সকল মেনু

মাঠে নেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব, তৃণমূলে ক্ষোভ

xbnp_logo20131105010023.jpg.pagespeed.ic.V8QmVKUng7আফিফা জামান, ঢাকা, ৫ নভেম্বর :  নির্বাচনকালীন নিদর্লীয় সরকারের দাবিতে ১৮ দলের ডাকা হরতালে রাজপথে পাওয়া যাচ্ছে না বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের প্রবল আকাঙ্খা থাকা সত্ত্বেও মাঠে থাকছেন না এসব নেতা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূল নেতাকর্মী। তবে দলটির নেতারা বলছেন, পুলিশের মারমুখী আচরণ অতীতের যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে সরকার বিরোধী দলকে শুধু বাধাই দিচ্ছে না, চরম দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। এজন্য বিরোধী দল মাঠে নামতে পারছে না। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ডাকা হরতালে শীর্ষ নেতাদের রাজপথে অনুপস্থিতির বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় থেকে নেতৃত্ব দিতে বলা হয়েছে।’ কিন্তু মহাসচিবের বক্তব্য অনুযায়ী বাস্তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে রাজধানীতে পিকেটিংয়ের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিএনপির চেয়াপারসনের উপদেস্টা শামসুজ্জামান দুদু হটনিউজকে বলেন, সরকার বিরোধী দলকে দমনে স্বশস্ত্র কায়দায় যুদ্ধে নেমেছে বলে মনে হচ্ছে। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে ধ্বংস করতে যেভাবে গুলি চালানো হয়, সেভাবে পাখি মারার মতো গুলি করছে প্রশাসন।’ ‘পিকেটারদের সাথে নারকীয় আচরণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাথে রয়েছে সরকারের পেটোয়া বাহিনী। এভাবে অত্যাচার করলে নেতাকর্মীরা গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করবে কিভাবে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।’ ১৮ দলের দ্বিতীয় দফায় ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে দেখা গেছে, অন্যান্য হরতালের মতোই সোমবারের হরতালেও রাজধানীতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউই রাজপথে নামেন নি। ‘পিকেটিং’ বা মিছিল নিয়ে কর্মীদেরও উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি স্থানে মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ছাড়া পিকেটিংয়ে মাঠে দেখা যায় নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক নেতা বলেন, ‘এখনকার হরতাল হওয়া উচিত হরতালের মতো। সিনিয়র নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন, এতে তৃণমূল উজ্জীবিত হবে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ আমাদের ভালো লাগছে না। এভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে দাবি আদায় হবে না।’ প্রতিপক্ষকে বিএনপি অনেক সুযোগ দিয়েছে মন্তব্য করে এ নেতা বলেন, ‘গ্রেফতারের ভয় করলে আন্দোলন হবে না। যত দমন-নিপীড়ন, গ্রেফতার বাড়বে আন্দোলন ততই জোরদার হবে।’ দলের প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন হটনিউজকে বলেন, ‘দেশে এখন গণতান্ত্রিক অধিকারের ছিটেফোটাও নেই। মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, হরতাল গণতন্ত্রে মৌলিক অধিকার। অথচ সরকারের ইশারায় পুলিশ কাউকে দাড়াতেই দিচ্ছে না।’ এসব বাধা সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ মিছিলকারীদের উপর বন্ধুক তাক করে গুলি করছে। এসব করে আন্দোলন দমানো যাবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সরকারের পতন ঘটাতে জনগণ সময় মতো ঠিকই রাজপথে নেমে আসবে বলে মনে করেন বিএনপির এ নেতা।’ তবে দলের আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন ভিন্ন কথা। হটনিউজকে  তিনি বলেন, ‘শুধু পুলিশের নির্যাতনের কারণে নয় রাজধানীতে আন্দোলন জমাতে না পারার অন্য কারণ রয়েছে। আগে সেই জায়গায় সংস্করণ আনতে হবে। আন্দোলন সফল করতে দলের মধ্যে অনেকের অনিচ্ছা রয়েছে এমন ইঙ্গিতও দেন তিনি।

নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। অন্যদিকে সরকার সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচনের পথে রয়েছে সরকার। এ অবস্থায় বিএনপির ‘ডু অর ডাই’ ফর্মূলাই এগোনোর পরিবর্তে অন্দরমুখিতা ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তাদের মন্তব্য রাজনীতির এ পর্যায়ে এসে বিএনপির আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতি দলের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে তুলবে। সেই সঙ্গে আন্দোলনের সফলতা ব্যর্থতায় রুপান্তরের সম্ভবনা রয়েছে। এদিকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮ দলের দ্বিতীয় দফার হরতালের শুরু থেকেই দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভিতরেই অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। কার্যালয়ের ভিতরে রয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহীন। এরা আগে প্রথম দফায় টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালেও মহাসচিবসহ এসব নেতা রাতদিন কার্যালয়ের ভিতরেই অবস্থান করেছিলেন। অন্যদিকে হরতালের কারণে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। সতর্ক অবস্থা প্রস্তত রাখা হয়েছে জলকামান, প্রিজন ভ্যানসহ প্রযোজনীয় সাজোয়া যান। এছাড়া ওই এলাকা ঘিরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয় রয়েছে। নয়াপল্টনে দলটির  তা-কর্মীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এর আগে হরতালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কিছু নেতা-কর্মী জড়ো হতেন। গত হরতাল থেকে সেটি আর দেখা যাচ্ছে না। তবে সময় হলেই অসহযোগ আন্দোলনের চিত্র দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা মহাসনগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম। হটনিউজকে তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের কাছ থেকে গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাস্তায় দাঁড়ানোর মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এরপরও রাজধানীতে আন্দোলন হচ্ছে। সময় অনুযায়ী সেটি চূড়ান্ত রুপ নেবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে। মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলন কতটুকু জমলো সেটি বড় কথা নয়, ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি আর দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণ সরকারকে ত্যাগ করেছে সেটিই বড় কথা।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top