ব্লেডপাটির অপরাধমুলক কর্মকান্ড। সদস্যরা বেশীর ভাগ বস্তির উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবক। তাদের টার্গেট রাতের সিগনাল বাতির নীচের ছোট ছোট যানবাহন। এদের কাজের ষ্টাইল পেশাদার ছিনতাইকারী থেকে ব্যতিক্রম। তারা অভিনব কায়দায় রাস্তায় দাড়ানো অথবা চলন্ত সিএনজি গাড়ির পিছনের বাম্পারে চড়ে যানবাহনের চলমান শব্দের তালে তালে ব্লেড দিয়ে কাটতে থাকে সিএনজি গাড়ির মোটা পলিথিন। কাটা পলিথিনে হাত ঢুকিয়ে ছিনিয়ে নেয় যাত্রীর মালামাল। যাত্রীর চিৎকার শুনে গাড়ি থামান চালক। ততক্ষনে পালিয়ে যায় ব্লেডপাটির ওই ছিনতাইকারী। আবার ব্লেড কাটতে না পারলে সিএনজি গাড়ির জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তারা মালামাল ছিনিয়ে নেয়। গাবতলী ৮ নম্বর গাড়ির বাস যাত্রী ভুক্তভোগী করিম বক্স জানান, কাকরাইল এলাকা দিয়ে গাবতলীর গাড়ি যাতায়াত করত। অফিস ফেরার সময় প্রায় বাসের যাত্রীর মালামাল এরা ছিনিয়ে নিত। বর্তমান ওই রুটে গাবতলির গাড়ি বন্ধ হওয়াতে টানাপার্টি ও ব্লেডপার্টি হাইকোর্ট, মতৎস ভবন, শাহবাগ ও রূপসীবাংলা (সাবেক শেরাটন) মোড়ে লক্ষ্য করা গেছে। উত্তরার সিএনজি গাড়ি চালক হালিম বয়াতী জানান, ছোট গাড়ির রাতের যাত্রীরা রীতিমত ব্লেডপার্টি আতঙ্কে ভুগছেন। এর ফলে অনেক সময় সিএনজি গাড়ির চালকদে বিপদে পড়তে হয়।নাখাল পাড়ার রিকসা চালক তমাল মোল্লা জানান, রাস্তায় ব্লেডপার্টি ধরা পড়লে জনগন উত্তম মাধ্যেম দিয়ে ছেড়ে দেন। টাকা খেয়ে পুলিশ ছেড়ে দেয় বলে তিনি জানান। যাত্রাবাড়ির ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন জানান, ক’মাস আগে স্ত্রী পরিজন নিয়ে মিরপুরে যাওয়ার সময় তিনি গুলিস্তান ষ্টেডিয়াম সামনে যানজটে পড়েছিলেন। ওই সময় ব্লেডপার্টির শিকার হন। সিএনজির পিছন পলিথিন কেটে তার স্ত্রীর গলার চেইন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী এক কিশোর। গাড়ি থামাতেই বঙ্গবাজার পার্কে ওই যুবক পালিয়ে যায় বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে যাত্রবাড়ি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, তার জানা মতে, যাত্রবাড়ি এলাকায় এ ধরনের কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে তার জানা নেই। সুত্র জানায়, তেজগাঁও এলাকার টানাপার্টি-ব্লেডপার্টি সদস্যদের নিয়ন্ত্রন করছে ছিনতাইকারী কামরুল, বাচ্চু, রফিকুল ও সুমনসহ এক মাদক সমরাজ্ঞীর গ্রুপ। কাওরানবাজার রেললাইন বস্তি, রেলষ্টেশন বস্তি ও নাখালপাড়া বস্তির উঠতি অনেক যুবক এফডিসি গেট, সার্ক ফোয়ারা, বাংলামোটর ও ফার্মগেট পার্ক বস্তির এলাকায় ব্লেডপার্টির সাথে জড়িত। তারা হলো কালা টগর, রঙিন মাসুদ, নেশাখোর আদিল, রিফাত। ব্লেডপার্টির সদস্য রেল লাইন বস্তির যুবক আদিল জানায়, তার ওস্তাদ ছিলেন করিম ভান্ডারী। ওস্তাদের কাছ থেকে তার এ কাজের হাতে খড়ি। সে আরো জানায়, বিপদ জানা সত্বেও অভাবের সংসারে বস্তির যুবকেরা টাকার লোভে পড়ে ব্লেডপার্টি বা টানাপার্টির কাজ করে। কিন্ত ধরা পড়লে পুলিশকে টাকা দিলে ছেড়ে দেয় বলে জানায়। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি অপুর্ব হাসান বলেন, বস্তির বসতি নেশাখোর ইয়াবা-গাজা-হেরইন আসক্ত কিশোর যুবক টানাপার্টি-ব্লেডপার্টির কাজ করে। কাওরান বাজার থেকে বিজয় স্মরনীর রাস্তায় এ ধরনের অপরাধ মাঝেমধ্যে সংঘটিত হতে পারে। এদের ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পল্টন এলাকায় টানাটপার্টির নেপথ্যে রয়েছে ছিনতাইকারী সুজন, নিপু, চোর আসলাম, শাখায়াত, শাহাপরান ও সৌরভ হোসেনে চক্রের সদস্যরা। রমনা থানার মগবাজার মোড় সিগন্যালসহ বিভিন্ন স্থানে ব্লেডপার্টির নিয়ন্ত্রনে শিশু ছিনতাইকারী সজিবের একটি দল এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। পুলিশের হাতে বিভিন্ন সময়ে এ চক্রের সদস্য ধরা পড়লেও তারা জামিনে বেড়িয়ে আসে। গ্রীলকাটা চোর নিয়াজ মোর্শেদ ও ফয়সাল গ্রুপে সজিবের সেল্টার বলে জানা গেছে। শাহবাগ থানার সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানের টোকাই কাশেমের দুটি দল, নিউ মার্কেট থানাধীন নিলক্ষেত টোকাই আলী, লাবলু ও খোকন তিন কিশোর ব্লেডপার্টিও,নেতৃত্ব দিচ্ছে। নিউ মার্কেটের বই বিক্রেতা সরোয়ার হোসেন জানান, প্রায় শুনা যায়, রিকসা, আটো রিকসা, সিএনজি যাত্রীর চিৎকার। কৌতুহল বশত এগিয়ে গিয়ে জানা যায়, চেইন, কানের দুল, মানিব্যাগ কিংবা মহিলাদের ব্যানেটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার খবর। এ ব্যাপারে নিউমার্কেট থানার ওসি তদন্ত মনিরুজ্জামান বলেন, গত ছয় মাসে ব্লেডপার্টি বা টানাপার্টি সিএনজি গাড়ি, রিকসা যাত্রীর কোন মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে কেউ আসেনি। গুলশান এলাকায় ব্লেডপার্টিও নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে তিন মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালাম, মাদক সমরাজ্ঞী পারভীন ও সাজা। এ চক্রের সাথে গুলশান থানার ক্যাশিয়ার ও ফাঁড়ির ক্যাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভাটারা কুড়িল বিশ্বরোডে এলাকায়
টানাপার্টি ও ব্লেডপার্টি নিয়ন্ত্রন করছে সন্ত্রাসী উজ্জল ও রাজিব গ্রুপ। পাতা বাবু, মামুন ও পারভেজ পেশাদার তিন ছিনতাইকারী কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা আবুল হোটেল পর্যন্ত ব্লেডপার্টির নিয়ন্ত্রন করছে। রামপুরা থানার ওসি কৃপা সিন্দু বালা জানান, ব্লেডপাটি কর্তৃক যাত্রীর মালামাল ছিনতাইকারীর তৎপড়তা আগের মত নেই। তিনি থানায় আসার পর এদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান পরিচালনায় অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানান। শ্যামলী এলাকায় ব্লেডপার্টি নিয়ন্ত্রন করছে সন্ত্রাসী বিল্লাল গ্রুপ। হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় বিল্লাল পলাতাক রয়েছে। শ্যামলী থেকে আসাদগেট ব্লেডপাটি ও টানাপার্টি পরিচালনা করছে সাগরেদ কমল ও মনির। শ্যামলী-আসাদগেট। কল্যাণপুর এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে পেশাদার ছিনতাইকারী হাসান ও সাব্বির। মিরপুর গোল চত্বর এলাকায় বাবু ও ইউসুফ গ্রুপের সদস্য আলী, কামাল, সাইদ, গেন্ডারিয়া এলাকায় পিচ্চি রনির গ্রুপ, জুরাইন রেলগেট ছোট ব্রিজ-কালভাট এলাকার মাদক ব্যব্সায়ী ইয়াকুবের সাগরেদ পিচ্চি বাবুল, বাইট্রা কমল ব্লেডপার্টি ও টানাপার্টি নিয়ন্ত্রণ করছে। বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়াম এলাকায় ছিনতাইকারী শাহজালাল গ্রুপ গুলিস্তান ও বঙ্গবাজার একছত্র ব্লেডপার্টি নিয়ন্ত্রন করছে। পুরান ঢাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঘর জামাই রাজিবের ব্লেডপার্টির সদস্যরা। এ ব্যাপারে ডিএমপির মিডিয়া শাখার এসি আবু ইউসুফ জানান, ব্লেডপার্টি বা টানাপার্টি ছিনতাইকারী অপরাধচক্রের সদস্যদের বিশেষ কোন তৎপড়াতা রাজধানীতে নেই। এ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানঅব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন ব্লেডপার্টি বা টানা পার্টির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ বা মামলা থাকার কোন তথ্য তার জানা নেই। রাজধানীতে সংঘবদ্ধ অপরাধী সকলের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান পরিচালনার ফলে তারা অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। এ ধরনের অপরাধী চক্রের সঙ্গে পুলিশের অর্থনৈতিক লেন- দেন সম্পর্কের কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top