সকল মেনু

ভোলার মনপুরায় পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত

এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা, ১০ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ24বিডি):  ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় বর্তমান শীত মৌসূমে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত পিকনিক পার্টি আর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখর। উপজেলাটি সরকার ঘোষিত কোনো পর্যটন কেন্দ্র নয়। তবুও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে আসছে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। গত কয়েকদিন পূর্বে ঢাকা থেকে ধনাঢ্য দুই ব্যবসায়ী পতœী হেলিকপ্টারযোগে মনপুরার সৌন্দর্য অবলোকন করতে এসে এখানকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মনপুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে বছরের প্রায় সকল মৌসূমে তো আসছেই বিশেষ করে শীতের মৌসূমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভীড় করে পর্যটকরা। এখানে রয়েছে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য মনোমুগ্ধ কর অনেক উপকরণ-অনুসঙ্গ। কিন্তু সরকারীভাবে মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘেষণা না করায় চাহিদা থাকা সত্বেও এখানে বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র, পিকনিক ¯পট বা হোটেল-রেস্তোরা। এখানে যে উপকরণ রয়েছে তা দিয়ে পর্যটকদের নজর কাড়া সম্ভব। মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সরকার সামান্যতম উদ্যোগ নিলে পাশা-পাশি খুব দ্রুত এগিয়ে আসবেন ব্যক্তিগত উদ্যোক্তারা এমনটাই মনে করছেন মনপুরার বিত্তবান ও পর্যটনসচেতন মহল।

মনপুরার বিত্তবান ও পর্যটন সচেতন মহল এও বলছেন, মনপুরার তরুণরা ইন্টারনেটে মনপুরার সৌন্দর্য ও রূপ বর্ণনা করে দীর্ঘদিন যাবৎ যে প্রচারণা চালিয়ে আসছে এবং মনপুরার অতীত ইতিহাস জেনে সোনালী দ্বীপ মনপুরাকে দেখার জন্য পর্যটকরা এমনিতেই আকৃষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার যদি মনপুরাকে শুধুমাত্র পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে তাহলে এখানে আরো প্রচুর পরিমানে দলে দলে পর্যটকরা ভীড় জমাবে। যার ফলে সরকারের প্রচুর পরিমানে রাজস্ব আয় হবে। যদি সরকার শুধুমাত্র ঘোষণা দেয় আর কোনো বিনিয়োগ না করে তাহলেও স্থানীয়রা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিনিয়োগ করে তাদের জিবীকা নির্বাহ করতে পারবে। আর সরকার এ থেকেও প্রচুর পরিমানে রাজস্ব আয় করতে পারবে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রুপালী দ্বীপ মনপুরা। চতুর্দিক থেকে মেঘনা নদী বেষ্টিত সবুজ শ্যামল ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা। সুবিশাল মেঘনা নদী, চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ, বিভিন্ন ধরনের ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগানে সমৃদ্ধ। এখানে না এলে বোঝাই যাবেনা সবুজের দ্বীপ মনপুরায় কী সৌন্দর্য্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের কী অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে পুরনো এই দ্বীপে। বিশ্ব বিখ্যাাত কুয়াকাটার পর শুধুমাত্র মনপুরাতে দাঁড়িয়েই সূর্যোদ্বয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। মায়াবী হরিণ, সূর্যাস্ত-সূর্যোদ্বয়, বিশাল সমুদ্র সৈকত, অতিথি পাখি, বিশাল গরু-মহিষের পাল, মেঘনার মাঝ নদীতে ল্যান্ডিং স্টেশন, ম্যানগ্রোভ বাগান, চৌধুরী ফিশারিজ লিমিটেড, দ্বীপের মত খন্ড খন্ড একাধিক চর, শীতের হাঁস, মহিষের কাঁচা দধি, টাটকা ইলিশ, পুকুরের বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি এসব মিলিয়ে সমৃদ্ধ মনপুরা। মেঘনা বিধৌত পলি দিয়ে গড়া সবুজের বিপ্লবে আন্দোলিত প্রাকৃতিক রূপের অপার লীলাভূমি অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত মায়াবী হরিনের জাদুর পরশ সমৃদ্ধ এই মনপুরাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবী। ভোলা জেলার প্রাচীণ এই দ্বীপকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথমে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন এই দ্বীপের সচেতন মহল।

সকালে ঝিকিমিকি সূর্যের কিরন আর সন্ধ্যার সোনালী আভায় যে মনপুরা দাঁড়িয়ে আছে তার রূপ বর্ণনা শেষ করা প্রচুর সময়ের ব্যাপার। শুধু এটুকু বলা যায়, দেখতে দেখতে ফ্যাঁকাশে হওয়া রাত্রি শেষে সূর্যের সাথে জেগে ওঠে নতুন এক মনপুরা। তাইতো মনপুরার রূপ অবর্ণনীয়। মনপুরা লক্ষাধিক মানুষের প্রানের দাবী মনপুরাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এখন প্রয়োজন শুধুমাত্র সরকারের ঘোষণা। এখানে যে উপকরণ রয়েছে তা দিয়ে পর্যটকদের নজর কাড়া সম্ভব।
এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব নজির আহমেদ মিয়া বলেন, ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আলহাজ্ব আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা কিছুদিন পূর্বে মনপুরায় আসলে এক মতবিনিময় সভায় মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা পাওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মনপুরা একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top