সকল মেনু

কুয়াকাটায় ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহালদশা : পর্যটকের আকাল

kalapara-01 (06-11-13) 01মেজবাহউদ্দিন মাননু, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া:  দুই দফায় ১২০ ঘন্টার টানা হরতালে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার লোকসানের ধকলে পড়েছেন। পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ব্যবসায় ধকলের কবলে পড়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন হোটেল মোটেল মালিক সমিতির লোকজন। কুয়াকাটায় পুরো বছরের পর্যটন ব্যবসা চলে শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে। এখানে এই ব্যবসা এখনও মৌসুমী ব্যবসা নির্ভর রয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবছরও কোরবানি পরবর্তী সময় থেকে পর্যটন মৌসুম টার্গেট করে কুয়াকাটার সকল ব্যসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। প্রায় একমাস ধরে পর্যটকের আকালে ব্যবসায় যেন ধস নেমেছে। কুয়াকাটায় ১০টি অত্যাধুনিকসহ অন্তত ৪০টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের হলিডে হোমস। একেকটি আধুনিক হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা, বিদ্যুত, পানির বিলসহ মাসে অন্ততপক্ষে দেড়লাখ টাকা খরচ রয়েছে। এসব ব্যয় মেটানোর পরেও পর্যটন মৌসুমে অন্তত প্রতি মাসে এক লাখ টাকা ব্যবসা করে আসছিল শীতের মৌসুমে। বছরের সাত মাসের মন্দাভাব কাটানের জন্য এই পাঁচটি মাস টার্গেট করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছরে তাদের বেহালদশা। আবাসিক হোটেল বীচ হেভেন এর অপারেশন ম্যানেজার শামীম রেজা রঞ্জু জানালেন, তার হোটেলের ৪০টি ডাবল কক্ষের সব খালি। একই তথ্য জানালেন, পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার মুহাম্মদ বায়েজিদ আসরাফ। তাদের ৭৬টি কক্ষের মাত্র একটিতে পর্যটক রয়েছে, বাকিসব খালি পড়ে আছে। হোটেল নীলাঞ্জনার ৩৯ টি কক্ষের সব ক’টি খালি পড়ে আছে। বুধবার দুপুরে এদের সঙ্গে কথা হয়। এভাবে অন্তত ৪০ টি আবাসিক ও ২৫টি খাবার হোটেলের দৃশ্য একই। ঝিনুক দোকানিরা দোকান খুলে বসে থাকলেও নেই কোন বেচাকেনা। ঝিনুকসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকানি মো. আবু সালেহ জানালেন ব্যবসায় এমন দুরাবস্থা আগে কখনও দেখেন নি। এভাবে পর্যটক নির্ভর দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এখন লোকসানের বোঝায় কাহিল হয়ে পড়েছেন। তারা এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। কুয়াকাটায় শীত মৌসুম নির্ভর ব্যবসার পাশাপাশি কার্তিকের পুর্ণিমায় রাস উৎসব কেন্দ্রিক এবছরের ব্যবসায়ও অনিশ্চয়তার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হরতালসহ রাজনৈতিক মহা অনিশ্চয়তার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাস উৎসব নিয়েও আয়োজকরা রয়েছেন চরম উৎকন্ঠায়। এই কার্তিকের পুর্ণিমায় রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। মহা অনিশ্চয়তা নিয়ে তারপরও প্রস্তুতি চলছে আয়োজকদের। প্রতি বছর প্রায় অর্ধলাখ পুন্যার্থী রাস পুর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটায় সমবেত হন। কুয়াকাটায় পুর্ণিমায় পুণ্য¯œান শেষে কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে পাঁচদিন ব্যাপী রাস উৎসবে মিলিত হন এসব পুণ্যার্থী। আর এই উৎসব কালীন ব্যবসার পসরা সাজিয়ে থাকেন কুয়াকাটাসহ কলাপাড়ার গোটা উপজেলার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবছর শীত মৌসুমের শুরুতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি টানা দুই দফায়kalapara-01 (06-11-13) 02 ছয়দিনের হরতালে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শত শত ব্যবসায়ী। দিন যত সামনে এগুচ্ছে ততই এদের উৎকন্ঠা চরম ভাবে বাড়ছে। কারণ এই কয়টি মাসে চুটিয়ে ব্যবসার প্রস্তুতি থাকে এখানকার ব্যবসায়ীদের। কিন্তু জামায়াত-বিএনপির ডাকা হরতালে ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। কোথাও কোন পর্যটকের আগমন নেই। খাবার হোটেল থেকে শুরু করে আবাসিক হোটেল সব খালি পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। বেচাকেনা নেই। এমনকি ক্ষুদে চায়ের দোকানগুলোতে পর্যন্ত নেই কোন খদ্দের। সৈকতের বেলাভুমে নেই কোন পর্যটকের পদচারণা। পর্যটকের আকালে সব যেন খাঁ খাঁ করছে। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় তাদের এবছরের ব্যবসা লাটে উঠেছে। ব্যবসায় দৈন্যদশায় তারা এখন চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন। জানালেন, বহু কাস্টমার হোটেলে আগাম বুকিং দিয়ে বাতিল করেছে। তাদের এখন টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। আবার মৌসুমের বাকি দিনেও না আসার শঙ্কা কাজ করছে অধিকাংশ পর্যটকের মনে-এমন শঙ্কায় রয়েছেন হোটেল মালিকরা। মোট কথা হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় কুয়াকাটার সকল শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা এ বছরের ব্যবসা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top