আন্তর্জাতিক লিড নিউজ সর্বশেষ খবর হটনিউজ স্পেশাল

‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজন রক্ষায় ৮ দেশের জোট

‘পৃথিবীর ফুসফুস’খ্যাত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল আমাজনকে রক্ষা করতে দক্ষিণ আমেরিকান আটটি দেশ একটি জোট চালু করতে সম্মত হয়েছে।

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম ও ভেনিজুয়েলা আমাজন রক্ষার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। খবর- আল-জাজিরা

এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই রেইন ফরেস্টকে (ঘনবর্ষণ বনভূমি) ধ্বংসের এমন পর্যায়ে যাওয়া ঠেকাতে দেশগুলোর নেতারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, যে পর্যায় থেকে ‘ফেরার কোনো পথ থাকে না’। তবে তারা বন উজাড় বন্ধ করার জন্য একক লক্ষ্যে সম্মত হতে পারেনি। দেশগুলো বন উজাড় বন্ধে নিজ নিজ লক্ষ্য ও পদক্ষেপ অনুসরণ করবে।

আমাজন রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এই সম্মেলনকে আয়োজক দেশ ব্রাজিল একটি ‘নতুন ও উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা বণ্টন’ হিসেবে দেখছে। মঙ্গলবার আমাজন কো-অপারেশন ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (এসিটিও) ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আমাজন নদীর মুখে ব্রাজিলের শহর বেলেমে জোটের আটটি দেশ যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। টেকসই উন্নয়ন, বন উজাড় বন্ধ ও সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রায় ১০ হাজার শব্দের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

তবে ২০৩০ সালের মধ্যে অবৈধ বন উজাড় বন্ধ করার জন্য ব্রাজিলের প্রতিশ্রুতি এবং নতুন তেল অনুসন্ধান বন্ধ করার জন্য কলম্বিয়ার যে অঙ্গীকার, সেই অঙ্গীকার অন্যদেশগুলোর তরফ থেকে পাওয়া যায়নি। পরিবেশবাদী ও আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মূল দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেনি জোটের সব দেশ। ফলে দেশগুলো বন উজাড় বন্ধে নিজ নিজ লক্ষ্য ও পদক্ষেপ মোতাবেক কাজ করবে।

আমাজন সংরক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা প্রচেষ্টার একটি অংশ। ব্রাজিলের বেলেমে এই বিষয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে। গত ১৪ বছরের মধ্যে এই ধরনের প্রথম কোনো সমাবেশ এটি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ করতে একটি সাধারণ নীতিতে এই অঞ্চলকে একত্রিত করতে জোর দিয়েছিলেন। সম্মেলনে লুলা তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় ‘জলবায়ু সংকটের মারাত্মক অবনতির’ ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা এখন সময়ের দাবি রাখে।’

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বৈশ্বিক অর্থনীতির আমূল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে একটি ‘মার্শাল প্ল্যান’ শৈলীর কৌশলের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘(জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে) আমরা বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া কী করছি?’

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের আনুমানিক ১০ শতাংশ রয়েছে আমাজনে। ৫০ মিলিয়ন মানুষ ও কয়েক বিলিয়ন গাছের আবাসস্থল বিশাল আমাজন একটি অত্যাবশ্যক কার্বন সিঙ্ক, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমায়। আমাজন প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ সময়সীমায় আমাজনের বনাঞ্চলের প্রায় ১৩ হাজার ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার (৫ হাজার ১১০ বর্গ মাইল) এলাকার বন উজাড় হয়েছে, ২০০৬ সালের পর থেকে যা সর্বোচ্চ।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এখনই বন ধ্বংস ঠেকানো না গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে বনাঞ্চলটি হয়তো বিলীন হয়ে যাবে। আমাজন নদী অববাহিকায় নয়টি দেশের ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটারে বিস্তৃত এ বনাঞ্চল থেকে পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদিত হয়। এ কারণে একে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। এ ছাড়া সেখানে প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতির ৩৯ হাজার কোটি বৃক্ষ, ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও তিন হাজার প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণী রয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো বনে এত বেশি প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য নেই।

আমাজন অরণ্যের ৬০ শতাংশ পড়েছে ব্রাজিলে। যেখানে এখনও ১৯৬৫ সালের আইন প্রচলিত। এর অধীনে ভূমির মালিকেরা তাদের জমির কিছু অংশে বনায়ন করতে বাধ্য। আমাজনের ১৩ শতাংশ পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়। পৃথিবীর মোট রেইন ফরেস্টের অর্ধেকটাই এই অরণ্য নিজেই।

শুষ্ক মৌসুমে আমাজনে দাবনল স্বাভাবিক ঘটনা হলেও চলতি বছরে যেভাবে আমাজন পুড়ছে, তা পৃথিবীর জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। আমাজন বিনাশে বৈধ-অবৈধ খনি বাণিজ্যেরও বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। আমাজন সোশিও-এনভায়রনমেন্টালের তথ্য বলছে, নয়টি দেশে বিস্তৃত আমাজনের ২৪৫টি এলাকায় দুই হাজার ৩১২টি অবৈধ খনি রয়েছে।