চট্টগ্রাম নোয়াখালী লিড নিউজ সর্বশেষ খবর সারাদেশ

আয় বৃদ্ধি-ব্যয় সংকোচন: পাল্টে গেছে বিআরটিসি সোনাপুর বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

কামাল হোসেন মাসুদ, নোয়াখালী: আয় বৃদ্ধি-ব্যয় সংকোচন এবং যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআরটিসি) একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নোয়াখালীর সোনাপুর বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মো. তাজুল ইসলামের দিকনির্দেশনায় গত আড়াই বছরে বদলে গেছে এ বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সার্বিক চিত্র। গাড়ি চালক প্রশিক্ষণ, অচল গাড়ি সচল, যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন এবং আয় বৃদ্ধিতে অতীতের সব রেকর্ড ছেড়ে। বিআরটিসি সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে বেড়েছে আস্থা ও বিশ্বাস।

সোনাপুর বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. ওমর ফারুক মেহেদী জানান, বিআরটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান ২০২১ সালের ৭ জুলাই যোগদানের পর থেকে তার সময়োপযোগী দিকনির্দেশনায় সোনাপুর বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে। এই সময়ে ডিপোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শোভা বর্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত; প্রশিক্ষণ-প্রযুক্তি-ডকুমেন্টেশনে ডিজিটালাইজেশন; যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন; কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার উদ্যোগ এবং আয় বৃদ্ধি-ব্যয় সংকোচন নীতিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়; যার কারণে এক সময়ের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি এখন লাভজনক এবং একটি উজ্জল সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

গত আড়াই বছরে সোনাপুর বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হচ্ছে ডিপোর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ; দৃষ্টি নন্দন সীমানা প্রচীর; প্রধান ফটকে ডিজিটাল সাইনবোর্ড স্থাপন; গার্ডরুম নির্মাণ; সুসজ্জিত অফিস কক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; অফিস যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্টারকম স্থাপণ; প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণি কক্ষের ব্যবস্থা; পাঠদানে প্রজেক্টরের ব্যবহার; ষ্টাফদের ডিজিটাল হাজিরা ও পোশাকের ব্যবস্থা; হালকা ড্রাইভিং-এ অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু; নারী, পুরুষ প্রশিক্ষণার্থী ও যাত্রীদের জন্য পৃথক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা; বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন এবং জাতীয় শোক দিবসসহ বিভিন্ন দিবস পালন।

গত আড়াই বছরে এ বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৮শ ৪৪ জনকে হালকা যান প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বেসিক (হালকা) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ৩৩৮ জন পুরুষ ও ৬ নারীকে। সেইফ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ৪৮৫ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারীকে। ডিপোতে রয়েছে ৭টি প্রশিক্ষণ কার, ১টি প্রশিক্ষণ জিপ ও একটি প্রশিক্ষণ ট্রাক। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মোট আয় ৪০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩৪০ টাকা, মোট ব্যয় ১০ লক্ষ ৯২ হাজার ৭০৩ টাকা এবং নীট লাভ ২৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৩৭ টাকা।

সোনাপুর বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ম্যানেজার ওমর ফারুক মেহেদী বলেন, এক সময় ডিপোর কর্মীদের মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকলেও চেয়ারম্যান মহোদয় যোগদানের পর নিজস্ব আয় হতে প্রতি মাসের ১ তারিখে সবার বেতন ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে। প্রতি ৩ মাস অন্তর গ্র্যাচুইটি, সিপিএফ ও ছুটি নগদায়নের অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করা হচ্ছে। পূর্বের বকেয়া বেতন বাবদ অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তাদের স্ব-স্ব ব্যাংক হিসেবে পরিশোধ করা হয়। মেরামত ব্যয়ে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গাড়ির নম্বর অনুসারে মেরামত বাজেট প্রদান এবং যথাযথ মনিটরিং করা হচ্ছে। বর্ণিত সময়ের মধ্যে সোনাপুর ডিপোতে ১০টি গাড়ি ভারী মেরামত করে বিআরটিসির গাড়ি বহরে সংযুক্ত করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিআরটিসিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আভ্যন্তরীন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিআরটিসি তার জনকল্যাণকর কাজের জন্য জনসাধারণ, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১-২২ অর্থ বছরে এপিএ বাস্তবায়নে প্রথম স্থান অর্জন, মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রাপ্তি এবং সেবা সহজিকরণ ও বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক প্রদান সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে জাতীয় কমিটিতে উপস্থাপিত হয়েছে। উদ্যোগসমূহ গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণকর কাজ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে ৮৫% কাজ ই-ফাইলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে নতুন মাত্রা আনয়নের লক্ষ্যে অনলাইনে ভর্তি এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য সিমুলেটর সংযোজন করা হয়েছে; ডিপোতে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। রাজস্ব বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে বিআরটিসিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে।