সকল মেনু

মঠবাড়িয়ায় দুই শিশুকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে বাবা

 আসাদুজ্জামান ,মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি  ঃ

mathbaria-pic.

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গ্রামে প্রবাসী বাবার দায়ের করা মিথ্যা চুরির মামলায় আদালতে জামিন নিতে আসা মায়ের সাথে দেখা করায় দুই শিশু কন্যা স্কুলছাত্রীকে বেধড়ক মারপিট করে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে পাষন্ড বাবা। গত রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। আহত জুলেখা (১৪) ও সুমাইয়াকে (১০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফুলঝুড়ি গ্রামের মৃত কাঞ্চন আলী ফরাজীর ছেলে আবদুল রাজ্জাক ফরাজী (৫০) সাথে একই গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে মরিয়ম আক্তারের (৪৫) ২২ আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্রী মরিয়মের গার্মেসের জমানো টাকা দিয়ে ১৯ বছর আগে স-মিল শ্রমিক রাজ্জাক চাকুরি নিয়ে কুয়েত যান। এরপর সে কয়েক বছরের মধ্যে কোটিপটি বনে যায়। পাঁচ বছর আগে সে উপজেলার ছোটমাছুয়া গ্রামে রুমা আক্তার নামে এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করায় মরিয়ম আক্তার মুসলিম পারিবারিক আইনে ও যৌতুক নিরোধ আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ হুলিয়া জারি করে। সম্প্রতি দেশে এসে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন নিয়ে গত ১০ অক্টোবর মরিয়মের বিরুদ্ধে থানায় নয় লাখ ৮৯ হাজার টাকার চুরির মামলা করেন। ওই মামলায় রাজ্জাক তাঁর ছোট ভাই দুলাল ফরাজী ও শ্বশুর আবদুস সাত্তারসহ পাঁচ জনকে আসামি করেন। গত রোববার মরিয়মসহ আসামিরা মঠবাড়িয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক জামিন মঞ্জর করেন। আদালতে মরিয়মের সাথে তাঁর দুই মেয়ে ও শাশুড়ি

mathbaria-pic. (1)

মরিয়ম বিবি (৮০) (রাজ্জাকের মা) উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় দুই মেয়ে বাড়ি ফেরার পর রাজ্জাক তাদের বেধড়ক মারপিট করে ঘর থেকে বের করে দেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই শিশু জানায়, আদালত থেকে ফিরে ওরা ঘরে পড়তে বসছিল। তখন ওদের বাবা এসে স্কেল দিয়ে পেটাতে পেটাতে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর তারা এক কিলোমিটার দূরে নানা বাড়ি চলে যায়। গতকাল সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে জে এসসি পরীক্ষার্থী জুলেখা ও সুমাইয়ার লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে ওরা জানায়।

উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, মরিয়মের বিরুদ্ধে রাজ্জাকের করা চুরির মামলাটি মিথ্যা। আদালতে রাজ্জাকের বৃদ্ধ মা ও দুই মেয়ে মরিয়মের পক্ষে উপস্থিত হয়ে কথা বলে। এতে রাজ্জাক ক্ষিপ্ত হয়ে বৃদ্ধা মাসহ দুই মেয়েকে মারপিট করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়।

স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বলেন, আমি আদালত থেকে বাবার বাড়ি চলে যাই। মেয়েরা ওদের দাদির সাথে বাড়িতে গেলে মারধরের ঘটনা ঘটে।

রাজ্জাকের মা মরিয়ম বিবি (৮০) বলেন, ‘মোর পোলার (রাজ্জাক) দালান বাড়িতে ঠাঁই পাই নাই। ও আমারে জিগায় না। বউ (মরিয়ম বেগম) ডারে মিছা চুরির মামলা দেছে। মামলায় সোনা ও ১২ডা কম্বল চুরির কথা কইছে। যা ডাহা মিথ্যা। মুই শীতে একটা কম্বল চাইয়াও পাইনাই। আদালতে হাচা কথা কইছিবইলা ও মোরে ঘরডা খেদাইয়া দেছে।

আবদুল রাজ্জাক ফরাজীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন না ধরায় কথা বলা যায়নি।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও মরিয়মের আইনজীবী দিলীপ কুমার পাইক জানান, আবদুল রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আদালতের সার্চ ওয়ারেন্ট থাকার পরেও সে কিভাবে থানায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে চুরির মামলা করেন।

মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আবু যাহিদ জানান, এঘটনায় কেই অভিযোগ করেনি। লিখিত াভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top