সকল মেনু

নীরব বিপ্লবের পথে জাহাজশিল্প

অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশের জাহাজশিল্প। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও এ শিল্পের রফতানি আয় বাড়ছে ।

এ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করছে। কয়েকটি সমস্যার সমাধান হলে এ শিল্প আগামী এক দশকের মধ্যে তৃতীয় একক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে স্থান করে নিতে পারে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

রফতানির শীর্ষে থাকা পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে চলছে নানা ভাবনা এবং দুর্ভাবনা। ভবিষ্যতে পোশাকশিল্পের ভাগ্যে কী আছে, সেসব নিয়ে ভাবছেন দুর্দশাগ্রস্ত উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা। কারণ এ শিল্পটিও ধ্বংসের জন্য চলছে দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্র। অনেকের মতে, পাট ও পোশাকশিল্পের পর জাহাজশিল্প বাংলাদেশের আর একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হতে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে তৈরি কিছু জাহাজ দেশে-বিদেশে সুনামও অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ শিপ বিল্ডার্স এক্সপোর্টাস এসোসিয়শেন সূত্রে জানা যায়, দেশে জাহাজ নির্মাণ এবং জাহাজ ভাঙা এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ হয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইতোমধ্যে ডেনমার্ক, নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশে জাহাজ রফতানি করা হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় ১২৫টি জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড বছরে গড়ে ২০০টির অধিক জাহাজ আমদানি, ভাঙা ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে নির্মাণ সামগ্রীর জন্য প্রয়োজনীয় লৌহজাত সামগ্রীর জোগান দিয়ে আসছে।

কথা হয় এ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লা হিল বারির সঙ্গে।

সিঙ্গাপুর থেকে মুঠফোনে তিনি জানান, দেরিতে হলেও বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্প বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশে এবং বিদেশে এর চাহিদার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশে পোশাক শিল্প বিশাল আকার ধারণ করার পিছনের কারণ একটাই, তা হচ্ছে অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে মানসম্পন্ন কাজের নিশ্চয়তা। জাহাজ শিল্পের অপার সম্ভাবনার পিছনেও এইদিকটা উল্লেখযোগ্য।

জাহাজ শিল্পের বহুল উন্নতির পিছনে বড় প্রতিবন্ধকতা কি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এ শিল্পের দিকে বেশ সুনজর দিয়েছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্প আজ দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এরপরেও আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। একটি জাহাজ নির্মাণে সাধারণত ছয় থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। তবে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের হয়রানিতো আছেই। বিশেষ করে পরিবেশ ছাড়পত্রের নামে (উদ্যোক্তাদের) হয়রানি করা হচ্ছে চরমভাবে।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, ২০০৫ থেকে জাহাজ নির্মাণ এবং রপ্তানী করা হচ্ছে। ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, মোজাম্বিকসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ রফতানি হচ্ছে। ২০০৫ সালে বিশ্ব জাহাজ রফতানির বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ০.০৩%, ২০০৮ সালে তা বেড়ে ০.৫৭%, ২০১০ সালে ০.৮০% এবং ২০১৩ সালে ০.৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বেসরকারি খাতে আনন্দ, ওয়েস্টার্ন মেরিন এবং হাইস্পিড প্রভৃতি শিপইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, আরও কয়েকটি নতুন শিপইয়ার্ড জাহাজ তৈরিতে আন্তর্জাতিক মান এবং ক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হবে। কোরিয়া, চীন, জাপান ক্ষুদ্র জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে সরে বড় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের দিকে ঝুঁকছে। ফলে বাংলাদেশের সামনে ক্ষুদ্র জাহাজ নির্মাণের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন মালিকরা।

এ খাতের আরেক সফল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শাহজাহান খান। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

তিনি বলেন, এ শিল্পের কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে সরকার জাহাজ বিভাজন ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা-২০১১ জারি করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় শিল্পনীতি ২০১০-এ জাহাজ নির্মাণ ও পরিবেশসম্মত জাহাজ ভাঙাকে অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এস এস শিপিং এন্ড ট্রেডিং এর এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, এ শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পে নিয়োজিত লোক সংখ্যা ২৪ লাখ। এ শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশে ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প নীতিমালা-২০১২’র খসড়াটি দ্রুত পাস করা দরকার বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top