সকল মেনু

সাত মন্ত্রী-সাংসদের দুর্নীতি তদন্তে টিম

 আছাদুজ্জামান, ঢাকা, ২২ জানুয়ারি :  সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকসহ চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং তিন সাংসদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই সাতজন সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সাংসদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি তদন্তের জন্য ছয়জন উপপরিচালক ও এক সহকারী পরিচালককে দায়িত্ব দেয়।

প্রাথমিক অভিযুক্ত অন্যরা হলেন : সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ এনামুল হক এবং চট্টগ্রাম-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদি, ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ আসলামুল হক ও সাতক্ষীরার সাংসদ আব্দুল জব্বার।

এদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তারা হলেন উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম, খায়রুল হুদা, আহসান আলী, নাসির উদ্দিন, সৈয়দ ফাইয়াদ আলম, তাহসিনুল হক ও সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান।

তাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

রুহুল হক : আ ফ ম রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১০ গুণ। ব্যাংক ব্যালেন্সের অধিকাংশ তার স্ত্রী ইলা হকের নামে। পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ছিল ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রী ইলা হকের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল মাত্র চার লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন সাত কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬৫ গুণ। অন্যদিকে রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুসারে, সামগ্রিকভাবে ২০০৮ সালের তুলনায় তার অস্থাবর সম্পদ ৪ গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে তিনি এবং তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল চার কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০১৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স হিসেবে রাখা আছে। এককভাবে তার স্ত্রী ইলা হকের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে ৮ গুণ। আগে তার নামে অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মোট ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের। এখন তা আট কোটি ৩৯ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

আব্দুল মান্নান খান : পাঁচ বছর আগে আব্দুল মান্নান খানের সাকল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেটা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে তার বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে তার সম্পত্তি ১০৭ গুণ বেড়েছে।

মাহবুবুর রহমান : মাহবুবুর রহমান গত পাঁচ বছরে ২০ একর জমি থেকে দুই হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক হয়েছেন। পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামে এখন এক কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। নিজের ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা।
২০০৮ সালের হলফনামায় সাতটি আয়ের উৎস খাতের মধ্যে তার একমাত্র আয় ছিল খণ্ডকালীন রাখি মালামাল থেকে। যার পরিমাণ ছিল বছরে মাত্র দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি এখন মৎস্য উৎপাদন ও বিক্রয়কারী। আর এ খাত থেকে তার বছরে আয় হচ্ছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও এখন তার ওপর নির্ভরশীলদের ব্যবসা থেকে বছরে আয় তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া চাকরি থেকে তার বছরে আয় ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা।

আবদুর রহমান বদি : আবদুর রহমান বদি জীবনে প্রথম সাংসদ হয়ে পাঁচ বছরে তার আয় বেড়ে গেছে ৩৫১ গুণ। আর নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। অভিযোগ রয়েছে, হলফনামায় বদি কেবল আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও টেকনাফে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে এ টাকা অর্জন করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। হলফনামা অনুসারে সাংসদ বদির এখন বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছেন, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। আর ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা। তখন (২০০৮) বিভিন্ন ব্যাংকে আবদুর রহমানের মোট জমা ও সঞ্চয়ী আমানত ছিল ৯১ হাজার ৯৮ টাকা। পাঁচ বছরের মাথায় এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২৩৭ টাকা। তার হাতে ২০০৮ সালের নভেম্বরে নগদ টাকা ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৪৮ টাকা। আর এখন ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া এখন স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৫ টাকা।

আয়কর বিবরণীতে তিনি দেখিয়েছেন সাত কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৮ টাকা। আর নিট সম্পদের পরিমাণ বলা হয়েছে নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৩ টাকার। পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালের আয়কর বিবরণী অনুসারে, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৮৮০ টাকা। আর নিট সম্পদ ছিল ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৩ টাকা।

আসলামুল হক : নির্বাচন কমিশনে ঢাকা-১৪ আসনের সরকারদলীয় এই সাংসদের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় বলেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী মাকসুদা হক ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক। এসব জমির দাম দেখিয়েছেন ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা।
আর দশম সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছেন, আসলামুল হক ও তার স্ত্রী এখন ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) জমির মালিক। জমির দাম উল্লেখ করা হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। দুই হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচ বছরে স্বামী-স্ত্রীর জমি বেড়েছে ১৪০ একরের বেশি। আর বাড়তি এই জমির মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, যা অবিশ্বাস্য।

পাঁচ বছরে আসলামুল হকের শুধু সম্পদই বাড়েনি, বেড়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতাও। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণী পাস। আর এখন তিনি বিবিএতে (স্নাতক ব্যবসায় প্রশাসন) অধ্যয়নরত বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

এনামুল হক : ২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তার বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পরে এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে তার আয় হয় ৫০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের সাত লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় নির্ভরশীলদের কোনো আয়ের উৎস নেই। তার নিজের, স্ত্রীর ও নির্ভরশীলদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই।

পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর থাকা দুই কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়। যার মধ্যে এবার নিজের হাতে নগদ রয়েছে ১০ লাখ টাকা ও স্ত্রীর হাতে পাঁচ লাখ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে আছে আট লাখ ৫৮ হাজার ৯১ টাকা ও স্ত্রীর নামে এক লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top