সকল মেনু

হরতালের প্রথম দিনে খুলনায় অচলাবস্থা

Khulna Hortal pic-10.11.13 jpg এম এইচ হোসেন, খুলনা থেকে :  ১৮ দলীয় জোট আহুত ৮৪ ঘন্টার হরতালের প্রথম দিন রবিবার কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মহানগরীসহ খুলনা জেলার ৯ উপজেলা। বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে হরতালের প্রথমদিন অতিবাহিত হয়েছে। সকাল থেকেই জোটভূক্ত বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মিছিল ও পিকেটিং চলেছে সমগ্র খুলনা জুড়ে। হরতাল চলাকালে খুলনার অফিস আদালত, ব্যাংক বীমার প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপনীবিতান, শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে রিক্সা-ভ্যান চললেও কোন ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করেনি। সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূর পালার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। তবে  লঞ্চ ও ট্রেন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। রোববার ভোর থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। যে কোন ধরনের নাশকতা, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এদিকে হরতালে পুলিশকে সহায়তার মাধ্যমে তিন প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি থাকছে র‌্যাবের নিয়মিত টহল। হরতালে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ রাজপথের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-সহকারী পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম বলেন, মহানগরী জুড়ে কঠোর পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন প্রকার নাশকতা করতে দেয়া হবে না।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ সফিকুর রহমান জানান, রোববার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে যে কোন ধরনের অরাজকতা প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। কোন রকম অঘটন ঘটানোর চেষ্টা হলে ছাড় দেয়া হবে না।

বিজিবি খুলনা অঞ্চলের পরিচালক লেঃ কর্ণেল মোঃ তায়েফ উল হক জানান, রোববার থেকে শুরু হওয়া হরতালে তিন প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হরতাল সমর্থকরা নগরীর বৈকালী মোড়ে দাঁড়ানো খুলনাগামী ৪টি বেবীটেক্সী ভাংচুর করে। এসময় ওই এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ৮৪ ঘন্টার হরতালের সমর্থনে গতকাল খালিশপুর থানার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। তারা পলিটেকনিক মোড় থেকে মিছিলটি বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বৈকালী মোড়ে এসে শেষ করে। এ সময় ওই স্থানে দাড়ানো খুলনা-থ-১১-০০৫২, ঢাকা মেট্রো-থ-১১-৪৩০, ঢাকা মেট্রো-থ-০২-০১২৩ নম্বরসহ খুলনাগামী ৪টি বেবীট্যাক্সি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। এ সময় গাড়ী ৪টির সামনের গ্লাসসহ বডি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। হরতাল সমর্থকরা তিনটি বেবীট্যাক্সি ভাংচুর করে। সকাল সাড়ে ৮টায় পাওয়ার হাউজ মোড়স্থ মীনা বাজারের সামনে পিকেটাররা দুটি ট্রাক, জিন্নাপাড়ায় ৩টি ইজিবাইক ভাংচুর করে। সকাল ৯টায় আমতলা মোড়ে পিকেটাররা একটি ইজিবাইক ভাংচুর করে। এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী এসএ পরিবহনের একটি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান ফকিরহাট পৌঁছালে সকাল ৬টায় পিকেটাররা তা ভাংচুর করে। সকাল সোয়া ৮টায় হরতাল সমর্থকরা নগরীর শান্তিধাম মোড়ে সাতক্ষীরা থেকে আসা দৈনিক দৃষ্টিপাতের সংবাদপত্রবাহী একটি পিকআপ ভাংচুর করে। সকাল পৌণে ১০টার দিকে কে বা কারা খুলনার সিএমএম আদালতের সামনে আজাদ নার্সারীর মধ্যে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। বিকট শব্দে ককটেলটি বিস্ফোরিত হলে আদালতপাড়ায় ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর পিটিআই মোড় থেকে ১৮ দলীয় জোটের একটি মিছিল বের হয়ে রয়্যাল মোড়, শান্তিধাম মোড়, ফেরীঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, থানা মোড় হয়ে কেডি ঘোষ রোডস্থ মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, স্বেচ্ছাসেবকদল, যুবদল, শ্রমিকদল নগরীতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসে। এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই। বক্তব্য রাখেন কেসিসির মেয়র মোঃ মনিরুজ্জামান মনি, জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম, বিজেপি সভাপতি এ্যাড. লতিফুর রহমান লাবু, পিপলস লেিগর সভাপতি ডা. সৈয়দ আফতাব হোসেন, বিএনপি নেতা এস এম শফিকুল আলম মনা, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সৈয়দা নার্গিস আলী, অধ্যাপক ডাঃ গাজী আব্দুল হক, এ্যাড. এম এ আজিজ, মোল্লা আবুল কাশেম, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, এ্যাড. এস আর ফারুক, সিরাজুল ইসলাম, রেহানা ঈসা, মুসলিম লীগের মুন্সি সোলাইমান, বিজেপির সিরাজউদ্দিন সেন্টু, বিএনপি নেতা ফখরুল আলম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আরিফুজ্জামান অপু, মনিরুজ্জামান মন্টু, শেখ আব্দুর রশিদ, শেখ হাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম বাবু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, আবু হোসেন বাবু, জামায়াতের মোঃ ওলিউল্লাহ, মুসলিম লীগের মোঃ মহিউদ্দিন, বিএনপি নেতা মোল্লা খায়রুল ইসলাম, মেহেদী হাসান দীপু, মহিবুজ্জামান কচি, শফিকুল আলম তুহিন, শের আলম সান্টু, আজিজুল হাসান দুলু, এ্যাড. গোলাম মাওলা, আজিজা খানম এলিজা, হাসিবুল হক বাবলা, আনোয়ার হোসেন, জালু মিয়া, ইকবাল হোসেন খোকন, সাদিকুর রহমান সবুজ, ইউসুফ হারুন মজনু, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, একরামুল কবির মিল্টন, শফিকুল ইসলাম হোসেন, আব্দুর রহিম বক্স দুদু, এমরানুল কবির নাসিম, একরামুল হক হেলাল, নিয়াজ আহমেদ তুহিন, হাসান মেহেদী রিজভী, হাসানুর রশিদ মিরাজ, শামসুজ্জামান চঞ্চল, নাজিরউদ্দিন আহমেদ নান্নু, আরিফুজ্জামান আরিফ, কামরান হাসান, এ্যাড. তছলিমা খাতুন ছন্দা, এনামুল কবির মোল্লা, এস এম কামাল হোসেন, এবাদুল হক রুবায়েদ, ছাত্রশিবিরের মীম মিরাজ হোসাইন, শেখ ইমাম হোসেন, হাফিজুর রহমান মনি, বদরুল আনাম, মীর কবির হোসেন, মোঃ শাহজাহান, আফজাল হোসেন পিয়াস, মেজবাহউদ্দিন মিজু, রবিউল ইসলাম রবি, আসিফ ইকবাল লিটন, ওয়াহিদুর রহমান দীপু, শেখ ফারুক হোসেন, শেখ আব্দুল জব্বার, এ্যাড. আনিসুর রহমান, এ্যাড. মশিউর রহমান নান্নু, সাইফুল ইসলাম, মহিউদ্দিন টারজান, নাসির খান, বাচ্চু মীর, উত্তম কুমার, হাসনা হেনা, আবু সাঈদ শেখ, মাহবুব হোসেন, জি এম রফিকুল হাসান, মাহবুব হাসান পিয়ারু, মোস্তফা কামাল, মযেজউদ্দিন চুন্নু, মোহাম্মদ আলী, নুরুল ইসলাম লিটন, মেহেদী হাসান সোহাগ, ইকবাল হোসেন, সাব্বির আহমেদ, আব্দুর রব, শেখ জাফিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারের সকল হিসাব নিকাশ ওলট পালট হয়ে গেছে, তারা এখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বেসামাল আচরন করছে। সরকার মনে করেছিল, বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার এবং র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করে আন্দোলন দমন করবে। কিন্ত ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন ও রক্ত দান কখনো বৃথা যায়না। রবিবার থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম বিতরনকে প্রহসন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, পিএস-এপিএস’রা বিদেশে পালানোর পাসপোর্ট ভিসা সংগ্রহ করছে। তাদের পাঁচ বছরের অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের হিসাব কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে, এ আতংকে থরোকম্প শুরু হয়েছে। এখন একটিমাত্র গণঅভূত্থানে তাদের পতন ঘটবে। বক্তারা চলমান ৮৪ ঘন্টার হরতাল শেষে আরো কঠোর কঠিন কর্মসূচি আসছে উল্লেখ করে বলেন, ১৮ দলীয় জোটের নেতকর্মীদের সাথে আপমার জনগন ঐক্যবদ্ধ হযে সে কর্মসূচিকে সফল করবে।

এদিকে হরতালের সমর্থনে বিকেলে ও সন্ধ্যায় নগরীর সকল থানা ও ওয়ার্ডে মিছিল ও পিকেটিং হয়েছে।

এরআগে শনিবার রাতে খালিশপুর থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ দলের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আরিফ, ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রানা, ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী নয়ন, ছাত্রদল নেতা গোপাল, আলাউদ্দিন ও সাইফুল। রবিবার তাদেরকে আদালতে চালান করে পুলিশ।

হরতালে জামায়াতে ইসলামী নগরীর থানায় থানায় ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছে। হরতালের সমর্থনে নগরীর হাজী মহসীন রোড, পি টি আই, রয়্যাল মোড়, গল্লামারী, টুটপাড়া কবর খানা মোড়, বৈকালী মোড় ও গোয়ালখালী মোড় এলাকায় পিকেটিং করেছে।

৮৪ ঘন্টা হরতালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খুলনা ১৪ দল। বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান। বক্তৃতা করেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল আহমেদ তপন, ফেরদৌস আরা চান ফরাজী, কাজী এনায়েত হোসেন, এমডিএ বাবুল রানা, শ্যামল সিংহ রায়, মল্লিক আবিদ হোসেন কবির, আবুল কালাম আজাদ, আলাউদ্দিন আল আজাদ মিলন, যুবলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল, শেখ আবু হানিফ, হাফেজ শামীম, দেব দুলাল বাড়ৈই বাপ্পী, শফিকুল ইসলাম পলাশ ও আসাদুজ্জামান রাসেল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top