সকল মেনু

উড়ালপথের অপেক্ষায় মেট্রোরেল

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি : ঢাকার আকাশে উড়ালপথে চলার অপেক্ষায় রয়েছে মেট্রোরেল। তবে এখনই নয়, এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো পাঁচ বছর, সেই ২০১৯ সাল পর্যন্ত। আশা করা হচ্ছে, মেট্রোরেলে বিপ্লব ঘটবে পাবলিক পরিবহনে । মুহূর্তেই বদলে যাবে দৃশ্যপট। লাঘব হবে যাতায়াত ব্যবস্থার বিড়ম্বনা।

রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বিশ্বের নবম জনবহুল মেগাসিটি ঢাকার জনসংখ্যা এখন এক কোটি পাঁচ লাখের কাছাকাছি। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট। নগরজীবনের যন্ত্রণার কঠিন তলে ডুবে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এই বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন ভোর হতেই ছোটেন কাজের সন্ধানে। তাদের যেতে হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা আর অফিস-আদালতে।  শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাস যেমন কম, তেমনি ভাড়াও অনেক বেশি। এ ছাড়া কর্মস্থলে যেতে এবং ফিরতে কমপক্ষে গড়ে তিন ঘণ্টা সময় অপচয় হয় এই নগরীর বাসিন্দাদের। সেই হিসাবে  প্রতিদিন নষ্ট হয় তিন কোটি শ্রমঘণ্টা। ক্ষতি হয় হাজার হাজার কোটি টাকার।

মহানগরীর এই যাতায়াত সমস্যা নিরসনে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) মেট্রোরেল চালু করতে যাচ্ছে। ঢাকার উড়ালপথে চলবে এই রেল। রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। পথে থাকবে মোট ১৬টি স্টেশন। প্রতিটি স্টেশনে রেল থামবে মাত্র সাড়ে তিন মিনিট।

মেট্রোরেল লন্ডন, মস্কো, সিঙ্গাপুর ও জাপানে খুবই জনপ্রিয়। এই শহরগুলোর মানুষের জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের দায়িত্বে থাকা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মতিউল ইসলাম চৌধুরী রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।  তিনি জানান, নির্ধারিত সময় ২০১৯ সালেই রাজধানীতে চলবে এটা।

মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, রেলপথ এবং রেলের অবকাঠামো প্রকৌশলের নকশা তৈরির কাজ চলছে। এ বছরের মধ্যে এটা শেষ হবে। তার পরই কাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। অতি দ্রুত শুরু এবং নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হবে নির্মাণকাজ। শুধু নকশা নয়, রেলের টিকিটের ডিজাইন কেমন হবে, তাও তৈরির কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিতে হবে স্মার্ট কার্ড। অটোমেটিক মেশিনে পাঞ্জ করে নির্ধারিত গন্তব্যের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তাদের।

জাপানের নিপুন কোয়েই কোম্পানি লিমিটেড, নিপুন কোয়েই ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, দিল্লি মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড, মট্রো ম্যাকডোনাল্ড লিমিটেড ইন্ডিয়া, মট্রো ম্যাকডোনাল্ড প্রাইভেট লিমিটেড ইউকে কনসালট্যান্সি ফার্ম হিসেবে এই প্রকল্পের নকশা তৈরির কাজ করছে। নকশা তৈরির পর অতি দ্রুত নিয়োগ পাবে কনস্ট্রাকটিং ফার্ম। তারাই মূলত রেলের রাস্তা, স্টেশন ও প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে।

এখন রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল ব্যাংক কলোনি পৌঁছাতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, মেট্রোরেলে সেখানে লাগবে মাত্র ৩৭ মিনিট। প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী উত্তরা, উত্তরা সেন্টার, দক্ষিণ উত্তরা, পল্লবী, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও ক্রসিং, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক স্টেশন হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। পরে এই রেলপথ সায়েদাবাদ থেকে অতীশ দীপঙ্কর সড়ক হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নামে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল। বাস্তবায়ন করবে ডিটিসিএ। ২০১২ সালের জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাস্তবায়নে মোট সময় লাগবে ১১৪ মাস। ২০১৯ সালে রেল চলাচল শুরু হলেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই প্রজেক্ট সচল থাকবে।

প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

রাজধানী থেকে যানজট নিরসনের যে উদ্যোগ রয়েছে সরকারের, মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলে তা ৯০ শতাংশ কমে যাবে বলে মনে করেন এই প্রকল্পের পরিচালক আনিসুর রহমান। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের যাত্রার মধ্য দিয়ে আধুনিক পরিবহন সুবিধা পাবেন নগরবাসী। তাদের সময় বাঁচবে, সেই সঙ্গে ব্যয়ও কমবে।

নান্দনিক হাতিরঝিল, দৃষ্টিনন্দন জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার এবং গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে নগরবাসীকে। বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলছে। এই উড়ালসড়কের পাশাপাশি মেট্রোরেল রাজধানীতে চলা শুরু করলে তিলোত্তমা ঢাকা পাবে নতুন রূপ, এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top