সকল মেনু

সাভার-আশুলিয়ায় চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহোৎসব

সাভার (ঢাকা), ১১ ফেব্রুয়ারি  (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :সাভারের আশুলিয়ায় প্রতিরাতেই দেওয়া হচ্ছে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ। এর মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তিতাসের অসাধু কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। আর বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। ঘুষের বিনিময়ে আশুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তিতাস গ্যাসের অবৈধ লাইন।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, একশ্রেণির অসাধু ঠিকাদারের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দিলেই নেওয়া হচ্ছে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে জনগণের সম্পদ এই তিতাস গ্যাস। যার কোনোই বৈধতা নেই ব্যবহারকারীদের কাছে।

অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেও মিলছে না বৈধ সংযোগ। সরঞ্জামাদির অভাব দেখিয়ে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক হাজার আবেদন পত্র। মূলত অবৈধ সংযোগে তিতাস কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের আগ্রহ বেশী থাকায় বৈধ সংযোগের অনুমোদন মিলছে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

আশুলিয়ার কাঠগড়া, শ্রীপুর বাড়ইপাড়া, কবিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরাতেই চলছে অবৈধ সংযোগ দেয়ার কাজ। এসব এলাকায় দিনের বেলা প্রবেশ করলেই দেখা যায় সড়কের পাশে মাটি খুড়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে গর্ত। রাত গভীর হলে মূল লাইনের সাথে পাইপ বসিয়ে সংযোগ স্থাপন করে দেয় তিতাসের ঠিকাদাররা। তবে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সংযোগ দেয়া হলেও এসব অসাধু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি তিতাস কর্তপক্ষ।

সরেজমিন আশুলিয়ার টেংগুরী গ্রামে গেলে প্রতিটি বাড়িতেই অবৈধ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। যার কোন বৈধ অনুমোদন দেখাতে পারেনি ব্যবহারকারীরা। আলী আজগর নামের এক বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তিনমাস আগে সাইফুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদারের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন তিনি। প্রতি চুলার জন্য ৪০ হাজার টাকা করে ধার্য হলেও মূল লাইন থেকে তার বাড়ির দুরত্ব একটু বেশী হওয়ায় ঠিকাদারকে ৮ টি চুলার জন্য মোট ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি।

তবে তিনমাসে চূলা জ্বললেও কোন বিল জমা দিতে হয়নি আলী আজগরকে। আলী আজগর রাইজিংবিডির কাছে অভিযোগ করে বলেন, বৈধভাবে সংযোগ পাওয়ার জন্য সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডে আবেদন করলেও দীর্ঘদিনেও তাকে সংযোগ দেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন তিনি।

আশুলিয়ার শ্রীপুর পশ্চিম পাড়ায় গ্যাস দেয়ার কথা বলে প্রতিটি বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন। ইতোমধ্যে সেখানে মুল লাইনের সাথে পাইপ স্থাপন করা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে ফারুক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এলাকায় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত হওয়ায় অনেকেই তার কাছে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য পরামর্শ চেয়েছিলেন। পুরো আশুলিয়ায় যেহেতু অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে, তাই লাইন নেয়ার ব্যাপারে তাদের অনেককেই পরামর্শ দিয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি।

লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান: আশুলিয়ার শ্রীপুর পশ্চিম পাড়ায় গ্যাসের সংযোগ নেয়া হয় একটি বিদ্যুৎ সরঞ্জামাদি উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠানের জমির নিচ দিয়ে। বিষয়টি জানার পর ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।  পরে থানা পুলিশের চাপে তিতাস কর্তপক্ষ সেখানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন তিতাসের কর্মকর্তারা। এসময় তিতাস কর্মকর্তাদের কাছে অবৈধভাবে নেয়া টাকা ফেরত চান তারা। ওই দিন সেখানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পরবর্তীতে আবারো সেখানে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে গোপনে।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড সাভার অঞ্চলের উপ-পরিচালক জয়নাল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবৈধ সংযোগের সাথে তিতাস কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এক শ্রেনীর অসাধু প্রতারক তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ সংযোগ দিয়ে আসছেন। যেখানে অবৈধ সংযোগের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে সংযোগ বিচ্ছিন করে দেয়া হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি। তিনি বলেন, শিগগিরই স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান শুরু করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top