সকল মেনু

রংপুরে চারজন নিহত

রংপুর অফিস: লালমনিরহাটের পাটগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগনেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে শিবিরের সভাপতি সাধারন সম্পাদকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ শিবির ও ১ আওয়ামী লীগনেতা রয়েছেন।
সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ, আহত হয়েছে ৪০ জন। এসময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা আওয়ামী লীগনেতাকর্মীদের ২০টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। আহতদের রংপুর, লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে জামায়াত-শিবির এ সহিংসতা চালায়। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদে মঙ্গলবার লালমনিরহাট জেলায় সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানায়, জামায়াতনেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরের ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতাল ছিল গতকাল রোববার। হরতালে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশংকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়ক এলাকায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু প্রশাসনের এ ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পাটগ্রাম উপজেলার শরোরবাজার-কাফিরবাজার-আলাউদ্দিননগর এলাকায় পাটগ্রাম স্টেশন থেকে পার্বতীপুরগামী যাত্রীবাহি ট্রেন আটকে দেয় এবং রেল লাইন উপড়ে ফেলে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ-বিজিবি
দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি চালায়। পুলিশ ও বিজিবি আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি শুরু করে। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত চলে এ ঘটনা। এ সময় ঘটনাস্থলেই পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি কমর উদ্দিনের ছেলে মনিরুল ইসলাম(২৩) ও জোংড়া ইউনিয়নের আলাউদ্দিন গ্রামের করিম আলীর ছেলে আব্দুর রহিম(২৪) গুলিতে মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের বাংলাবাড়ী এলাকার
মোক্তার হোসেনের ছেলে গুলিবিদ্ধ শিবিরকমী সাজু মিয়া(২৫) ও দহগ্রামের হারুনুর রশিদকে(২৭)। তাদের আশংকাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাজু মিয়া মারা যান। তবে গুলিবিদ্ধ হারুনুর রশিদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থায়ও আশংকাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার খবর সংগ্রহন করতে
গেলে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জোংড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদুন্নবী শাহীনের বড়ভাই শাহ কামাল আজাদ সমকাল পাটগ্রাম প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম হোসেনকে মারপিট করেন। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম হাসপাতালে পাঠান। এসময় পুলিশসহ আহত হয় অন্তত ২৫ জন। পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সোহরাব হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাবীব ও নাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে বাড়তি পুলিশ ও বিজিবি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । জামায়াত-শিবিরে নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদে আবারও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ করতে করতে থাকে। তারা মিছিল নিয়ে পাটগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের এলাহী লাবলু ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কুদরত-এলাহী বাবুলের বাড়ী-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে এবং পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা উপজেলার বিভিন্ন
এলাকায় আওয়ামী লীগকর্মী সমর্থকদের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে জামায়াত-শিবিরকমীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় পৌর আওয়ামী
লীগের ৬নং ওয়ার্ডের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মিন্টু মিয়াকে(৩৭) কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ রেললাইনের উপর ফেলে দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। একই সময় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদের ছোট ভাই আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাজী কিবরিয়া(৩৫) ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রেহবানুল
কবীর রুবেন্সকে (৩৬) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখা হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। পুলিশ ও এলাকাবাসি আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে পরে তাদের লালমনিরহাট ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসব ঘটনায় শতাধিক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে ও ৫০ রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ । পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু ও সাধারন সম্পাদক রুহুল আমীন বাবুল বলেন, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা শান্তি প্রিয় পাটগ্রামে নৈরাজ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা গুলি করে ও পিটিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা ও আহত করেছে। তারা বলেন, রাজনৈতিকভাবেই আমরা তাদের মোকাবিলা করব।’এ ব্যাপারে জামায়াতের সাবেক উপজেলা আমীর ও জেলা কমিটির সূরা সদস্য প্রভাষক আতাউর রহমান জানান, ‘পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে উপজেলা শিবির সভাপতি মনিরুল ইসলামসহ ৩জন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হারুনুর রশিদসহ কমপক্ষে ২০-৩০ জন আহত হয়েছে।’
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রফিকুল হক ৪ জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ১৪৪ধারা উপেক্ষা করে উপজেলার শরোরবাজার-কাফিরবাজার-আলাউদ্দিননগর এলাকায় ট্রেন আটক করে এবং ব্যাপক সহিংসতা শুরু করে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে পুলিশের উপর ইটপাটকেল, ককটেল ও গুলি
ছুড়লে পুলিশও পাল্টা টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, শর্টগানের গুলি ও রাইফেলের গুলি ছুড়ে।’পাটগ্রাম থানার ওসি সোহরাব হোসেন, জানান, এব্যাপারে এখনও কোন মামলা হয়নি। তবে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলার সবরকম চেষ্টা চলছে। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এদিকে পুলিশের গুলিতে ৩ জামায়াত শিবিরনেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার জামায়াত লালমনিরহাট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা জামায়াতের আমীর অ্যাভোকেট মোঃ আব্দুল বাতেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top