সকল মেনু

২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস- প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান

KU Sculpture .এম এইচ হোসেন, খুলনা থেকে:   ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির
মধ্যে রয়েছে সকাল ৯-৪৫ মিনিট থেকে দিনব্যাপী শহীদ মিনার চত্ত্বরে রক্ত গ্রুপিং, সকাল ১০ টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী,বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬ টায় রয়েছে শহীদ মিনার চত্ত্বর, অদম্য বাংলা ও কটকা স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্জলন। এছাড়া ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা, হলসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘদিনের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারী গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই। ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪ টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাশ শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। পরে একই বছরের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয় প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের ২৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে। মহানগরী খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্ল­ামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকাটি ছিলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক বধ্যভূমি। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এবং ভবিষ্যতের চাহিদার নিরিখে এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা,
এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স এবং বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মত বিষয় দেশে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কোর্স খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু করা হয়। এছাড়া স্থাপত্য ও ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কোর্স ঢাকার বাইরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু হয় । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়। বর্তমানে এখানে ৫টি স্কুলের(অনুষদ) অধীনে ২১টি ডিসিপ্লি­ন  (বিভাগ) এবং একটি ইনস্টিটিউটে(চারুকলা) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রী, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, এম ফিল, এবং পিএইচ ডি. প্রদান করা হয়। স্কুলগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান এন্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থ, রসায়ন বিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন। জীব বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে ফরেষ্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি, ফিশারিজ এন্ড
মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রোটেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফার্মেসী ও সয়েল সায়েন্স ডিসিপ্লি­ন। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লি­ন। কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজী এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লি­ন। সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় আছে অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান ও ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লি­ ন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ইনস্টিটিউটের নাম চারুকলা এছাড়া সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস), রিসার্স সেল, মডার্ণ ল্যাংগুয়েজ সেন্টার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৩৪০জন। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশী, এর মধ্যে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ১২ জন। এছাড়া কর্মকর্তা ২০১ জন এবং কর্মচারী রয়েছে ৩ শতাধিক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিশেষ করে নবীন শিক্ষকবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, অষ্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে উল্লে­খযোগ্য সংখ্যায় স্কলারশীপ পাচ্ছেন। দেশী-বিদেশী সংস্থার গবেষণা সহায়তাও বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষা ও গবেষণা কর্মকা-ের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক
দাতা সংস্থার বিশেষজ্ঞগণ, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। কানাডা, জাপানস্হ কয়েকটি দেশের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ বাড়াতে ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-
চ্যান্সেলরের বাসভবন, তিনটি আবাসিক হল, মেডিকেল সেন্টার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫টি বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক শাখা, ডাকঘর ও মসজিদ। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জ্ঞান সহায়তায় রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন ও শার্লী ইসলাম গ্রন্থাগার ভবন।এছাড়া ছাত্রদের জন্য আরও একটি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে এবং মেয়েদের জন্য আরও একটি আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দেশের তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার বিকাশে স্থানীয় সম্পদ আহরণ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন জনসম্পদ সৃষ্টি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নেয়া এবং সম্ভাবনার নতুন নতুন দিগন্ত
উন্মোচনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার কাজ এগিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা সাফ্যল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রসর হচ্ছে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। ২৩তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃত অর্থে বিগত দিন বা বছরের কার্যক্রম মূল্যায়ণের দিন। আমাদেরকে অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মানসেই নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। এজন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা জরুরী হয়ে পড়েছে। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের দেশ প্রেম বৃদ্ধি পাবে ও বাংলাদেশকে উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে সবাই সচেষ্ট হবেন বলে তিনি মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top